অবশেষে আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবির মুখে বাড়ি ভাড়া ভাতা পুনর্নির্ধারণ করেছে সরকার। শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া ১৫ শতাংশ বাড়বে, যা বাস্তবায়িত হবে দুই ধাপে। সরকার ও সংশ্লিষ্টদের এ সিদ্ধান্তকে আন্দোলনকারীরা সাধুবাদ জানিয়েছেন এবং এ দফায় তারা আন্দোলনের ইতি টেনে কর্মস্থলে ফিরে গেছেন। এটা নিঃসন্দেহে স্বস্তিদায়ক ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ।
টানা ১০ দিন ধরে চলছিল বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এ আন্দোলন। একপর্যায়ে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণঅনশন শুরু করেন। গত মঙ্গলবার দুপুরের দিকে সরকার দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায় অনেককে। শিক্ষক নেতারা জানান, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এখন থেকে শনিবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হবে। বার্ষিক পরীক্ষার আগপর্যন্ত শনিবার ক্লাসসহ সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম চলবে।
চলতি মাসের ১২ তারিখ থেকে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ও উৎসব ভাতা বাড়ানোর দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনের মুখে গত রোববার বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের ৫ শতাংশ (সর্বনিম্ন ২০০০) হারে নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলে শিক্ষকরা এটিকে ‘প্রহসনের প্রজ্ঞাপন’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেন। রাজপথে ‘ভুখা মিছিল’ করেন তারা। শুরু হয় আমরণ অনশন। তারা জানান, দাবি মানা না হলে আন্দোলন থামবে না। শিক্ষকদের অনড় অবস্থানে অচলাবস্থার মুখে পড়ে দেশের বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থা। এর আগে আন্দোলনটি বিভিন্ন মহলের সমর্থন ও দৃষ্টি কাড়তে সমর্থ হয়। বিশেষ করে তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর কয়েক দিন আগে পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। তাদের প্রতি সংহতি ও পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি জানায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। তবে সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আপাতত চিকিৎসা ও উৎসব ভাতা অপরিবর্তিত থাকবে। বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা মাসে ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা ও মূল বেতনের ৫০ শতাংশ উৎসব ভাতা পাচ্ছেন। এদিকে নতুন ঘোষিত বর্ধিত বাড়ি ভাড়া ভাতার প্রথম ধাপ আগামী মাসে (নভেম্বর) সাড়ে ৭ শতাংশ বা ন্যূনতম ২ হাজার টাকা পাবেন তারা। আর পরবর্তী ধাপে, আগামী বছরের জুলাই মাস থেকে এ হার বেড়ে মূল বেতনের ১৫ শতাংশ বা ন্যূনতম ৪ হাজার টাকা হবে।
আমরা মনে করি, শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবির মুখে সরকারের এ সিদ্ধান্ত নানা দিক দিয়ে সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ। তাদের বেতনকাঠামোয় বৈষম্য, অবজ্ঞার বিষয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে তারা অতীতে একাধিকবার দাবিদাওয়া নিয়ে মাঠে নেমেছে। সফলতা আসেনি। সেদিক দিয়ে বিবেচনা করলে তাদের তিন দাবির একটি সফল হয়েছে, যা ন্যায্য। ভবিষ্যতে হয়তো বাকিগুলোও আলোর মুখ দেখবে। অন্যদিকে, সামনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে হলে যে কোনো অস্থিরতা দূর করা প্রয়োজন। সেদিক দিয়ে ভাবলেও সরকারের এ সিদ্ধান্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সরকারের সিদ্ধান্তের পর আন্দোলনকারীরা স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজ নিজ কর্মে ফিরে যাওয়ার যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন, তাতে বেসরকারি পর্যায়ে শিক্ষায় যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল, তা যে দ্রুতই কাটবে—এ প্রত্যাশা করা যায়। পাশাপাশি আমাদের একটি কথা স্মরণে রাখা জরুরি যে, শিক্ষকের সম্মান ও তার মর্যাদা রক্ষা যেমন গুরুত্বপূর্ণ; একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ তার আর্থিক সচ্ছলতা। এটি নিশ্চিত করতে না পারলে তার থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া সম্ভব নয়।
মন্তব্য করুন