

আমার মতো অনেক প্রাক্তন সেনাসদস্যের জন্যই দিনটা (২২ অক্টোবর, বুধবার) হয়তো খুব কষ্টের ছিল। তবুও বুকে অনেক কষ্ট চেপে এ লেখা শুরু করছি। চেয়ে চেয়ে দেখলাম গুমসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সেনা হেফাজতে থাকা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নামে পরিচিত এ আদালত এসব কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
কয়েক দিন আগে বিশেষ আদেশের মাধ্যমে সেনানিবাসের একটি ভবনকে বিশেষ কারাগার হিসেবে ঘোষণা করেছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। বিবিসি সূত্রে জানা যায় যে, অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. তানভীর হোসেন বলেছেন, আদালত থেকে তাদের সেনানিবাসের সাবজেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তারা থাকবেন।
লেখার শুরুতেই দৃঢ়তার সঙ্গে বলা প্রয়োজন যে, আমাদের চাকরিকালে ‘আয়নাঘর’ নামের কোনো বিতর্কিত ভবন বা বিশেষ স্থাপনার কথা আমরা শুনতেও পাইনি। তাই একইভাবে কষ্ট পেয়েছিলাম যখন জেনেছি যে, আমাদের সময়কার সুদক্ষ প্রশিক্ষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম আজমি, অকুতোভয় যোদ্ধা লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান (বীরপ্রতীক), প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ক্যাপ্টেন মারুফ জামানসহ অসংখ্য সেনা অফিসার ও সাধারণ মানুষকে গুম করে রাখা হয়েছে আয়নাঘর নামের এক রহস্যপুরীতে। আর অভিযোগমতে, সেসব রহস্যপুরী পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন কতিপয় সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা, যারা আমাদের সুপরিচিত, অনুজতম, ছাত্র এবং শুভাকাঙ্ক্ষী। তবে আমরা তাদের যেভাবে চিনতাম, তার সঙ্গে উত্থাপিত অভিযোগগুলো মেলানো বেশ কষ্টকর। আবার এটা ভেবেও কষ্ট লাগে যে, সেনা কর্মকর্তাদের আজ বিচারের সম্মুখীন হতে হলেও এ সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা হেফাজতেই ছিলেন বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা, যাদের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ রয়েছে। অথচ সেই পুলিশ কর্মকর্তারা আজ নিরুদ্দেশ আর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো ১৫ সামরিক কর্মকর্তা।
মেজর থেকে শুরু করে মেজর জেনারেল পর্যন্ত পদবির ১৫ জন অফিসার চাকরিরত অবস্থায় মূলত গুমসংক্রান্ত অভিযোগের ভিত্তিতে কারা হেফাজতে গেলেন। এর আগে একজন মেজর জেনারেল চাকরিস্থল থেকে উধাও হয়েছেন, যা রীতিমতো লজ্জাজনক। যুদ্ধক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের দায়ে সেনা কর্মকর্তাদের শাস্তি নতুন কিছু নয়। তবে পৃথিবীর ইতিহাসে শান্তিকালে সেনাবাহিনীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট নয়, এমন কোনো অভিযোগে তথা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নিজ দেশের মানুষ এমনকি নিজ বাহিনীর কর্মকর্তা বা প্রাক্তন সদস্যদের গুম করা যেমন অবিশ্বাস্য, তেমনি গুম করার অভিযোগে এতজন সেনা অফিসারের এভাবে হেফাজতে থাকাও একটি বিরল কিংবা অভূতপূর্ব ঘটনা, যা একাধারে অনাকাঙ্ক্ষিত, লজ্জাজনক ও জটিল।
