কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:০৯ এএম
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:৪৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সেই দিনটি

বেলতলায় তুমুল উত্তেজনা

বেলতলায় তুমুল উত্তেজনা

প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দীন তো ছাত্র-বিক্ষোভের ভয়তীতি থেকে পালিয়ে বাঁচেন ঢাকা থেকে করাচিতে পৌঁছে। দুর্বলচিত্ত এই রাজনীতিকের ভার-বিক্ষোভ ও ছাত্র আন্দোলনের অভিজ্ঞতা যথেষ্টই ছিল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে। মন্ত্রিত্ব বরাবরই ছিল আমলা-প্রশাসননির্ভর এবং তা বিভাগ পূর্বকাল থেকে। ব্যক্তিত্বহীন রাজনীতিবিদের ক্ষেত্রে এমনটাই স্বাভাবিক। তবু তার রাজনৈতিক সৌভাগ্য এমনই যে, তিনি অবিভক্ত বঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী, বিভক্ত পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, লিয়াকত হত্যার পর প্রধানমন্ত্রী, এরপর পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল। সবই ‘কায়েদ’ মহিমা!

মাঝেমধ্যে রাজনীতির ভুল চালে অঘটন ঘটালেও মুসলিম লীগ রাজনীতিতে সোহরাওয়ার্দীর তুলনায় ভাগ্যবান খাজা নাজিমুদ্দীন, যেমন জিন্নাহর দাক্ষিণ্যে তেমনি তার দুর্বল চিত্ততার কারণে। তবে এবারের ভুলটা ছিল গুরুতর। সে ভুলের ফায়দা বাঙালি ছাত্র-জনতা ভালোভাবে তুলে নেয়। নাজিমুদ্দীন পার হলেও ছাত্র-বিক্ষোভ যথারীতি তীব্রতা অর্জন করতে থাকে। এর প্রথম লক্ষণ প্রকাশ পায় নির্ধারিত ৪ ফেব্রুয়ারির ছাত্র ধর্মঘটে এবং বেলতলার ছাত্র সমাবেশে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস বিল্ডিং (‘কলাভবন’ শব্দটি তখনো চালু হয়নি) প্রাঙ্গণে সেদিন আবারও ছাত্রছাত্রী সমাবেশ, বেলতলা থেকে আমতলা পর্যন্ত তারুণ্যের চঞ্চলতা জোগানে মুখর। সরকারি প্রশাসন ছাত্র-বিক্ষোভে তখন বাধার প্রাচীর তৈরি করলেও আক্রমণ শুরু করেনি। হয়তো সিদ্ধান্ত ও প্রস্তুতির কিছুটা অভাব ছিল। ছাত্রদের দিক থেকে সে মুহূর্তে বিক্ষোভের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দীন ও তার ২৭ জানুয়ারির বক্তৃতা। ছাত্রচৈতন্যে ছাইচাপা আগুন সুযোগ মতো বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। ২৭ জানুয়ারির পর ৪ তারিখের সমাবেশই সবচেয়ে বড় এবং উত্তপ্ত মনে হচ্ছিল। সকাল ১০-১১টার মধ্যেই প্রাঙ্গণ ছাত্রছাত্রীতে পরিপূর্ণ, কয়েক হাজার তো হবেই। শহর ঢাকার স্কুল-কলেজে বিক্ষোভের ঢেউ, যে ঢেউ আছড়ে পড়েছে বেলতলায়। ছাত্রছাত্রীদের আলাদা আলাদা মিছিল এসে থামছে এখানে। বাদ নেই কারিগরি শিক্ষায়তনগুলো। মেডিকেল কলেজ থেকে বন্ধু আলী আজমল সালামসহ আমরা কয়েকজন সেখানে হাজির, মিছিল করে নয়, হেঁটে হাসপাতাল সংলগ্ন আর্টস প্রাঙ্গণে।

