ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গবেষণা কাজে তথ্য চুরি বা প্লেজারিজমের অভিযোগ উঠেছে। এখন পর্যন্ত এ তালিকায় রয়েছেন তিন শিক্ষক ও এক শিক্ষার্থী। কোনো অনুমতি ছাড়াই অন্যের রচিত সাহিত্য থেকে ভাব-ভাষা প্রভৃতি চুরি করে নিজের বলে দেওয়ার বিষয়টি এখন ক্রমেই বিস্তৃতি হচ্ছে। লেখক, সাংবাদিক, কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক, কবি অনেকের বিরুদ্ধেই এখন এ অভিযোগ উঠছে। এ অভিযোগগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মিথ্যা নয়। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তো বিষয়টি অহরহ ঘটছে। ইংরেজিতে এদের বলা হয় প্লেজারিস্ট, বাংলায় কুম্ভিল। আন্তর্জাতিক নীতি অনুযায়ী এ ধরনের কর্মকাণ্ড রীতিমতো গুরুতর অপরাধ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্লেজারিজমের অপরাধ প্রমাণিত হলে আইনি প্রক্রিয়ায় অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে সাজা ও জরিমানার ব্যবস্থা রয়েছে। স্নাতকোত্তরের গবেষণামূলক প্রবন্ধে চৌর্যবৃত্তি করার দায় স্বীকার করে চলতি বছর জানুয়ারি মাসে পদত্যাগ করেছেন নরওয়ের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষামন্ত্রী সান্দ্রা বোর্চ। এক সংবাদ সম্মেলনে সান্দ্রা বলেছেন, ‘আমি খুব বড় ভুল করেছি। আমি সূত্র উল্লেখ না করেই বিভিন্নজনের লেখা গবেষণাটিতে ব্যবহার করেছি। আমি দুঃখিত।’ এর আগে নরওয়ের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সান্দ্রা বোর্চের চৌর্যবৃত্তি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যাতে বলা হয়, ২০১৪ সালে তার স্নাতকোত্তরের গবেষণামূলক প্রবন্ধের সঙ্গে দুই শিক্ষার্থীর গবেষণার মিল রয়েছে। তাদের গবেষণা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেননি সান্দ্রা। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক্সে প্রথম তুলে আনেন এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেছেন, ‘সান্দ্রা একটি গবেষণা থেকে হুবহু শব্দ নিয়েছেন এবং এমনকি তিনি সেখানকার ভুলগুলোও সংশোধন করেননি।’
শুক্রবার কালবেলায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গবেষণা কাজে তথ্য চুরির তালিকায় রয়েছেন তিন শিক্ষক ও এক শিক্ষার্থী। অধ্যাপক মো. দাউদ খান ও রেবেকা সুলতানার বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই বিভাগের অধ্যাপক জসিম উদ্দিনও গবেষণা প্রবন্ধে চৌর্যবৃত্তির আশ্রয় নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তার অধীনে এমফিল গবেষণায় নিয়োজিত শিক্ষার্থী তাসলিমা আক্তারের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ উঠেছে। এ শিক্ষার্থীকেই বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছেন জসিম উদ্দিন। বিষয়টি নিয়ে দর্শন বিভাগের ভেতর ও বাইরে তুলকালাম চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘দেব সেন্টার ফর ফিলোসোফিক্যাল স্টাডিজ’-এর ফিলোসোফি অ্যান্ড প্রগ্রেস জার্নালে অধ্যাপক জসিম উদ্দিনের ‘দ্য মাধ্যমিকা ডায়ালেক্টিক: এন অ্যানালাইসিস’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় ১৯৯০ সালে।গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি ঠেকাতে নীতিমালা প্রবর্তন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে গবেষণার নামে চৌর্যবৃত্তির একাধিক ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ এ উদ্যোগ নিয়েছে। চৌর্যবৃত্তি বা প্লেজারিজম প্রমাণিত হলে দায়ী ব্যক্তিকে জরিমানা সাপেক্ষে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাণ্ডুলিপি সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে সংশোধনে ব্যর্থ হলে সামঞ্জস্যের চার লেভেল অনুযায়ী জরিমানা, পদাবনতি ও ডিগ্রি বাতিল; এমনকি চাকরিচ্যুতিসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
আমরা মনে করি, প্লেজারিজম একটি গর্হিত কাজ। অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো, সমাজের জ্ঞানী-গুণীরাই এর সঙ্গে যুক্ত। একটি জাতির লেখক, সাংবাদিক, গবেষক ও বুদ্ধিজীবীরা যদি চৌর্যবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত হন, তাহলে সাধারণ মানুষের ভরসা ও দাঁড়ানোর কোনো জায়গা থাকে না। নীতিমালা কার্যকরের এ ধরনের চৌর্যবৃত্তি দমন করা কঠিন। আমাদের প্রত্যাশা, গবেষণার সঙ্গে যুক্তরা নিজেদের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন।