সুভাষ সিংহ রায়
প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৪, ০২:২৭ এএম
আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৪, ০৭:৪৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
যা দেকি যা শুনি

ত্যাগ-তিতিক্ষার উদাহরণ কি কমে যাচ্ছে

ত্যাগ-তিতিক্ষার উদাহরণ কি কমে যাচ্ছে
ত্যাগ-তিতিক্ষার উদাহরণ কি কমে যাচ্ছে

সাহিদা তারেখ দীপ্তি দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য হয়েছেন। আওয়ামী লীগের সবাই কি তার ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা জানেন? ইয়াজউদ্দিন-মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সেনা-সমর্থিত সরকারের সময়ে যে রকম সাহসী ভূমিকা রেখেছেন, তা ছিল অতুলনীয়। কেননা শেখ হাসিনা মুক্তি আন্দোলনে তিনি ছিলেন অকুতোভয় সৈনিক। আমি তাকে চিনি অনেক বছর ধরে; তাকে আমি কখনোই চিবিয়ে কথা বলতে দেখিনি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন। এখনো শরীরে অসংখ্য স্প্লিন্টার বহন করে চলেছেন; কিন্তু তিনি থেমে যাননি। কিন্তু রাজনৈতিক দলে ত্যাগ-তিতিক্ষার ইতিহাস কি কমে যাচ্ছে? তিনি সোজাসাপটা কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু বলতেন তিনি চিবিয়ে কথা বলেন না। যেটা ভালো মনে করেন সেটা করেন, ভুল হলে তা সংশোধন করেন। এখনকার সময়ে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির অনুসারীরা কি বঙ্গবন্ধু চিন্তা-চেতনা ধারণ করতে পারছেন? নাকি ত্যাগের কথা শুধু ইতিহাসে লেখা থাকবে? বঙ্গবন্ধু জেলখানায় বসে বঙ্গমাতার পাঠানো খাতায় যা লিখেছিলেন, তাতে আমরা দেখতে পাই—‘যে কোনো মহৎ কাজ করতে হলে ত্যাগ ও সাধনার প্রয়োজন। যারা ত্যাগ করতে প্রস্তুত নয়, তারা জীবনে কোনো ভালো কাজ করতে পারে নাই—এ বিশ্বাস আমার ছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, এদেশে রাজনীতি করতে হলে ত্যাগের প্রয়োজন আছে এবং ত্যাগ আমাদের করতে হবে পাকিস্তানের জনগণকে সুখী করতে হলে। মুসলিম লীগ সরকার নির্যাতন চালাবে এবং নির্যাতন ও জুলুম করেই ক্ষমতায় থাকতে চেষ্টা করবে। নির্যাতনের ভয় পেলে বেশি নির্যাতন ভোগ করতে হয়।’ [অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা ১২৮]। দেশ নির্মাণে নারীদের যে ত্যাগ, সেটা আমরা অনেক সময় মনে রাখি না। জাতীয় কবি কাজী নজরুল তার ‘নারী’ কবিতায় উল্লেখ করেছিলেন:

“কোন রণে কত খুন দিল নর লেখা আছে ইতিহাসে,

কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর, লেখা নাই তার পাশে।

কত মাতা দিল হৃদয় উপড়ি’ কত বোন দিল সেবা,

বীরের স্মৃতি-স্তম্ভের গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা?

কোনো কালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারী,

প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয় লক্ষ্মী নারী।

রাজা করিতেছে রাজ্য-শাসন, রাজারে শাসিছে রাণী,

রাণীর দরদে ধুইয়া গিয়াছে রাজ্যের যত গ্লানি।”

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে অনেক বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের বাইরে কতজন বলছেন, ২০২৪ পর্যন্ত নারী উন্নয়নে যা কিছু হয়েছে, তার সবকিছুই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হয়েছে। একজন বিখ্যাত মনীষী বলেছিলেন, ‘মানুষ আসলে নির্জলা সত্য কথা শুনতে চায় না; সত্য-মিথ্যার মিশেলকে উৎসাহব্যঞ্জক মনে করে।’ এ কথা কতটা সত্য, তা আমাদের চারপাশে তাকালেই উপলব্ধি করা যায়। জ্ঞানীরাও সত্য প্রকাশে কুণ্ঠিত হয়। সুধীজনের কারও কারও মধ্যে গুজবনির্ভর তথ্যতে আস্থাশীল হতে দেখি। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের কমতি নেই। ডান-বাম ও ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের ছড়াছড়ি; কিন্তু নারীর অংশগ্রহণ আওয়ামী লীগেই ক্রমশ অগ্রসরমান। এখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৮১ সদস্যের মধ্যে ২১ জন নারী, অর্থাৎ ২৫.৬৪ শতাংশ নারী। বাংলাদেশে যে কোনো বাম রাজনৈতিক দলের কথাই যদি ধরি, তাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে কত শতাংশ নারী আছে? এবার একটু দেখা যাক, বিগত ১৫ বছরে নারী অগ্রগতিতে শেখ হাসিনার সরকার কতটুকু অবদান রেখেছে।

