

বাংলাদেশের ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে—তরুণদের শক্তিই হলো পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন কিংবা সাম্প্রতিক ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান—প্রতিটি ধাপেই তারুণ্য জাতিকে দিয়েছে নতুন দিকনির্দেশনা।
গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস: ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের দমননীতির বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা রাজপথে জেগে ওঠে। পুলিশের গুলিতে শহীদ হন আসাদ, মতিউর, রুস্তমসহ অসংখ্য তরুণ। এই আন্দোলন কেবল আইয়ুব শাসনের পতনের পথ তৈরি করেনি; বরং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বীজ বপন করেছিল। ঠিক তেমনি ১৯৯০ সালের গণআন্দোলনে স্বৈরশাসক এরশাদের পতন ঘটে। সেই সময়ও নেতৃত্বে ছিল ছাত্র-জনতা এবং সংগ্রামী রাজনীতিবিদরা। বেগম খালেদা জিয়া আপসহীনভাবে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে প্রমাণ করেছিলেন—গণতন্ত্রের বিকল্প নেই।
৫ আগস্ট ২০২৪: বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি স্মরণীয় দিন হলো ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। দীর্ঘদিনের দমননীতি, দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন। এদিনও আবার প্রমাণিত হলো—যখন জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়, তখন কোনো স্বৈরাচার টিকে থাকতে পারে না। তরুণদের রক্ত, ত্যাগ ও অবদানের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার দিকে অগ্রসর হয়।
বেগম খালেদা জিয়ার অবদান: স্বাধীনতার পর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে এবং পরবর্তী সময়ে গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন এক অবিসংবাদিত নেতা। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নির্বাচিত নারী প্রধানমন্ত্রী। তার শাসনামলে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, অর্থনীতি স্থিতিশীলতা পায় এবং সামাজিক খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটে। তিনি প্রমাণ করেছিলেন—জনগণের শক্তি দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায়।
তারেক রহমান তারুণ্যের স্বপ্নদ্রষ্টা: আজকের দিনে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন প্রজন্মের সবচেয়ে আলোচিত ও আশার প্রতীক তারেক রহমান। তার ভিশন ২০৩০ কেবল একটি রাজনৈতিক প্রস্তাব নয়; বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ উন্নয়ন রূপরেখা। যেখানে রয়েছে—সুশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও তরুণ উদ্যোক্তা গড়ে তোলা, বিকেন্দ্রীকরণ ও গ্রামীণ উন্নয়ন, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক পরিসরে সম্মানজনক বাংলাদেশ।
বর্তমান বাস্তবতা: বাংলাদেশ আজ গভীর সংকট অতিক্রম করছে। মুদ্রাস্ফীতি ৯ শতাংশ ছাড়িয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অর্ধেকে নেমেছে। শিক্ষিত তরুণদের প্রায় অর্ধেক বেকার। দুর্নীতি, মাদক, নারী-শিশু নির্যাতন ও দমননীতির কারণে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। ২০২৪ সালের আন্দোলন তাই ছিল এক অনিবার্য ঐতিহাসিক পরিণতি, যা তরুণরা ঘটিয়ে দেখিয়েছে।
আগামীর বাংলাদেশ তারুণ্যের ভাবনায়: তরুণদের চোখে আগামীর বাংলাদেশ হবে— গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ: যেখানে ভোটাধিকার অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে। সুশাসনের বাংলাদেশ: যেখানে দুর্নীতি থাকবে না, প্রশাসন হবে জবাবদিহিমূলক। অর্থনৈতিক বাংলাদেশ: যেখানে কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং বৈষম্য কমবে। নিরাপদ বাংলাদেশ: নারী-শিশুর জন্য নিরাপদ ও মানবিক পরিবেশ থাকবে। আন্তর্জাতিকভাবে মর্যাদাশীল বাংলাদেশ: কূটনীতিতে ভারসাম্য ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান থাকবে।
১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৯০-এর গণআন্দোলন এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান—এই ধারাবাহিকতা আমাদের শেখায়, জনগণ যখন ঐক্যবদ্ধ হয় তখন কোনো স্বৈরাচারই টিকতে পারে না।
বেগম খালেদা জিয়ার সংগ্রামী নেতৃত্ব এবং তারেক রহমানের আধুনিক রাজনৈতিক দর্শন আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছে। আজ তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ মানেই—একটি গণতান্ত্রিক, নিরাপদ, সুশাসিত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশ যেখানে আর কোনো স্বৈরশাসনের জায়গা থাকবে না, থাকবে কেবল জনগণের শাসন এবং জনবান্ধব নেতৃত্ব।
লেখক : লেকচারার, লন্ডন এসেক্স বিজনেস স্কুল এবং সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব ইউকে
মন্তব্য করুন