সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ০২:৩৫ এএম
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:১২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

যদি অক্টোবর আন্দোলন ব্যর্থ হয়

যদি অক্টোবর আন্দোলন ব্যর্থ হয়

গত বছর একের পর এক বিভাগীয় সমাবেশ, গণপরিবহন ধর্মঘটসহ নানা বাধা পেরিয়ে সেই সমাবেশগুলো বড় আকারে করেছিল বিএনপি। বলতে গেলে একটা আন্দোলনের আবহ সৃষ্টি করতে পেরেছিল। কিন্তু সেটা মুখ থুবড়ে পড়ে ঢাকায় সমাবেশ করতে গিয়ে। তাদের নেতাদের কথায় মনে হচ্ছিল, ১০ ডিসেম্বরের ঢাকা সমাবেশেই তাদের বিজয় অর্জিত হবে এবং কেউ কেউ এটাও বলেছিলেন যে, এদিন থেকে বিএনপির প্রবাসী নেতা তারেক রহমানের কথায় দেশ চলবে।

কিন্তু কিছু হয়নি। হয়নি বলতে কিছু করতে পারেনি দলটি। পল্টনে সমাবেশ করতে চেয়ে সরকারের বাধায় তা করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত সেটি হয় কমলাপুরের গোলাপবাগ মাঠে। কিন্তু বিভাগীয় সমাবেশ কেন্দ্র করে বিএনপিকে যতটা চাঙা মনে হয়েছিল, ঢাকায় এসে সরকারের বাধায় ততটাই অগোছালো মনে হয়েছে এবং নিজ দলের কার্যালয়ের সামনে পল্টনে সমাবেশ করতে না পারা দলটির জন্য এক ধরনের পরাজয় ডেকে আনে দলের ভেতরেই। গোলাপবাগের সমাবেশ বড়ই ছিল, নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণও উৎসাহের সঙ্গেই ছিল। কিন্তু দলের জন্য সেটা সফলতা ছিল না। সরকারের সফলতা বেশি ছিল, কারণ সরকার বা সরকারি দল আওয়ামী লীগ এ ঘটনায় প্রমাণ করতে পেরেছে যে, তারা যেভাবে চেয়েছে, বিএনপি সেভাবেই সমাবেশ করেছে।

এরপর বহু সময় গেছে এবং আরও এক ডিসেম্বর সমাগত। বারবার নেতারা বলেছেন, তাদের একদফা, অর্থাৎ শেখ হাসিনার সরকারের পতনের দাবির ফয়সালা হবে রাজপথেই। কিন্তু সেটা আর হয়নি। অর্থাৎ ১০ ডিসেম্বের ঘিরে সরকার ও প্রশাসনে যে কিছুটা চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল, তা অনেকটাই স্থিত হয় গোলাপবাগে সমাবেশ সরিয়ে দিতে পেরে। এর পর থেকেই সরকারি দলকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী বলে প্রতীয়মান হয়, যদিও এ সময় এসে মার্কিন ভিসা নীতি প্রয়োগের ঘোষণায় কিছুটা অস্বস্তি আছে সরকারের মধ্যে।

গত বছর ১০ ডিসেম্বরের মতো এ বছর জুলাই মাসের ১২ তারিখকে ঘিরেও এরকম একটি হাওয়া তোলে বিএনপি। বলে এটাই চূড়ান্ত আন্দোলন। আগাম ঘোষণা দেওয়া হয় যে, এই ১২ জুলাই সরকারবিরোধী একদফা আন্দোলনের চূড়ান্ত ঘোষণা হবে। কিন্তু ঢাকাসহ সারা দেশে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সরকারের জন্য বড় কোনো জটিলতা তৈরি করতে পারেনি বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এরপর ঢাকাসহ সারা দেশে দুদিনের পদযাত্রার পর গত ২৭ জুলাইও মহাসমাবেশ করে দলটি।