ড. হুমায়ন আজাদ তার প্রবচনগুচ্ছে লিখেছিলেন: ‘নারী সম্পর্কে আমি একটি বই লিখছি; কয়েকজন মহিলা আমাকে বললেন, অধ্যাপক হয়ে আমার এ বিষয়ে বই লেখা ঠিক হচ্ছে না। আমি জানতে চাইলাম, কেন? তারা বললেন, বিষয়টি অশ্লীল।’ সরকার প্রতি বছর বাজেট ঘোষণার সময় জাতীয় সংসদে জেন্ডার বাজেট উপস্থাপন করে। সেখানে নারী উন্নয়নে কোনো ধরনের নীতি, কৌশল ও কর্মসূচি প্রণয়ন করা হবে এবং তার জন্য মন্ত্রণালয়/বিভাগভিত্তিক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করবে, তার বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া থাকে। তা ছাড়া নারীর কল্যাণে কর্ম-সম্পাদন সূচক ও নারীর অধিকার সুরক্ষায় গৃহীত পদক্ষেপ বাজেট বরাদ্দে উল্লেখ থাকে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে যখন প্রথমবারের মতো জেন্ডার বাজেট উপস্থাপন করা হয়, তখন মাত্র চারটি মন্ত্রণালয়ের (শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা) জন্য এই বিশ্লেষণ করা হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে জেন্ডার বাজেটের জন্য রাখা হয় ২ লাখ ২৯ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের প্রায় ৩৪ শতাংশ এবং জিডিপির ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ।

২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উইমেন ইন পার্লামেন্ট ও ইউনেস্কো কর্তৃক দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জেন্ডার অসমতা কমানোয় নেতৃত্বের জন্য উইমেন ইন পার্লামেন্ট ফোরাম পুরস্কার আর ইউএন উইমেন কর্তৃক শিক্ষা ক্ষেত্রে মেয়েদের অগ্রগতির অসামান্য অর্জনের জন্য ‘ট্রি অব পিস’ অ্যাওয়ার্ড পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৬ সালে তিনি নারী ক্ষমতায়নের জন্য আরও দুটি স্বীকৃতি লাভ করেন। একটি হলো ইউএন উইমেন কর্তৃক প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার, অন্যটি হলো গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরাম কর্তৃক এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড। ২০১৮ সালে তিনি বাংলাদেশ এশিয়া ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নারী শিক্ষা ও নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে নেতৃত্বদানের জন্য গার্লস উইমেন সামিট কর্তৃক গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।

আজকের সময়ের রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা রাজনীতির ইতিহাস জানেন না বা জানার চেষ্টাও করেন না। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র পাঠান্তে জানতে পারি যে, আস্থা অর্জন করতে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। তারপর আসে সাফল্য। বঙ্গবন্ধু শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকেরও আস্থা অর্জন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষায়: “এরপর আমি হক সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে আওয়ামী লীগে যোগদান করতে অনুরোধ করলাম। চাঁদপুরে আওয়ামী লীগের এক জনসভায় তিনি যোগদানও করলেন। সেখানে ঘোষণা করলেন, ‘যারা চুরি করবেন তারা মুসলিম লীগে থাকুন, আর যারা ভালো কাজ করতে চান তারা আওয়ামী লীগে যোগদান করুন।’ আমাকে ধরে জনসভায় বললেন, ‘মুজিব যা বলে তা আপনারা শুনুন। আমি বেশি বক্তৃতা করতে পারব না, বুড়া মানুষ।’ এ বক্তৃতা খবরের কাগজেও উঠেছিল।” লেখা শেষ করছি বঙ্গবন্ধুর লেখা কয়েকটা লাইন উৎকলন করে। ‘হাজি গিয়াসউদ্দিন নামে একজন বন্ধু ছিলেন আমার। তিনি ব্যবসা করতেন। কোনোদিন আওয়ামী লীগের সভ্য হন নাই; তবে আমাকে ভালোবাসতেন। তার বাড়ি কুমিল্লায়। যখন আর কোথাও টাকা জোগাড় করতে পারি নাই, তখন তার কাছে গেলে কখনো আমাকে খালি হাতে ফিরে আসতে হয় নাই।’

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দুঃখ প্রকাশ করে ইরানের প্রেসিডেন্টের কাতারের প্রতি বার্তা

ঢাবিতে ককটেল বিস্ফোরণ

হাসনাতের পোস্টে দুদকে তোলপাড় / তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ দুর্নীতি দমন কমিশনের

সংঘাত থামছে না, উল্টো আরও জটিল রূপ নিচ্ছে

যেসব লক্ষ্য পূরণ হওয়ায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হন নেতানিয়াহু

‘দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিন’ স্লোগান দিয়ে বিপাকে বিএনপির ১৩ নেতা

অধ্যক্ষের ‘ভুয়া’ সনদ তদন্তে দুদকের অভিযান

ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত

কাজ না করেই বিল উত্তোলন, প্রতিবেদন জমা হয়নি ৫ কর্মদিবসেও

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আবারও বজ্রসহ ভারী বর্ষণের আভাস

১০

চট্টগ্রাম প্রতিদিন সম্পাদক আয়ান শর্মার বাবার পরলোকগমন

১১

জাতিসংঘ পানি কনভেনশনে যুক্ত হলো বাংলাদেশ

১২

জনগণের ভেতরে বিএনপির শেকড় : প্রিন্স

১৩

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলি সেনা নিহত

১৪

ইরানের জালে আটক মোসাদের ৬ এজেন্ট

১৫

প্রতীকসহ নিবন্ধন ফেরত পাওয়ায় খুশি জামায়াত

১৬

স্কুল ভবন নির্মাণ / কাজ শেষ না করেই বিল ভাউচারে সই নেওয়ার অভিযোগ

১৭

ঢাবির পুকুরে মাছের পোনা ছাড়লেন ছাত্রদল নেতা

১৮

বাংলাদেশে পুশইন, ক্ষোভ ঝাড়লেন মমতা

১৯

তাহলে সান্তোসেই থাকছেন নেইমার!

২০
X