পৃথিবীতে সব মানুষ অন্যের সাহায্য নিয়ে চলে। ধনী ব্যক্তির প্রয়োজন হয় গরিবের শ্রম, গরিবের দরকার হয় ধনী ব্যক্তির অর্থ। এভাবেই পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে মানবসভ্যতা এগিয়ে চলে। পৃথিবীর সব মানুষ যদি ধনী হয়ে যেত তাহলে সভ্যতা নির্মাণ করার লোক খুঁজে পাওয়া যেত না। ধনীদেরও কর্তব্য, গরিবের প্রতি আন্তরিক হওয়া, তাদের মুখে হাসি ফোটানো। দান ও অনুদানের হাত প্রসারিত করা। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের প্রতি বিরাট অনুগ্রহ হলো রবের সন্তুষ্টিতে দান-সদকা করা। এটা মানুষের জন্য আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। কেননা এর মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহ মানুষের জন্য রেখেছেন প্রভূত কল্যাণ। দান-সদকার ফলে আল্লাহতায়ালা বান্দার গুনাহ মাফ করেন, আয়ের মধ্যে বরকত দেন, পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি করেন ও বিভিন্ন বিপদ থেকে হেফাজত করেন। তা ছাড়া দানের ফলে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়, শান্তি-শৃঙ্খলা বৃদ্ধি পায় এবং সুন্দর ও সৌহার্দ্য সমাজ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই দানশীল পুরুষরা ও দানশীল নারীরা এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করে তাদের দেওয়া হবে বহুগুণ বেশি এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।’ (সুরা হাদিদ : ১৮)। এ আয়াতে মহান আল্লাহ দানশীল নারী-পুরুষদের জন্য কল্যাণের সুসংবাদ দিয়েছেন। তা ছাড়া আল্লাহ প্রদত্ত এ অনুগ্রহের মধ্যে সর্বপ্রথম যে দানের কথা আসে তা হলো জাকাত। জাকাত হচ্ছে দান-সদকার মধ্যে একটি ফরজ পর্যায়ের ইবাদত, যা শুধু সামর্থ্যবানদের ওপর ফরজ করা হয়েছে। আর এ দানের ফলে বান্দার ধন-সম্পদ পবিত্র হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো ও জাকাত দাও এবং রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো।’ (সুরা বাকারা : ৪৩)
দানের কারণে কখনো সম্পদ কমে না; বরং বৃদ্ধি পেতে থাকে। বাহ্যিকতায় সুদের বৃদ্ধি দেখলেও প্রকৃত অর্থে সুদে রয়েছে মহা ক্ষতি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন।’ (সুরা বাকারা : ২৭৬)। দান-সদকা এমন একটি বিষয়, যা আল্লাহর সন্তুষ্টিতে যদি কোনো ক্ষুদ্র কাজও করা হয়, তাও কিন্তু সদকা হিসেবে গণ্য হবে। এমনকি নিজের প্রতিপাল্য ও অধীন পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণে যে অর্থ আমরা ব্যয় করি, তাও কিন্তু সদকা হিসেবে বিবেচিত। এই ক্ষেত্রে যে সওয়াব মেলে তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এভাবে—তুমি যা কিছুই ব্যয় করো, সেটাই তোমার জন্য সদকা। এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে যে লোকমা তুমি তুলে দাও সেটাও। (বোখারি : ৫৩৫৪)
অধিকাংশ মানুষই অর্থ-সম্পদ দান করাকে শুধু দান-সদকা হিসেবে বুঝে থাকেন। মূলত তা নয়; বরং কাউকে কথা দিয়ে সহযোগিতা করা, কারও কাজে সহায়তা করা, পথহারা ব্যক্তিকে পথ দেখিয়ে দেওয়া, অসুস্থ ব্যক্তিকে সেবা করা, স্ত্রীর সঙ্গে মুচকি হাসা, স্ত্রীর মুখে খাবার তুলে দেওয়া, হাসিমুখে কথা বলা, মজলুমের পাশে দাঁড়ানো, উত্তম পরামর্শ দিয়ে পাশে থাকা, উত্তম আচরণ করা, অতিথি সেবা ইত্যাদি যত প্রকার কল্যাণমুখী কাজ রয়েছে সব ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টিতে করা কাজগুলো সদকা হিসেবে বিবেচিত।
মুফতি আব্দুল হালিম, ইমাম ও খতিব