মাসুমা জান্নাত
প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:২৫ এএম
আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫২ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্কাউটিং

কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাসুমা জান্নাত। ছবি : সৌজন্যে
কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাসুমা জান্নাত। ছবি : সৌজন্যে

স্কাউটিং বিশ্বব্যাপী একটি জনপ্রিয় অরাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবামূলক প্রতিষ্ঠান। যার কাজ হলো আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষাদান। শিশু-কিশোর ও যুব বয়সীদের ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সৎ, চরিত্রবান, পরোপকারী, আত্মনির্ভরশীল করে তোলা, আনন্দের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ গ্রহণে অভ্যস্ত করা; সর্বোপরি আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই স্কাউট আন্দোলনের মূল লক্ষ্য। স্কাউটিংয়ের ফলে একজন শিক্ষার্থী জীবনের শৃঙ্খলার মাধ্যমে নিজেকে প্রকৃত অর্থে একজন স্মার্ট সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম।

শিক্ষার্থীদের প্রাণোচ্ছল, উদ্যমী করতে রবার্ট স্টিফেন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল ১৯০৭ সালে ২১ জন খুদে শিক্ষার্থীকে নিয়ে ইংল্যান্ডের ব্রাউন্সি দ্বীপে ক্যাম্প আয়োজনের মাধ্যমে স্কাউট আন্দোলনের সূচনা করেন। পরে মেয়েরাও উৎসাহিত হলে ১৯১০ সালে শুরু করেন গার্লস গাইড। এই আন্দোলন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে এবং বাংলাদেশেরও স্কাউট আন্দোলনের সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।

১৯৭২ সালের ৮-৯ এপ্রিল সারা দেশের স্কাউট নেতারা ঢাকায় এক সভায় মিলিত হয়ে গঠন করেন বাংলাদেশ স্কাউট সমিতি। ১৯৭২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতির ১১১নং অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বাংলাদেশ স্কাউট সমিতির স্বীকৃতি দেন। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রথম চিফ স্কাউট।

বিশ্ব স্কাউট সংস্থা ১৯৭৪ সালের ১ জুন বাংলাদেশ স্কাউট সমিতিকে তার ১০৫তম সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭৮ সালের ১৮ জুন পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল সভায় সমিতির নাম বদলে রাখা হয় বাংলাদেশ স্কাউটস। ১৯৯৪ সালের ২৪ মার্চ বিশ্ব স্কাউট সংস্থার অনুমোদনক্রমে জাতীয় কাউন্সিল গার্ল-ইন-স্কাউটিং চালু করে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশ স্কাউট কার্যক্রম মাত্র ৫৬ হাজার ৩২৫ সদস্য নিয়ে শুরু হলেও এখন সদস্য সংখ্যা প্রায় ২৪ লাখ ৩৪ হাজার। তবে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ৫০ লাখ স্কাউট তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। স্কাউটদের সংখ্যার ভিত্তিতে বিশ্ব স্কাউটে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশের স্কাউটরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমাবেশে অংশগ্রহণ করে সুনামও অর্জন করেছে।

বাংলাদেশে স্কাউট অগ্রাধিকার কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২২টি উচ্চপর্যায়ের জাতীয় কমিটি আছে। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ হচ্ছে জাতীয় স্কাউট কাউন্সিল। রাষ্ট্রপতি ও চিফ স্কাউট হলেন এর প্রধান।

দেশব্যাপী স্কাউট আন্দোলনের সার্বিক উন্নয়নে প্রশিক্ষিত ৬৪ জন পেশাদার স্কাউট এক্সিকিউটিভ রয়েছেন। যাবতীয় কার্যক্রম জাতীয় সদর দপ্তর, স্কাউট ভবন থেকে পরিচালিত হয়। স্কাউটিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশে প্রায় ৩০টির মতো প্রকাশনা ও একটি মাসিক পত্রিকা রয়েছে।

স্কাউট আন্দোলন পরিচালনার জন্য রয়েছে ৭টি আইন এবং নির্দিষ্ট শপথ বাক্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কাউট আন্দোলন কাজ করছে তিনটি শাখায়—কাব স্কাউট (৬ থেকে ১০ বছর), স্কাউট (১১ থেকে ১৬ বছর) ও রোভার স্কাউট (১৭ থেকে ২৫ বছর)। এ ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে মুক্ত দল।

