একটা সময় বাংলাদেশ নারী দলের জয়ের সঙ্গে মিশে ছিল সালমা খাতুন, রুমানা আহমেদ, জাহানারা আলমদের নাম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু পাল্টেছে। মারুফা আক্তার, রাবেয়া খানদের মতো উদীয়মানরা এসে পারফর্ম করছেন। ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের ম্যাচসেরা তো সেই মারুফাই। তবে কি এটা নতুন বাংলাদেশ? অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি বলছেন, ‘সবাই তো সব সময় খেলবে না।’ বিস্তারিত আছে পুরো সাক্ষাৎকারে; নিয়েছেন ওমর ফারুক
প্রশ্ন: ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক জয়?
জ্যোতি: এ দলটি নিয়ে অনেকদিন ধরেই কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি। দেখা যাচ্ছে, যেমন চাওয়া-পাওয়া থাকে, তেমন পাচ্ছিলাম না। লম্বা সময়ের পরিশ্রম অন্তত একটা জায়গায় এসে ইতিবাচকভাবে দেখা গেছে, সেজন্য আমি এবং আমরা খুবই খুশি।
প্রশ্ন: মিরপুরে খেলা ও সংবাদমাধ্যমের দায়বদ্ধতা?
জ্যোতি: মিডিয়া যেভাবে ছেলেদের তুলে ধরে বা যেভাবে খবর প্রচার করে, সেভাবে কি মেয়েদের করে? মিডিয়ার মাধ্যমেই তো মানুষ জানতে পারে, কী হচ্ছে না হচ্ছে; অন্যথায় তো পারে না। আমাদের সরাসরি সম্প্রচার করাও হয় না এবং ঢাকার বাইরে তেমন ক্যামেরাও যায় না। ঢাকায় হওয়ায় মিডিয়ায় প্রচারণা বেশি পাওয়া যায়। আমাদের জন্য মিডিয়া কাভারেজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনারা যত বেশি তুলে ধরবেন, তত বেশি আমরা এগিয়ে যাব। মিরপুরে খেলা হওয়ায় মেয়েরা তাদের শক্তি-সামর্থ্য কেমন তা জানানোর কাজটি ভালোভাবেই করেছে। বিশ্বাস করি, সামনের সিরিজে এর চেয়ে বেশি হবে। আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে এখানে খেলতে চেয়েছি, মনে হয় হয়ে যাবে তা।
প্রশ্ন: একাদশে একসঙ্গে তিন লেগস্পিনার?
জ্যোতি: প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আমরা সালমা আপুসহ দুজন অফস্পিনার ও একজন লেগস্পিনার ব্যবহার করি। দেখলাম অফস্পিনে ওরা (প্রতিপক্ষ) বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিল, লেগস্পিনে স্ট্রাগল করছিল। তখন আমরা পরিকল্পনা পরিবর্তন করি, যদি আরেকজন লেগস্পিনার খেলাই কেমন হয়। স্বর্ণা নিয়মিত না হলেও রাবেয়া, ফাহিমা আপু নিয়মিত লেগস্পিনার। আমি ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বাড়তি লেগস্পিন খেলিয়ে দেখলাম, ওরা আসলেই স্ট্রাগল করেছে।
প্রশ্ন: কোনো বিভাগের উন্নতি চোখে পড়েছে?
জ্যোতি: অবশ্যই ফিল্ডিং। বোলিং সব সময়ই ভালো করে, দু-একটা ম্যাচ এদিক-ওদিক হয়। কিন্তু ফিল্ডিংটা আমার কাছে মনে হয় চোখে দেখার মতো উন্নতি হয়েছে। ১৮০-২০০ রান করেও ফিল্ডিংয়ের জন্য পিছিয়ে যাচ্ছিলাম। তাই ফিল্ডিংয়ে বেশি কাজ করছি। আমরা জানতাম, যদি ফিল্ডিংয়ে উন্নতি করি, বোলাররা আরেকটু চাপমুক্ত থাকতে পারেন।
প্রশ্ন: ২০০-২২০ রান করে জেতার আত্মবিশ্বাস?
জ্যোতি: অবশ্যই। যে কোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে আমরা ব্যাটাররা যদি ২০০-এর বেশি রান করতে পারি, আমার বিশ্বাস, আমাদের বোলিং ও ফিল্ডিং ভালো করলে সেটা মোকাবিলা করতে অনেক বেশি সহায়তা করবে। জিতিয়ে দেবে বলব না; কিন্তু অনেক কিছু সহজ করে দেবে।
প্রশ্ন: তাহলে বোলিং বিভাগ অধিনায়কের স্বস্তি?
