

বাংলাদেশের কয়েকজন রাজনীতিক ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে মন্তব্য করলে ভারত নীরব থাকবে না—এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। মঙ্গলবার তিনি বলেন, এ ধরনের বক্তব্য চলতে থাকলে ভারত ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে বাধ্য হবে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের বরাতে জানা যায়, আগের দিন বাংলাদেশের নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ‘সেভেন সিস্টার্সকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুঁশিয়ারি দেন’। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত এক বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে বারবার এমন বক্তব্য আসছে যে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে আলাদা করে বাংলাদেশের অংশ করা উচিত। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘ভারত একটি বড় দেশ, পারমাণবিক শক্তিধর এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি। বাংলাদেশ কীভাবে এমন চিন্তা করতে পারে?’
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা আরও বলেন, এই ধরনের মানসিকতাকে উৎসাহ দেওয়া উচিত নয় এবং বাংলাদেশকে সব ক্ষেত্রে সহায়তা করাও ঠিক হবে না। তার ভাষায়, ‘এভাবে আচরণ চলতে থাকলে আমরা চুপ করে থাকব না।’
ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এই নেতার বক্তব্যের পর বিষয়টি নতুন করে দুই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এদিকে দেশে চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্কের ইন্ডিয়ান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার (আইভিএসি) বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুর ২টায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ivacbd.com-এ প্রকাশিত নোটিশে বলা হয়েছে, ‘চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে জানানো যাচ্ছে, ‘যমুনা ফিউচার পার্কের ইন্ডিয়ান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার আজ দুপুর ২টায় বন্ধ হয়ে যাবে।’
নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আজ যাদের ভিসা সাবমিশনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল, তাদের পরবর্তী তারিখে নতুন স্লট প্রদান করা হবে। আবেদনকারীদের ধৈর্য ধরতে এবং ওয়েবসাইট বা হটলাইনের মাধ্যমে আপডেট চেক করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
এমনকি বাংলাদেশের এক রাজনৈতিক নেতার মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করেছে ভারত।
মঙ্গলবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ হাইকমিশনার মুহাম্মদ রিয়াজ হামিদুল্লাহকে ডেকে পাঠিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানায়। একই সঙ্গে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
ভারতের দাবি, বাংলাদেশের ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) এক নেতা প্রকাশ্যে ভারতবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। ওই নেতা হুমকি দিয়ে বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো—যেগুলো ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত; সেগুলো ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। এ মন্তব্যকে উসকানিমূলক ও অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করছে ভারত।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ঢাকায় ভারতীয় মিশনের চারপাশে নিরাপত্তা সংকট তৈরির ঘোষণাসহ কিছু চরমপন্থি তৎপরতার বিষয়টি বাংলাদেশি হাইকমিশনারকে জানানো হয়েছে। এসব ঘটনায় ভারতের উদ্বেগ স্পষ্ট করা হয়।
ভারত আরও অভিযোগ করেছে, সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার বিষয়ে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার এখনো যথাযথ তদন্ত করেনি কিংবা ভারতকে পর্যাপ্ত তথ্য দেয়নি।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বহু উন্নয়ন ও জনগণের মধ্যে সম্পর্কের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে। ভারত বাংলাদেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়।
মন্তব্য করুন