স্কাউটদের কার্যক্রম ও প্রশিক্ষণের জন্য ব্যাজ দিয়ে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তিনটি শাখার জন্য সর্বোচ্চ ব্যাজ হচ্ছে—শাপলা কাব, প্রেসিডেন্ট'স স্কাউট এবং প্রেসিডেন্ট’স রোভার স্কাউট। অ্যাডাল্ট লিডারদের স্কাউটিংয়ে অবদান রাখার সর্বোচ্চ পুরস্কার হচ্ছে রৌপ্য ব্যাঘ্র এবং দ্বিতীয় রৌপ্য ইলিশ।

সদস্য হতে হলে নিয়ম অনুসারে অনুশীলন, প্রতিজ্ঞা পাঠ ও দীক্ষা নিতে হবে। বিভিন্ন উপদলের মাধ্যমে পরিচালিত স্কাউট আন্দোলন কার্যক্রম শারীরিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন করে জীবনকে সুন্দরভাবে গঠন করতে এবং নেতৃত্বের বিকাশে সহযোগিতা করে। এর ফলে দেশের অভ্যন্তরে আঞ্চলিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির মিথস্ক্রিয়া হয়।

স্কাউটদের কার্যক্রমে বিভিন্ন সমাজ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেমন—বৃক্ষরোপণ, টিকাদান, স্যানিটেশন ও পরিবেশ সংরক্ষণ, ট্র্যাফিক কার্যক্রম, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সেবাদান কর্মসূচি।

স্কাউটিং মূলত প্রচলিত শিক্ষার সম্পূরক। একজন স্কাউট সবার বন্ধু। যে কি না কোনো কিছু প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে নয়, বরং মানবতার টানে সবার সাহায্যে এগিয়ে যায়। সেবামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে এটি মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ দূর করে ঐক্য বাড়ায়। এর মাধ্যমে সন্ত্রাস ও মাদক প্রতিরোধ, বাল্যবিয়ে রোধ, ইভটিজিং প্রতিরোধ ইত্যাদিও সম্ভব হয়।

আজকের শিশুরা স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠলে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ ত্বরান্বিত হবে। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কার্যকর ও গতিশীল স্কাউটিং প্রয়োজন।

লেখক: উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, কর্ণফুলী, চট্টগ্রাম

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

স্ত্রী-সন্তানসহ সাবেক এমপি সামছুল আলমের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা 

বাথরুমে একদম খোলামেলা গোসল করেন? হতে পারে যে ৩ বিপদ

শোবিতাকে ছাড়া বাঁচতে পারি না : নাগা চৈতন্য

চাঁদাবাজবিরোধী অভিযানে গিয়ে আহত ৩ পুলিশ সদস্য

হেলিকপ্টারে এসে প্রার্থিতা ঘোষণা করলেন প্রবাসী

ইসফাকের জায়গায় বিসিবি পরিচালক হলেন রুবাবা দৌলা

আগামী ৫ দিন আবহাওয়া কেমন থাকবে, জানাল অধিদপ্তর

শ্বশুরবাড়িতে গাছে ঝুলছিল জামাইয়ের মরদেহ 

হিসাবরক্ষণ পদে নিয়োগ দিচ্ছে আড়ং

ইরানের হাতে আসছে ‍রুশ অস্ত্র, মধ্যপ্রাচ্যে কী হতে যাচ্ছে?

১০

নারী বিশ্বকাপের জন্য ২১ সদস্যের দল ঘোষণা ব্রাজিলের

১১

‘সহজক্যাশে’ লেনদেনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কবার্তা

১২

রেড ক্রিসেন্টে চাকরির আবেদন করুন অনলাইনে

১৩

মহাসড়কে গাড়ি থামিয়ে সেই ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ২

১৪

অভিজ্ঞতা ছাড়াই নিয়োগ দিচ্ছে আরএফএল

১৫

ফের মা হতে চলেছেন ভারতী সিং

১৬

টিকা থেকে একটি শিশুও যেন বাদ না যায় : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা 

১৭

কোন রক্তের গ্রুপে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি, জানুন কী বলছে গবেষণা

১৮

ধোপাদিঘিতে মাছ মরে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, ওয়াকওয়ে বন্ধ ঘোষণা

১৯

জামায়াত আমিরের সঙ্গে ঢাকার আবাসিক সমন্বয়কারীর সাক্ষাৎ

২০
X