

প্রায় দেড় যুগের নির্বাসিত জীবন শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মাতৃভূমিতে পা রাখলেন। ঐতিহাসিক এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি ঘিরে উদ্ভূত বহু জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটল; বাস্তবে রূপ নিল দলটির অগণিত নেতাকর্মী ও অনুসারীদের দীর্ঘ প্রত্যাশা। বিএনপির এ কান্ডারির স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে দলের সর্বত্র আনন্দের জোয়ার। উজ্জীবিত সব নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষ। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হওয়ায় তৃণমূল থেকে কেন্দ্র—সব পর্যায়ের নেতাকর্মীর মধ্যে বিরাজ করছে প্রাণচাঞ্চল্য। শুধু বিএনপি নয়, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় তার এ প্রত্যাবর্তন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও আশাব্যঞ্জক মনে করছেন দেশের সব স্তরের মানুষ। স্বভাবতই তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এমনকি নিজ দলের পক্ষ থেকেও গ্রহণ করা হয় কঠোর নিরাপত্তা। তার প্রত্যাবর্তনে সারা দেশের মানুষের মতো কালবেলা পরিবারও উচ্ছ্বসিত। আমরা তার এই ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনকে অভিবাদন জানাই।
গতকাল দেশে প্রত্যাবর্তনের পর তারেক রহমানের সঙ্গে ফোনে কথা হয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের। তিনি তাকে স্বাগত জানান। এ ছাড়া জামায়াত ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা তাকে অভিনন্দন ও স্বাগত জানান।
গতকাল তারেক রহমান প্রথমে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং পরে ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এরপর কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্য দিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর ৩০০ ফিটে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। সেখানে লাখো জনতা এবং দলের নেতাকর্মীরা গভীর আবেগ ও উচ্ছ্বাসের সঙ্গে তাকে সাদরে গ্রহণ করেন। বিকেল ৪টার দিকে তারেক রহমান মঞ্চে বক্তৃতা দেন। বক্তৃতায় একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, পঁচাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর, নব্বইয়ের স্বৈরশাসককে উৎখাত এবং সর্বশেষ চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানে দেশের মানুষের ত্যাগকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। দীর্ঘ নির্বাসনের পর লাখো জনতার সামনে আবেগঘন বক্তৃতায় সবাইকে নিয়ে নতুন করে দেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, এ মঞ্চে যেসব নেতৃত্ব রয়েছেন, শুধু তারাই নন, দেশের সব রাজনৈতিক দল, মত, শ্রেণি, বর্ণ, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সবাই মিলে দেশকে গড়ে তুলতে হবে। প্রতিষ্ঠা করতে হবে মানুষের কথা বলার অধিকার। দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে করতে হবে শক্তিশালী। যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদবিরোধী নেতা মার্টিন লুথারের বিশ্ববিখ্যাত একটি উক্তি ‘আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম’ স্মরণ করে বলেন, ‘আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান’। কৃষকের জন্য, শ্রমজীবীদের জন্য, আদিবাসীর জন্য, হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধসহ সব ধর্ম-সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গড়ে তোলাই তার এই প্ল্যানের লক্ষ্য বলে জানান তিনি। স্মরণ করিয়ে দেন, এই প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে হলে দরকার ঐক্যবদ্ধ হওয়া। সব দল-মতের একতা এবং তরুণ প্রজন্মই পারবে সবার জন্য একটি নিরাপদ রাষ্ট্র গঠন করতে। এ কথাও স্মরণ করিয়ে দেন যে, ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই। সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে যূথবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। কারও কারও ভাষায় একটি ‘রাজনৈতিক শূন্যতা’ তৈরি হয়েছে। এরকম একটি মুহূর্তে দেশের ঐতিহ্যবাহী ও সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তনে আপামর মানুষের মনে একটি আশা জাগ্রত হয়েছে। তারা মনে করছেন, উদ্ভূত এ পরিস্থিতি থেকে তিনি একটি গণতান্ত্রিক পথ দেখাতে সমর্থ হবেন। আমাদের প্রত্যাশা, এই মুহূর্তে দেশের যে একটি গণতান্ত্রিক উত্তরণ আবশ্যক, সেই পথকে সুগম করতে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখবেন।
মন্তব্য করুন