বিষয়টি কেন অনাকাঙ্ক্ষিত ও লজ্জাজনক তা বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই। তবে জটিল এ কারণে যে, হেফাজতে বা সামরিক কারাগারে নিয়ে আসা সেনা অফিসারদের একজনও যদি নির্দোষ প্রমাণিত হন, তবে তার মর্যাদা বা অবস্থান কী হবে? কারাগারে থাকা কোনো অফিসার যদি নির্দোষ প্রমাণিত হন, তবে তিনি কি আবার ইউনিফর্ম পরার সুযোগ পাবেন? ওএসডি প্রথা বেসামরিক প্রশাসনে অতি পরিচিত হলেও সেনা প্রশাসনে এমন কোনো প্রথা নেই। সেনা আইন অনুযায়ী, সামরিক আদালতে বিচার হলে অভিযুক্ত সেনাসদস্য অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার বা রায় ঘোষণার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত সাধারণত তার ইউনিফর্ম পরার অধিকার রাখেন। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ক্ষেত্রে তদন্ত শেষে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলে তিনি স্বপদে থাকার অধিকার হারান।
অন্যদিকে কোনো সেনাসদস্য কোনো অপরাধে জড়িত হলে, প্রচলিত সেনা আইন অনুসরণ করে সেনাবাহিনী কর্তৃপক্ষ একটি সামরিক আদালত গঠন করে এবং সেই আদালতের অধীনে বিচার করার জন্য সেনাসদস্যকে বাহিনীর কাছে হস্তান্তরের জন্য বেসামরিক আদালত কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাতে পারে। সাধারণত বেসামরিক আদালত সেই অনুরোধের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকেন। সেনা আইনেও অপরাধ প্রমাণিত হলে অপরাধীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারে কারাদণ্ড ভোগের জন্য পাঠানো, এমনকি মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে এবার দেখা দিয়েছে নতুন জটিলতা। সেনা আইন প্রণয়নের সময় সম্ভবত কারও ধারণাই ছিল না যে, একজন সেনা কর্মকর্তা বা সেনাসদস্য নিজ বাহিনীর কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের কিংবা সাধারণ মানুষকে শুধু রাজনৈতিক কারণে কিংবা উপরস্থদের সন্তুষ্টির মাধ্যমে নিজস্ব স্বার্থ আদায়ের অভিপ্রায়ে গুম করতে পারে। ফলে গুম কী জাতীয় অপরাধ এবং তার শাস্তিইবা কী হবে, এমন কোনো বিধান সেনা আইনের কোনো বই-পুস্তকে লেখা নেই। তাই সেনা আইন অনুযায়ী, কোনো সামরিক আদালত কর্তৃক গুম জাতীয় ঘটনার বিচার করা আপাতদৃষ্টিতে সম্ভব নয়। এমন জটিল পরিস্থিতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কখনোই মোকাবিলা করেনি। তাই সব জটিলতার অবসান ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু সমাধানের দিকে পরিস্থিতি এগিয়ে যাবে এবং শতভাগ ন্যায়বিচারের মাধ্যমে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বেসামরিক প্রশাসনের সব বর্তমান ও সাবেক সদস্য কিংবা রাজনৈতিক অপশক্তি প্রয়োগ করা সব অপরাধী শাস্তি পাবে এবং প্রতিটি নিরপরাধ ব্যক্তি যোগ্য সম্মান পাবেন, এটাই এই মুহূর্তে জাতির প্রত্যাশা।
বিভিন্ন কারণে নানা পর্যায়ের ব্যক্তির মন-মানসিকতায় যখন অশান্তির আগুন, ঠিক তখনই সত্যি সত্যি আগুন জ্বলতে দেখা যায় দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক খাতে নিয়োজিত কলকারখানায় ও বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে। ১৪ অক্টোবর মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে একটি তৈরি পোশাক কারখানা ও রাসায়নিক পদার্থ মজুতের গুদামে ভয়াবহ আগুনের কারণে নয়জন পুরুষ ও সাতজন নারীর শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে। হতভাগ্য এসব শ্রমিক শিয়ালবাড়ি আবাসিক এলাকায় আনোয়ার ফ্যাশন নামক পোশাক কারখানা এবং এই কারখানাসংলগ্ন শাহ আলম কেমিক্যালে কর্মরত ছিলেন। এ ঘটনার এক দিন পর অর্থাৎ ১৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ১০ মিনিটে আগুন লাগে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরির কারখানা অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইলের আটতলা ভবনে। এ ভবনেও দাহ্য পদার্থ থাকায় থেমে থেমে বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে। এ ছাড়া তীব্র বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় একটু পরপর। এ অগ্নিকাণ্ডের পরদিন (শুক্রবার) বিকেলে মিরপুরের অদূরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়েও আগুন ধরিয়ে দেন জুলাই সনদ স্বাক্ষরের বিপক্ষে থাকা ‘জুলাই যোদ্ধা’ ব্যানারের কর্মীরা।
