মোতাহার হোসেন
প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:০৯ এএম
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:৪৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করুন

বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করুন

বাতাসে অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণে বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয়, বাড়ে পৃথিবীর তাপপ্রবাহ। বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয়ে বরফাচ্ছাদিত হিমালয়, অ্যান্টার্কটিকাসহ অন্যান্য বরফাচ্ছাদিত অঞ্চলের বলফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ে এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বের সমুদ্র উপকূলে লবণাক্ততা বাড়ে, বাড়ে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি, খাদ্য নিরাপত্তা, বিশুদ্ধ পানীয় জলের সমস্যা। জীবাশ্ম জ্বালানি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে তিন-চতুর্থাংশের জন্য দায়ী। তাই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করতে কয়লা, তেল ও গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। পাশাপাশি জলবায়ুর ওপর শিল্পের প্রভাব কমাতে প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গুরুত্ব দেওয়া উচিত; তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে বিভাজন নয়, দরকার ঐক্য। কিন্তু বাস্তবে তা লক্ষণীয় হচ্ছে না।

২০২৩ সালটি সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হওয়ার রেকর্ডের নিকটবর্তী। উত্তর আমেরিকায় চরম দাবানল দেখা গেছে। আফ্রিকায় প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। চীন, দক্ষিণ ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড গড়া তাপপ্রবাহ দেখা গেছে। পাশাপাশি ভূমধ্যসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলসহ ভয়াবহ হারিকেন এবং ঘূর্ণিঝড়ে লিবিয়া, গ্রিস, তুরস্ক ও বুলগেরিয়ায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং কমপক্ষে ২০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। সমুদ্রের তাপমাত্রাও রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা সামুদ্রিক ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্রকে ওলটপালট করে ফেলছে। বিজ্ঞান সতর্ক করছে, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে আবহাওয়ার নির্দয় আচরণ আরও বাড়বে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে এবং জলবায়ু সংকট যেভাবে তীব্র হচ্ছে; বিশ্বনেতাদের এ ব্যাপারে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে গত ৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হলো বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ২৮। সম্মেলনের আয়োজক দেশের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জলবায়ু ঝুঁকি সৃষ্টিকারী জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করেন বিশ্বনেতারা।

এবারের সম্মেলনের বেশ কিছু ইতিবাচক অর্জন রয়েছে। কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণ তহবিল (গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড) চালু করতে সম্মত হয়েছেন বিশ্বনেতারা। আয়োজক দেশ সম্মেলন শুরুর দিনই এই ফান্ডে ১০০ কোটি ডলার অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেয়। পাশাপাশি চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশ ১০০ বিলিয়ন অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং ২০২৫ সালে ৫০০ বিলিয়নের প্রস্তাব পাওয়া গেছে। ১৭৬০ সালে শুরু হওয়া প্রথম শিল্পবিপ্লবের পর মানবসভ্যতা এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে পৌঁছেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি সত্ত্বেও শিল্পবিপ্লব থেমে থাকার উপায় নেই; বরং অচিরেই পঞ্চম শিল্পবিপ্লবে যাবে উন্নত বিশ্ব। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে বাঁচতে দ্রুত প্রশমন এবং অভিযোজনের উদ্যোগ নিতেই হবে। প্রশমন পদক্ষেপ হিসেবে কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে। এ জন্য বিকল্প জ্বালানি যেমন—প্রাকৃতিক গ্যাস, সৌর ও বায়ুবিদ্যুতের ব্যবহার বাড়াতে হবে, কমাতে হবে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। কার্বন শোষণের সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে সবুজায়নের বিকল্প নেই। ইউনিসেফের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে বসবাসকারী শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠী রয়েছে, যা তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। এ ছাড়া বৈশ্বিক পর্যায়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে নেপাল ও শ্রীলঙ্কাও রয়েছে।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রেক্ষাপটে জলবায়ু সহনশীল পরিবেশের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে জ্বালানি এবং পরিবহন থেকে নির্গত ধোঁয়া থেকে যে দূষণ হয়, তা রোধ করা জরুরি। এটিকে এমন একটি ব্যবস্থায় নিতে হবে, যা প্রকৃতির সঙ্গে সহনশীল। সব অংশীজনের মধ্যে বৃহত্তর সহযোগিতা আমাদের যৌথ জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সংকট কাটানোর একটি সুযোগ। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকগুলোতেও বিষয়টি উঠে এসেছে। তাই এবারের সম্মেলন থেকে ভালো কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা করছে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো।

২০২৩ সালের জুনে প্যারিসে অনুষ্ঠিত নিউ গ্লোবাল ফাইন্যান্সিং প্যাক্টের শীর্ষ সম্মেলনে উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু অর্থায়ন হিসেবে প্রাপ্তির চেয়ে তাদের ঋণ দেওয়ার জন্য বেশি অর্থ প্রদানের মতো বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসে। আরও ছাড় ও অনুদানভিত্তিক অর্থায়ন এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য ঋণ বাতিলের নিমিত্তে উন্নয়নশীল দেশগুলো বিশ্বব্যাংক ও এর সহযোগী সংস্থাগুলো পুনর্গঠনের দাবি জানায়। কারণ বৈশ্বিক উষ্ণতা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হলে পৃথিবীর উষ্ণতা, বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণ কমাতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর বিকল্প নেই। তাই এবারের সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে বিশ্বনেতারা যে অঙ্গীকার করেছেন, তা বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকাই পারে ধরিত্রীকে মানুষ ও প্রাণিকুলের বসবাস উপযোগী রাখার।

লেখক: সাংবাদিক ও সাধারণ সম্পাদক

বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নতুন কোচ নিয়োগ দিল ঢাকা ক্যাপিটালস

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় বিদেশ নিতে দেরি হচ্ছে : ডা. জাহিদ

খালেদা জিয়াকে নিয়ে গুজব না ছড়ানোর আহ্বান ডা. জাহিদের

অপু-সজলের ‘দুর্বার’

বাংলাদেশে আমরা ভিন্নমতকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই : উপদেষ্টা ফাওজুল কবির

শেখ হাসিনাকে ভারতে থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে: জয়শঙ্কর

ঢাকাবাসী জাপান ওয়ার্ল্ডের উদ্যোগে রাজধানীতে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা

খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে ডা. জুবাইদা

মেঘনা ব্যাংকের এমডি হলেন সৈয়দ মিজানুর রহমান 

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে প্রথম জাতীয় আইন সম্মেলন অনুষ্ঠিত

১০

বিশ্বকাপের ফাইনালে ব্রাজিল

১১

নদীতে ডুবে প্রাণ গেল ২ ভাইয়ের

১২

নবম পে স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে সরকারি কর্মচারীদের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত

১৩

শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ, অভিযুক্তকে যে শাস্তি দিল এলাকাবাসী

১৪

কার্টনের ভেতর পলিথিনে মোড়ানো খণ্ডিত পা

১৫

‘আইনে অনুমোদিত টাকার বাইরে এক টাকা খরচ করব না’

১৬

ফিশিং বোটে মিলল ৩৭৫ বস্তা সিমেন্ট, গন্তব্য ছিল মিয়ানমার

১৭

ছাত্রদলের দুই নেতাকে শোকজ 

১৮

ফুটবল ও ক্রিকেট, দুই বিশ্বকাপেই খেলবে যেসব দেশ

১৯

চুল পড়া আর খুশকির সমস্যা বাড়াচ্ছেন নিজের ৬ অভ্যাসে

২০
X