কিন্তু সরকারের ওপর দৃশ্যমান বিদেশি তৎপরতা ছাড়া বিএনপি কোনো চাপ তৈরি করতে পারেনি এখন পর্যন্ত। এখন তারা বলছে, যা কিছু হবে এ অক্টোবরেই হবে। কিন্তু সেটিও কীভাবে হবে তার পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বিএনপি এখন আন্দোলনের কথা ভাবছে দুই ভাগে। প্রথম ভাগে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আন্দোলন, যেটি আইনি মারপ্যাঁচে আটকে আছে। আরেকটি হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের আন্দোলন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির ওপর ভর করে এ মাসেই সাফল্যের স্বপ্ন দেখছে বিএনপি। যেসব কর্মসূচির কথা ভাবছে দলটি, সেগুলো হলো ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ, ঘেরাও ও অবরোধ। এরকম কর্মসূচি বিএনপি আগেও দিয়েছে। সেসব কর্মসূচি জনজীবন বিপর্যস্ত করতে পারলেও সরকারকে বেকায়দায় ফেলেনি। এবার বিএনপির পক্ষে একমাত্র উপাদান মার্কিন ভিসা নীতির জুজু। কিন্তু পরিস্থিতি স্পষ্টতা দিচ্ছে যে, বিদেশি এসব চাপ থাকলেও আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী এবং ঢাকার মাঠের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে মরিয়া।

বিএনপির জন্য অক্টোবর মাস সত্যিকার অর্থেই বড় মাস। যদি এ মাসে কিছু করতে না পারে তাহলে আন্দোলন ব্যর্থ হতে বাধ্য। কারণ আগামী বছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার লক্ষ্যে নভেম্বরের শুরুতে তপশিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। একবার যদি তপশিল হয়ে যায়, তাহলে পুরো চিত্রই পাল্টে যাবে। মাঠ হয়ে উঠবে নির্বাচনমুখী। শাসক দলের পাশাপাশি অসংখ্য দল ভিড় করবে নির্বাচনী সুযোগ নিতে।

টানা ১৭ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। দীর্ঘ সময় কোনো আন্দোলনেই সাফল্য পায়নি দলটি। তবে এবারের মাঠের রাজনীতিতে বিএনপিকে কিছুটা সফল বলা যাবে এ কারণে যে, অন্তত মাঠে নামতে পেরেছে। কিন্তু বড় প্রশ্ন হলো, বিএনপির একদফা দাবির আন্দোলন নিয়ে। আন্দোলনের নানা ধাপ অতিক্রম না করেই বিএনপি নেতৃত্ব চরম জায়গায় চলে গেছে এবং বোঝা যায় যে, সেটি তারা করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভরসায়।

এর মধ্যেই দলের সমর্থকদের মধ্যে আওয়াজ উঠেছে যে, যদি আন্দোলন সেই ২০১৪ বা ’১৮-এর মতো ব্যর্থ হয়, তাহলে কী করবে বিএনপি? দল কী করবে সেটা জানা নেই, তবে বিএনপি নামের দলটি যে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। দেশজুড়ে অসংখ্য নেতাকর্মী ও সমর্থক হতাশায় নিমজ্জিত হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের কথাও পরিবর্তন লক্ষণীয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এর মধ্যেই বলেছেন, ভিসা নীতি ঘোষণার অর্থ এই নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র আলাদা করে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে। তবে এ কথা সত্য যে, পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে অক্টোবর মাসের ঘটনাবলির ওপর। সরকার যে চাপে আছে, এ কথা সত্য। দ্রব্যমূল্যের চাপে জনগণ দিশেহারা, অর্থনীতি টালমাটাল, ডলার সংকট চরমে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, সরকার পড়ে গেছে। বিএনপিকে ক্ষমতায় যেতে হলে আগে আন্দোলনে জিততে হবে এবং সেটিই এখন পর্যন্ত দলের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দলের নেতারা বারবারই বলছেন যথাসময়েই নির্বাচন হবে। কেউ যাতে নির্বাচন বানচাল করে কোনো শূন্যতা সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সচেতন আছে। তাই বিএনপি যদি মনে করে মার্কিন ভিসা নীতিই সব করে দেবে, তাহলে ভুল করবে। অতীতের সব অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বিদেশিরা শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীনদের সঙ্গেই হাত মেলায়। এটাই বাস্তবতা।

