পৃথিবীর বুকে বেশ কিছু মসজিদ রয়েছে, যা মাটির নিচে অবস্থিত। এর মধ্যে কিছু মসজিদ পরিকল্পিতভাবেই মাটির নিচে নির্মিত হয়েছে আবার কিছু মসজিদ বা পরিত্যক্ত মসজিদ একসময় ভূপৃষ্ঠে থাকলেও কালের বিবর্তনে তা মাটির নিচে চলে গেছে। ইন্দোনেশিয়ার জারবা অঞ্চলে অবস্থিত সিডোউইক্যাচ মসজিদ, কাজাখস্তানের মাংগাস্টৌ অঞ্চলের অগল্যান্ডি পার্বত্য এলাকায় অবস্থিত ব্যাকেটআটা মসজিদ, তুরস্কের ইয়েরাল্টি মসজিদ, গ্রিসের এথেন্স শহরের ভোটানিকোস মসজিদ প্রভৃতির নাম এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে।
তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, ইন্দোনেশিয়ার পিটি ফ্রি পোর্ট এলাকায় মাটির ১৭০০ মিটার নিচে পরিকল্পিতভাবেই নির্মিত হয়েছে মসজিদ আল বাবুল মুনোয়ার। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ফ্রি পোর্টের কর্মীদের উদ্যোগে এ মসজিদ নির্মিত হয়েছে। পিটি ফ্রি পোর্ট ও তৎসংলগ্ন এলাকার মাটির নিচে পাওয়া যায় স্বর্ণ, রৌপ্য, তামাসহ অনেক প্রকার মূল্যবান খনিজসম্পদ। এ খনিজসম্পদ আহরণের জন্যই বছরব্যাপী দুঃসাহসী খনি শ্রমিকরা মাটি খোদাই করে ক্রমেই গভীরে যেতে থাকে।
ইন্দোনেশিয়ার মোট জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশের বেশি ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে। পিটি ফ্রি পোর্টের এ খনি শ্রমিকদের মধ্যেও মুসলমানদের আধিক্য ছিল। ১৭০০ মিটার (দেড় কিলোমিটারেরও বেশি) গভীরে খনন করার সময় সংশ্লিষ্ট সবাই উপলব্ধি করেন যে, শুধু নামাজ আদায় করার জন্যই শ্রমিকদের এ পথ পাড়ি দিয়ে ভূপৃষ্ঠে আসতে হয় এবং নামাজ শেষে আবার ফেরত যেতে হয়। এতে বেশ সময় ও শক্তি ব্যয় হয়। এমন বাস্তবতায় সেখানে কর্মরত মুসলমান খনি শ্রমিকদের নামাজ আদায়ের জন্য নির্মিত হয় মসজিদ আল বাবুল মুনোয়ার।
সবুজ কার্পেটে আচ্ছাদিত মসজিদটির সামনে ইমামতির জন্য নির্ধারিত স্থান রয়েছে। কিবলার দিকে আরও রয়েছে পবিত্র কাবা গৃহ, সবুজ গম্বুজ ও সবুজ মিনারের ছবি। কালোর ওপর হলুদ রঙের আরবি অক্ষরে বেশ কিছু ধর্মীয় বাণীও লেখা হয়েছে কেবলার দিকের দেয়ালে। মসজিদের প্রবেশ পথেই রয়েছে অজুর ব্যবস্থা। মাটির অনেক গভীরে অবস্থিত হলেও যথেষ্ট আলো ও বাতাস প্রবাহের ব্যবস্থা থাকায় ধর্মপ্রাণ মুসলমান খনি শ্রমিকরা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই মসজিদটিতে নামাজ আদায় করতে পারেন।
নামাজ আদায়ের পাশাপাশি মসজিদটিতে পবিত্র রমজান মাসে একত্রে বসে ইফতার করেন পিটি ফ্রি পোর্টে কর্মরত ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের খনি শ্রমিক এবং অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী। ইফতার গ্রহণ ও মাগরিব নামাজের পর তারা বিশ্রামের জন্য নির্ধারিত স্থানে (বেইজ) চলে যান। বিশ্রাম শেষে তারা আবার মসজিদে ফিরে আসেন এশা ও তারাবির নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে।
ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৭০০ মিটার নিচে এই মসজিদের কাছে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের একটি চার্চ রয়েছে। চার্চের সামনে রয়েছে বড় আকৃতির লাল রঙের ক্রস চিহ্ন বা রেড ক্রস। প্রার্থনাকারীদের বসার জন্য সবুজ রঙের আকর্ষণীয় আসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে চার্চজুড়ে।
২০১৭ সালে ভূপৃষ্ঠ থেকে সবচেয়ে নিচের এই মসজিদ ও চার্চ বিশেষ সম্মাননা লাভ করে। স্থানীয় ভাষায় এ সম্মাননার নাম ‘মিউজিয়াম রেকর্ড দুনিয়া-ইন্দোনেশিয়া (মুরি)’, যার অর্থ ‘ওয়ার্ল্ড-ইন্দোনেশিয়া রেকর্ড মিউজিয়াম’।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত মেজর, গবেষক, বিশ্লেষক ও কলামিস্ট