১৬ তারিখেই আগুনে পুড়ে নিঃশেষ সবার মতো ধ্বংস হলো কয়েক লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন। গত ২১ বছরের মধ্যে এত খারাপ ফলাফল আর কখনো হয়নি। সারা দেশ থেকে এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৪৩ শতাংশ অকৃতকার্য হয়। তাদের একটা বড় অংশ মেয়ে হওয়ায় সমাজের প্রচলিত নিয়মে নির্ঘাত পড়ালেখা বন্ধ এবং সংসারজীবন শুরুই হবে তাদের একমাত্র নিয়তি। অকৃতকার্য ছেলেরা এসএসসি পাস। দেশের চাকরি বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা এমন শিক্ষিত নয় যে, এসএসসি সনদ দেখিয়ে তারা কোনো ভালো চাকরিতে যোগ দিতে পারবে। আবার তারা অশিক্ষিতও নয় যে সাধারণ শ্রমিক হবে। কেতাদুরস্ত শার্ট-প্যান্ট ছেড়ে তারা সাধারণ পোশাকে ফসলের মাঠে কিংবা জাল নিয়ে জলাশয়ে নেমে পড়বে এমনটাও প্রত্যাশা করা কঠিন। কামার, কুমার কিংবা ধোপা-নাপিতের মতো পেশায়ও তাদের যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাহলে কী হবে তাদের ভবিষ্যৎ?
এমন ফলাফল বিপর্যয়ের জন্য একে অন্যকে যতই দোষ দিই না কেন, এর মাধ্যমে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যে কতটা নাজুক; তা আবারও প্রমাণিত হলো। দেশের শিক্ষার মান যখন এমন তখন ঢাকায় লাগাতার অবস্থান করে দাবি আদায়ে সোচ্চার হয়েছিলেন হাজারো এমপিওভুক্ত শিক্ষক। তাদের প্রতিষ্ঠানের শতকরা কতজন বিগত সরকারি পাবলিক পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছেন তার হিসাবটাও চাওয়া প্রয়োজন। দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো পরীক্ষার্থী পাস না করার রেকর্ড কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।
১৮ তারিখ শনিবার ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগুন ছিল স্মরণকালের ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ, এ নিয়ে তর্ক রয়েছে। এর পেছনে কেউ তুলে ধরছেন দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য এস আলমের ৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের তত্ত্ব। আবার কেউ খুঁজছেন বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি বাতিল এবং আসন্ন নির্বাচন বানচালের যোগসূত্র। তবে বিনা তর্কে মানতে হবে যে, দেশের অন্যতম স্পর্শকাতর স্থাপনা বলে বিবেচিত এবং সব গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ নজরে থাকা এ বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বিধানে অনেক কিছু করণীয় আছে। বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে যে দাহ্য রাসায়নিক দ্রব্যভর্তি কার্গো বা ড্রাম কতদিন কোন অবস্থায় রাখা যাবে, এ নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম এ-খাতের এক ব্যবসায়ীকে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি যা বললেন, তার সারমর্ম হলো—এটা নির্ভর করে আপনার ফাইল বা আমদানিসংক্রান্ত নথিপত্র কয়টি টেবিলে স্বাক্ষরের পর ছাড় করানো যাবে তার ওপর। বাস্তবে টেবিলে বসা কর্তাব্যক্তিদের প্রবণতা হলো, নানা অজুহাতে দেরি করিয়ে বৃহস্পতিবারে পৌঁছানো। কারণ, এরপর শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় আমদানিকারকরা যে কোনো কিছুর বিনিময়ে বৃহস্পতিবার পণ্য ছাড়িয়ে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। আর