পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন ছিল সদ্দামের। প্রবাসে পরিশ্রম করে ঘরে টাকা পাঠাবেন, গড়বেন সুন্দর ভবিষ্যৎ। কিন্তু সেই স্বপ্নই আজ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে তার। দুই পা অবশ হয়ে এখন তিনি হুইলচেয়ারে বন্দি। পরিবারসহ মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
সাদ্দামের বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার কাশোঁপাড়া ইউনিয়নের কুলিহার খাঁ পাড়া গ্রামে। বাবা মো. ছাত্তার খান একজন অসুস্থ ও অসচ্ছল মানুষ। পরিবারের দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে এখন তাদের দিন কাটে দুঃখ-কষ্টে।
সরেজমিন দেখা গেছে, হুইলচেয়ারই এখন সাদ্দামের একমাত্র ভরসা। চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললেও কথা বলতে পারেন তিনি। তবে শারীরিক যন্ত্রণা তাকে প্রতি মুহূর্তে কাবু করে রাখে। একমাত্র বাড়িটিই তার সম্বল। টাকার অভাবে সুচিকিৎসা করতে না পারায় দিন দিন তার অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
সাদ্দাম হোসেন জানান, ২০১৩ সালে পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতির আশায় সৌদি আরব যান তিনি। সেখানে এক সৌদি নাগরিকের উটের খামারে কাজ পেতেন। একদিন কফিলের মামাতো ভাই খামারে এসে মজা করতে গিয়ে তার গলায় বন্দুক ঠেকিয়ে বলে, গুলি করব? সাদ্দাম ভেবেছিলেন সেটি খেলনা বন্দুক, তাই মজা করে বলেছিলেন, করো। মুহূর্তের মধ্যেই গুলিটি তার গলায় বিদ্ধ হয়, লুটিয়ে পড়েন মরুভূমির বালুতে।
এরপর কফিলের সহায়তায় সৌদি আরবেই চলে তার ছয় মাসের চিকিৎসা। প্রাণে বেঁচে গেলেও কোমর থেকে নিচের অংশ প্যারালাইজড হয়ে যায়। দেশে ফিরে স্থায়ীভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। গত প্রায় ১২ বছর ধরে হুইলচেয়ারে বসেই দিন কাটছে তার।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাদ্দাম বলেন, প্রবাসে পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাতাম, এখন নিজের চিকিৎসার জন্যই কেউ পাশে নেই। প্রতি মাসে চিকিৎসার খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। সরকার থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে পাই মাত্র ৮৫০ টাকা, যা দিয়ে কিছুই হয় না। বাবার পক্ষে চিকিৎসা চালানো সম্ভব নয়। যদি সরকার বা কোনো সহৃদয় মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন, হয়তো আবারও চিকিৎসা নিতে পারতাম।
সাদ্দামের বাবা মো. ছাত্তার খান বলেন, ছেলের শখ ছিল বিদেশে কাজ করার। কিন্তু সেই দুর্ঘটনা আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে। আমি নিজেও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ছেলের চিকিৎসা আর সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। যদি প্রশাসন বা সহৃদয় কেউ এগিয়ে আসে, আমাদের বড় উপকার হবে।
প্রতিবেশী বুলবুল ও সোহাগ জানান, সাদ্দাম খুব ভদ্র ও পরিশ্রমী ছেলে ছিল। পরিবারের ভবিষ্যতের জন্য বিদেশে গিয়েছিল। কিন্তু দুর্ঘটনাটি শুধু তার জীবন নয়, পুরো পরিবারকে কষ্টের অন্ধকারে ডুবিয়ে দিয়েছে। এখন একটু সহায়তাই হয়তো ফিরিয়ে দিতে পারে একজন প্রবাসীর জীবনের আলো।
এ বিষয়ে মান্দা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সোহেল রানা জানান, আমাদের বাৎসরিক ফান্ড থেকে কিছু সহায়তা দেওয়া হয়। যদি সাদ্দাম ইউএনও বরাবর আবেদন করেন, যাচাই-বাছাই শেষে তাকে সাহায্যের আওতায় আনা সম্ভব।
মন্তব্য করুন