আগামী সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এ সংকট নিরসনে দুই দলের মধ্যে আলোচনা বা সমঝোতা জরুরি হলেও এর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সরকারি দলের নেতারা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচনের আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নেতাদের এ মাঠ গরম করা বক্তৃতা-বিবৃতিতে কর্মীদের মধ্যেও নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সেই প্রতিক্রিয়া কথায় সীমাবদ্ধ থাকলে সমস্যা হয় না। কিন্তু সেটি যদি রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে, এক দলের কর্মীরা আরেক দলের কর্মীদের ওপর হামলা চালায়, তখনই মহা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির দুদিনের কর্মসূচি নিয়ে যে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল, লক্ষ্মীপুরে কৃষক দলের এক কর্মী নিহত হলেন, সারা দেশে কয়েকশ মানুষ আহত হওয়ার পাশাপাশি জনজীবনে যে সীমাহীন ভোগান্তি নেমে এলো, এর জবাব কী। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্তত সাতটি জেলায় ত্রিমুখী সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। কোথাও বিএনপির পদযাত্রায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাধা দিয়েছে, কোথাও আওয়ামী লীগ হামলা করেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর। বিএনপি প্রথম ১৮ ও ১৯ জুলাই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে পদযাত্রার কর্মসূচি দেয়। আওয়ামী লীগ একই সময়ে প্রায় একই ধরনের কর্মসূচি না দিলে হয়তো এ সংঘর্ষ এড়ানো যেত। শান্তিরক্ষার দায়িত্ব সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। সেই দায়িত্ব তারা যে নিরপেক্ষতার সঙ্গে পালন করছে না, সেটা পরিষ্কার। সংবাদমাধ্যমের খবরে দেখা যায়, ১৮ জুলাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন স্থানে বিএনপির পদযাত্রায় বাধা দিয়েছে। কোথাও কোথাও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও যোগ দিয়েছেন। আবার কোথাও কোথাও বিএনপির নেতাকর্মীরা সেসব হামলা ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন। শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করা গণতান্ত্রিক অধিকার। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের কর্মসূচি ও পরিকল্পনার কথা দেশবাসীকে জানাতে পারে। কিন্তু এসব কর্মসূচি কেন্দ্র করে একে অন্যকে দেখে নেওয়া এবং দেখিয়ে দেওয়ার আওয়াজ শান্তিকামী মানুষকে উদ্বিগ্ন না করে পারে না। বিদ্যমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে কোনো পক্ষেরই এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যাতে দেশের সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হয়। রাজপথে ফয়সালা করা কিংবা রাজপথ দখল করার হুমকিধমকি কোনোভাবে কাম্য নয়। সবার ওপরে দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আর নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের সমাধানও করতে হবে আলোচনার মাধ্যমে; যদিও আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব আলোচনাকে এড়িয়ে চলতেই অভ্যস্ত। তাদের মনে রাখতে হবে, প্রতিপক্ষকে রাজপথে মোকাবিলা কিংবা ফয়সালার তৎপরতা অনেক সময় মঙ্গলজনক হয় না। আমাদের প্রত্যাশা, রাজনৈতিক দলগুলো দেশ ও গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থে রাজপথে একে অন্যকে মোকাবিলার সহিংস নীতি পরিহার করবে।
মন্তব্য করুন