বিএনপি মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি কার্যকরের ঘোষণার প্রেক্ষাপটে সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিরোধীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-কর্মসূচিতে বড় ধরনের বাধার সৃষ্টি করবে না। এ সুযোগটা দলটি নিতে চায়। কিন্তু সূত্র বলে যে, বিদেশি চাপ সত্ত্বেও রাজনীতির মাঠে কঠোর হবে ক্ষমতাসীনরা। সরকারি দলের নেতারা বলছেন, বিএনপির আন্দোলন এখনো তাদের ওপর বড় কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি। বরং আওয়ামী লীগ চিন্তা করছে বিএনপি যদি নিজেদের অস্তিত্বের প্রশ্নে নির্বাচন বানচাল করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করে, তাহলে কী করা হবে সে নিয়ে। সরকারের জন্য এখন নির্বাচনের বিকল্প নেই। আর তাই অক্টোবরে বিএনপির কর্মসূচিকে প্রশাসনিকভাবে ও রাজনৈতিক দিক থেকে মোকাবিলা করার কথাই বলছে আওয়ামী লীগ।

বিএনপির জন্য অবস্থা বেশ সঙ্গীনই বলতে হবে। যদি আন্দোলন ব্যর্থ হয় তাহলে দলটি হয়তো নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু এতে করে বাস্তবে কী হবে? দল নির্বাচনে গেলেও হারবে, না গেলেও ঠকবে ২০১৪-এর মতো। আওয়ামী লীগ যদি তার মতো করে নির্বাচন করতে পারে, সেটি হবে বিএনপির জন্য এক চরম বিপর্যয়।

লেখক : প্রধান সম্পাদক, গ্লোবাল টেলিভিশন

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দুঃসময় যেন পিছুই ছাড়ছে না পাক তারকা ক্রিকেটারের, এবার যেন হারাবেন পদটাই

হাই ব্লাড প্রেশার নিয়ে যা জানা জরুরি

বিপাকে স্বরা ভাস্কর

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

মাঝ আকাশে নগ্ন অবস্থায় ধরা বিমানবালা

মরদেহ দাফনের পর জীবিত ফিরে এলো রবিউল!

সারাক্ষণ চার্জার প্লাগে রাখেন? জেনে নিন কী হতে পারে

এশিয়া কাপে ভারতের একাদশ কেমন হবে, জানালেন তারকা ক্রিকেটার

বায়ুদূষণের শীর্ষে দুবাই, ঢাকার অবস্থান কত

মৌদিকে আদর্শগত শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করলেন বিজয়

১০

কেবিন ক্রুদের আসল কাজ কী

১১

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

১২

বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের বড় সুখবর দিল সরকার

১৩

জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে এবার আইপিএলে কাজ করা অ্যানালিস্ট

১৪

আমরা লক্ষ্য অর্জনের দ্বারপ্রান্তে : নেতানিয়াহু

১৫

৩ প্যাকেট কাঁচা নুডলস খেয়ে ১৩ বছরের কিশোরের করুণ পরিণতি

১৬

তিস্তার বন্যায় কৃষকের স্বপ্ন ভাসছে অনিশ্চয়তার অথৈ জলে

১৭

ব্যাংকিং টিপস / ব্যাংকের সুদের হার ও চার্জ সম্পর্কে সচেতন থাকুন

১৮

শতভাগ লুটপাটমুক্ত দল জামায়াতে ইসলামী : ড. মোবারক

১৯

মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে এসে মারা গেলেন ছেলেও

২০
X