

‘তুমি কিছু খরচ পাতি পাঠায় দিও, ভালো মার্কস দিয়ে দিবানে। তুমি আবার পরীক্ষা দিতে গেলে খরচ হবে না! সেই খরচটা আমারে দিয়ে দেও।’ এভাবেই মোবাইল ফোনে এক শিক্ষার্থীকে পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য টাকা দাবি করেন শিক্ষক সামসু সালেহীন খান রতন।
তিনি জামালপুর সরিষাবাড়ি মাহমুদা সালাম মহিলা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। ঘটনাটি ২০২২ সালের এপ্রিলের ২৩ তারিখে ঘটে। সম্প্রতি ওই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোনে কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড আসে এই প্রতিবেদকের হাতে।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ঘটনাটি ২০২২ সালের। স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি। বিজনেস কমিউনিকেশন পরীক্ষায় ৯ নম্বর প্রশ্নের সিভিতে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়েছিলেন ওই শিক্ষার্থী। এরপর হঠাৎ একজন কল দিয়ে নিজেকে শিক্ষক দাবি করে পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য টাকা দাবি করেন।
ভুক্তভোগী মো. রেদোয়ান হোসেন (ছদ্মনাম) যশোরের একটি সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, প্রথমে আমি বিশ্বাস করিনি। পরে যখন আমার খাতার খুঁটিনাটি বিষয়ে বলতে শুরু করল তখন আমি বিশ্বাস করি। একপর্যায়ে ওই শিক্ষক আমাকে বলেন, আমি ফেল করেছি। তবে কিছু খরচ দিলে তিনি আমাকে পাস করিয়ে দেবেন। বাধ্য হয়ে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে আমি ১ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিই।
সামসু সালেহীন খান রতন ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে ৬ মিনিট ২২ সেকেন্ড কথা বলেন।
ঘটনার সত্যতা জানতে, শিক্ষার্থীর দেওয়া সেই নম্বরে কল দিয়ে বিষয়টি বলার পর প্রথমবার ভুল নম্বর বলে কল কেটে দেন সামসু সালেহীন খান রতন। পরে সেই নম্বরের সূত্র ধরে তার ফেসবুক আইডির সন্ধান মেলে। আইডির নাম সামসু সালেহীন রতন (Samsu Salehin Raton)। মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর ভেরিফাই করেও নামটি মিলে যায়।
দ্বিতীয় দফায় যোগাযোগ করা হলে সামসু সালেহীন রতন বলেন, সামান্য বিষয় ভুল হয়ে গেছে। এবারের মতো ক্ষমা করে দেন।
এ বিষয়ে জামালপুর সরিষাবাড়ি মাহমুদা সালাম মহিলা কলেজের অধ্যাক্ষ মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সামসু সালেহীন খান রতন নামে ব্যবস্থাপনা বিভাগে একজন শিক্ষক রয়েছেন। তিনি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে আছেন। তবে অভিযোগের বিষয়টি তিনি জানেন না।
তিনি আরও বলেন, পরীক্ষার খাতা দেখে কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ নেই। যদি কোনো শিক্ষক এমন কাজ করে থাকেন তাহলে সে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ করবেন। শিক্ষক সামসু সালেহীন খান রতনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
মন্তব্য করুন