কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:১৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চারদিক

নিরাপদ রাষ্ট্র

নিরাপদ রাষ্ট্র

চব্বিশের জুলাই আন্দোলনের পর অন্তর্বর্তী সরকার যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়, তখন জনমনে একটি বড় প্রত্যাশা জন্মেছিল। এবার বুঝি দীর্ঘদিনের অস্থিরতা, সহিংসতা ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চক্র ভেঙে দেশটি অন্তত ন্যূনতম নিরাপত্তার দিকে এগোবে। শুরুতে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপও দেখে দেশের মানুষ। প্রশাসনিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি এবং দৃশ্যমান কয়েকটি সিদ্ধান্ত সেই প্রত্যাশাকে আরও জোরালো করে। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে আশানুরূপ উন্নত হয়নি, সে বাস্তবতা আজ আর অস্বীকার করার উপায় নেই। প্রায় ১৭ মাস পার হয়ে গেলেও রাষ্ট্রকে সহিংসতা থেকে নিরাপদ রাখা সম্ভব হয়নি।

সম্প্রতি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনা ব্যর্থতার আরেকটি সংযোজন। এ ঘটনা হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনো বিচ্ছিন্ন সহিংসতা নয়, বরং গত বছরের শুরু থেকেই দেশে যে সন্ত্রাসবাদ ও রাজনৈতিক সহিংসতার ধারাবাহিকতা চলছে, তারই অংশ। উদ্বেগের বিষয় হলো, দীর্ঘ সময়জুড়ে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো সুসংহত, দৃশ্যমান ও ফলপ্রসূ কৌশল সাধারণ মানুষের চোখে পড়েনি। ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’সহ নানা অভিযানের ঘোষণা শোনা গেলেও, বাস্তবে সেসবের ফল প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।

চলতি বছরের শুরু থেকে সারা দেশে সন্ত্রাসীরা নতুন করে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার শুরু করেছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে একের পর এক সহিংস ঘটনা প্রমাণ করে দেয় যে, স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কতটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। সরোয়ার বাবলা হত্যাকাণ্ড ছিল এ ধারাবাহিকতার সবচেয়ে ভয়াবহ উদাহরণ। সে ঘটনায় সন্ত্রাসী সরোয়ার বাবলার পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাও গুলির আঘাতে রক্তাক্ত হন। এ ঘটনার মূল আসামি এখনো অধরা।

এ ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় এখন আর কোনো একটি দল বা গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং তা পুরো রাজনৈতিক পরিসরকে গ্রাস করছে। এর আগেও রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে, যা প্রমাণ করে যে অস্ত্রের ঝনঝনানি এখন গ্রাম থেকে শহর সবখানেই শোনা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জীবনে নিরাপত্তাহীনতা এখন নিত্যসঙ্গী। রাজনৈতিক বিরোধ, ব্যক্তিগত বিরোধ, সামাজিক বিরোধ ছাড়াও কারও ঈর্ষা কিংবা হিংসা থেকেও প্রাণঘাতী সংঘর্ষ সৃষ্টি হচ্ছে দেশে।

প্রশ্ন হলো—এ আতঙ্কের দায় কার? রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্বই হলো নাগরিকের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে সরকারের সব উন্নয়ন, সংস্কার বা রাজনৈতিক সাফল্যই অর্থহীন হয়ে পড়ে।

বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সমস্যাটি শুধু অভিযান বা গ্রেপ্তারের ঘাটতিতে সীমাবদ্ধ নয়; বরং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত না হওয়া, গোয়েন্দা তৎপরতার দুর্বলতা, অপরাধের দ্রুত বিচার না হওয়া এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাব—এ সবকিছু মিলেই সন্ত্রাসীদের সাহস বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংকটও বড় ভূমিকা রাখছে। রাজনৈতিক দলগুলো যখন নিজেদের স্বার্থে অপরাধী চক্রকে আশ্রয় দেয় বা নীরব সমর্থন জানায়, তখন রাষ্ট্রযন্ত্র একা কিছু করতে পারে না। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব এ জায়গায় আরও কঠোর অবস্থান নেওয়া। দলমত নির্বিশেষে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা দেখানো।

একটি নিরাপদ রাষ্ট্র গড়তে হলে শুধু তাৎক্ষণিক অভিযান নয়, প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সংস্কার। পুলিশ ও প্রশাসনের জবাবদিহি নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা, দ্রত বিচার ট্রাইব্যুনাল সক্রিয় করা এবং ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই পারে জনমনে আস্থা ফেরাতে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। সহিংসতা ও সন্ত্রাসকে প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক সৌহার্দ্য বজায় রাখাও জরুরি দেশের স্বার্থে। রাষ্ট্রের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের একই প্রশ্ন, আর কত দেরি? কত রক্ত ঝরলে, কত প্রাণ গেলে একটি নিরাপদ রাষ্ট্র পাব?

আজহার মাহমুদ, খুলশী-১, চট্টগ্রাম

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রেম-বিয়ে নিয়ে বিরোধ, বাবাকে পিটিয়ে হত্যা

স্কয়ার গ্রুপে চাকরির সুযোগ

রাজাকার ইস্যুতে হেফাজতে ইসলামের বিবৃতি

নরসিংদীতে ১৭ দিনে ৭ খুন, বাড়চ্ছে উদ্বেগ

নতুন অতিথি আসছে নাগা-শোভিতার সংসারে, গুজন নাকি সত্যি?

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নতুন নির্দেশনা ইসির

অবস ও গাইনি স্পেশালিস্ট পদে চাকরি দিচ্ছে রেড ক্রিসেন্ট

কেরানীগঞ্জে অস্ত্র-ককটেলসহ চার ডাকাত গ্রেপ্তার

রাজধানীর যেসব স্থানে বসছে ডিএমপির চেকপোস্ট

ইউক্রেন নিয়ে জার্মানির নতুন পরিকল্পনা

১০

অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারীর পরিচয় নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য

১১

দেশের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১২

মহাসড়কে ভারতীয় ২ তরুণের কাণ্ড

১৩

নাশকতার দুই মামলায় মির্জা আব্বাস-আমানসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি 

১৪

‘মার্চ টু ইন্ডিয়ান হাইকমিশন’ কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা

১৫

বিএনপিতে যোগ দিলেন সাবেক জামায়াত নেতা

১৬

আপনারা মৃত্যু ঘোষণা করলেই মরে যাওয়ার চেষ্টা করব : নচিকেতা

১৭

বাংলাদেশকে উচিত শিক্ষা দেবে ভারত : আসামের মুখ্যমন্ত্রী

১৮

এলাকার সবার কাছে প্রিয় শরিফ ওসমান হাদি

১৯

খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের নিরাপত্তা টিমের প্রধান শামসুল ইসলাম

২০
X