দুই. যথারীতি সংক্ষিপ্ত সভা, সভাপতি গাজীউল হক। বক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক আবদুল মতিনসহ একাধিক ছাত্রনেতা। স্লোগান উঠছে ‘মীরজাফর নাজিমুদ্দীন মুর্দাবাদ’ ‘জুলুমশারী নিপাত যাক’ ‘আরবি হরফে বাংলা লেখা চলবে না, চলবে না’। পোস্টার, ব্যানার লাল বর্ণমালায় সজ্জিত, সঙ্গে নাজিমুদ্দিনের পৃথুল দেহের ব্যঙ্গচিত্র (কার্টুন)। যে কারণে হোক, পুলিশ সেদিন কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি করেনি, যেমন লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস বর্ষণ ইত্যাদি। যাই হোক সংবাদপত্রমহলে ওই ৪ তারিখের ঘটনার উত্তাপ গভীর প্রভাব রেখেছিল। সেখানেও ছিল আবেগ আর উচ্ছ্বাস। সাপ্তাহিকের মধ্যে ‘ইত্তেফাক’ ‘সৈনিক’ ‘নওবেলাল’ সে আবেগ যথাযথ মর্যাদায় ধারণ করেছিল যদিও তাতে ছিল। আতিশয্য, কখনো আবেগজনিত তথ্যগত ত্রুটি (যেমন সৈনিক)। তবু এদের আন্তরিকতা অস্বীকারের উপায় নেই। বায়ান্নর ফেব্রুয়ারি সত্যই এক ভাষিক আবেগের মাস, যেমন এর সূচনালগ্নে, তেমনি পরে দশকের পর দশক পেরিয়ে। বায়ান্নর আবেগ শুরু ৪ ফেব্রুয়ারি থেকেই। তা না হলে ঢাকা শহরের জন্য নির্ধারিত কর্মসূচি ৪ ফেব্রুয়ারি দেশের রাজনীতিমনস্ক শহরগুলোতে স্বতঃস্ফূর্ত আবেগে পালিত হবে কেন? আর সেসব স্থানে দেখা গেছে ক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীদের শহর সড়ক পরিক্রমা এবং তা প্রশাসনের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে।

লেখাটি ভাষাসংগ্রামী, কবি, রবীন্দ্রগবেষক ও প্রাবন্ধিক আহমদ রফিক রচিত ‘একুশের দিনলিপি’ গ্রন্থ থেকে সংক্ষেপে উদ্ধৃত (চলবে)

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সন্তানকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া কি জায়েজ

৩১ দফার আলোকে হবে রাষ্ট্র গঠন : অমিত

খালেদা জিয়াকে দেখতে ফিরোজায় যাবেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী

ঘুষকাণ্ডে এবার জামায়াতের সেই আইনজীবীর সনদ স্থগিত

ঢাকায় বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলন, আলোচনা হবে যেসব ইস্যুতে

চাঁদাবাজির অভিযোগে ২ যুবককে গণপিটুনি

সেই তন্বীর বিরুদ্ধে লড়বেন জান্নাতুন নাহার

দুই বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল হেলপারের

সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যুতে সিইউজে’র শোক

রাজধানীর পান্থপথে দেয়াল ধসে নিহত ১

১০

কালকিনিতে আনিসুর রহমান খোকন / মায়েদের পাশে থাকবে বিএনপি

১১

দিনে কত কাপ চা খাওয়া উচিত, জানালেন বিশেষজ্ঞ

১২

২০২৬ সালের এইচএসসি পরীক্ষার সিলেবাস কেমন হবে, জানা গেল

১৩

শান্ত-সৌম্যর বাদ পড়ার কারণ জানালেন গাজী আশরাফ

১৪

বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী

১৫

‘এখন কাউকে ধরতে যৌক্তিক কারণ লাগে না, তবে সত্যের জয় হবে’

১৬

হাওরে নৌকা ডুবে নিখোঁজ ২

১৭

‘পৃথক সচিবালয় ছাড়া বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়’

১৮

রাতের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে বজ্রবৃষ্টি

১৯

বেসরকারি সংস্থায় চাকরি, বেতন ৩৮০০০ টাকা

২০
X