তখনই স্বরূপে বেরিয়ে আসে ছাগল-কাণ্ডের জন্য কুখ্যাত কাস্টমসের মতিউর রহমানের বংশধররা। দেশের স্বার্থে প্রয়োজনের লোকজন বাড়িয়ে এবং রোটেশন অনুসারে সাপ্তাহিক ছুটি নিশ্চিত করে যদি শুক্র ও শনিবারও অন্তত দাহ্য ও রাসায়নিক পদার্থ কাস্টমসের গুদাম থেকে ছাড় করানোর সুযোগ থাকত, তবে হয়তো এমনটা ঘটত না। দেশের বিভিন্ন বাহিনী এবং বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা কিংবা চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকরাও রোটেশন অনুসরণ করে শুক্র ও শনিবার দায়িত্ব পালন করতে পারেন। একইভাবে কাস্টমসের কর্মকর্তারা দেশের স্বার্থে অবশ্যই এটা করবেন বলে প্রত্যাশিত। প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিমানবন্দরের ভেতরে অবস্থান করা অগ্নিনির্বাপক দলের সক্ষমতা এমন ভয়াবহ আগুন নেভানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। আবার আশপাশের দমকল কর্মীরা ছুটে এলেও, তাদের আগুনে লাগা সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশের অনুমতি বা সুযোগ পেতেও বিলম্ব ঘটে। সব অনুমতি লাভের পরও দীর্ঘ সময় লাগে আগুন আয়ত্তে আনতে এবং আগুনে ধোঁয়া পুরোপুরি বন্ধ করতে।
এমন অগ্নিকাণ্ড দেশের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও মানসহ নানা বিষয় নিয়ে বহু প্রশ্ন সামনে এনেছে। এমন আগুন নেভানোর জন্য ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও দেশীয় বাণিজ্যের প্রসার ঘটানোর ক্ষেত্রে বহু অর্জন ম্লান হয়ে পড়ে। দেশের তৈরি পোশাক শিল্প ট্রাম্পের শুল্কনীতিসহ নানা কারণে এমনিতেই জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে দুটি তৈরি পোশাক শিল্প-কারখানায় আগুন এবং বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন এবং এ আগুনে তৈরি পোশাকসংশ্লিষ্ট হাজার কোটি টাকার পণ্য পুড়ে যাওয়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত তথা তৈরি পোশাক শিল্প আবারও ইমেজ সংকটে পড়ল। অন্যদিকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে আমাদের দেশের সৈন্য সংখ্যা প্রবাহ হ্রাস পাওয়ার কারণে কমবে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ।
প্রিয় পাঠক, ঢাকায় যখন বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ দাউ দাউ করে জ্বলছিল, আমি তখন লালন মেলার বিশাল মঞ্চের সামনে। এ মঞ্চের সামনেও ধূপ জ্বলছিল। ধূপের ধোঁয়ায় ছড়িয়ে পড়া সুঘ্রাণ নিয়ে আর বাউলদের দরাজ কণ্ঠের গান শুনে হোটেলে ফেরার পথে কুষ্টিয়ার হাউজিং এলাকার একটি পোড়াবাড়ি দেখাল অটোরিকশাচালক। এ বাড়িটি ছিল আওয়ামী লীগের পালিয়ে যাওয়া নেতা মাহাবুবউল আলম হানিফের। বিক্ষুব্ধ জনতা বাড়িটি শুধু পুড়িয়েই ক্ষান্ত হয়নি, বাড়ির দরজা-জানালা এমনকি জানালার গ্রিলও খুলে নিয়ে গেছে। এ বাড়িটির ঠিক বিপরীতে শান্ত, সৌম্য আরেকটি বাড়ি দেখিয়ে অটোচালক বললেন, ‘এখানে থাকেন আমাদের ফরিদা পারভীন’।
মনে মনে ভাবছিলাম, এভাবেই কর্মদোষে কারও বাড়ি পুড়ে আর কর্মগুণে কেউ কেউ আবার ‘আমাদের’ হয়ে যান। অটোচালকের কথা শুনে আরেক মরমি সাধক হাছন রাজার একটি গানের কথা মনে পড়ে গেল—
‘আগুন লাগাইয়া দিলো কনে?’
আসলেই কি কোনোদিন জানা যাবে, দেশের প্রশাসন, প্রতিরক্ষা বাহিনী, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, স্পর্শকাতর স্থাপনা, শিক্ষাঙ্গন—এক কথায় প্রতিটি ক্ষেত্রে অশান্তির আগুন কিংবা বাস্তবিক আগুন কে লাগায়?
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত মেজর, গবেষক,
বিশ্লেষক ও কলামিস্ট
ইমেইল: [email protected]
মন্তব্য করুন