জ্যোতি: এবার দেখবেন, বিশেষ করে, স্পিনাররা বেশি ভালো করেছে। মারুফা একমাত্র ওখানে পেস বোলার ছিল; সেও দুই সংস্করণে দুর্দান্ত করেছে। যখন বোলার ধারাবাহিকভাবে ভালো করতে থাকে, তখন সে নিজেও আত্মবিশ্বাসী থাকে এবং আমি অধিনায়কও আত্মবিশ্বাসী থাকি।
প্রশ্ন: টিম ম্যানেজমেন্টের ভূমিকা?
জ্যোতি: নির্বাচক তো নতুন এসেছেন। এটা তাদের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ছিল, যতটুকু মনে হয় ভালো করেছেন। তারা তো অনেক অভিজ্ঞ। ম্যানেজমেন্টের কথা বলব। আমাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আরও ভালো হয়েছে, এ কারণে সবকিছু সহজ হয়েছে। দেখুন দলের যখন একটা ফল হয়, তখন সবকিছু একসঙ্গে কাজ করে। আর সবকিছু যখন পরিকল্পনামতো এগোয়, তখন ফলও আসে—এটাই তো স্বাভাবিক।
প্রশ্ন: এ দলটি কি নতুন বাংলাদেশ?
জ্যোতি: সবাই তো সব সময় খেলবে না। বাংলাদেশ ক্রিকেটে সালমা, জাহানারা, রুমানাদের অনেক অবদান। অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এখনো তাদের জন্য বাংলাদেশ দলের দরজা খোলা। পাশাপাশি নতুন খেলোয়াড়দের সুযোগ করে দেওয়ার কারণ হচ্ছে, একটা সময় তো তাদেরই খেলতে হবে। যখন একটা দলে কয়েকজন সিনিয়র থাকে, তখন জুনিয়রদের রাখা হলে তারা খুব স্বাধীনভাবে খেলতে পারে। কারণ চাপটা থাকে সিনিয়রদের ওপর। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সিনিয়ররা থাকতে থাকতেই জুনিয়রদের দলে সুযোগ দেওয়া ভালো। এতে জুনিয়ররা চাপমুক্ত থেকে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ রাখার সময় ও সুযোগ পায়। আমাদের এখন যে দলটি আছে, বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। যত বেশি ম্যাচ খেলব, তত বেশি অভিজ্ঞতা হবে। যার ফল পাব বিশ্বকাপে।
প্রশ্ন: ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ?
জ্যোতি: বিশ্বকাপ সামনে রেখেই বিসিবি সব ধরনের পরিকল্পনা সাজিয়েছে। আমাদের প্রত্যেকবার একটা ক্ষোভ ছিল, প্রস্তুতি ছাড়াই বড় টুর্নামেন্ট খেলতে যেতাম। এটা সত্য; এটা স্পষ্ট। এমনও হয়েছে, আমরা বিশ্বকাপ খেলছি কোনো সিরিজ বা ম্যাচ না খেলেই। তখন তো
ম্যাচ-সিরিজ কিছুই ছিল না। এখন আমাদের দাবিই ছিল এমন, বড় কোনো টুর্নামেন্ট খেলার আগে আমরা যেন প্রয়োজন অনুযায়ী ম্যাচ খেলার সুযোগ পাই, প্রস্তুতি যেন সেরা থাকে। আপনি যখন কোনো কিছুকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নেবেন, তখন অন্তত
৬০-৭০ শতাংশ হলেও এগিয়ে থাকবেন।
প্রশ্ন: নারী বিপিএল পরিকল্পনা?
জ্যোতি: ভালো খেললে সবকিছু আপনাআপনি আসবে। আমাদের দল ভালো কিছু করছে বলেই সবকিছু হচ্ছে, হবে। বিপিএল খেলার ইচ্ছা আমাদের সবসময় ছিল। ভারত শুরু করল, আমাদের কেন হচ্ছে না! এমন প্রশ্নও জাগত। কিন্তু এটাও তো ঠিক, চাইলেই তো হবে না। অনেক বাস্তবায়নের সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত। সেসব মানিয়েই করতে হয়। তবু বলব, নারী বিপিএল করার সিদ্ধান্তটা ভালো। শুরু হলে সবথেকে বেশি খুশি হব আমি।
প্রশ্ন: স্কুল ক্রিকেট কি এ সিরিজের সাফল্য?
জ্যোতি: বালিকাদের স্কুল ক্রিকেট নিয়ে বিসিবির আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল বলে জানি। এখন আমরা যখন ভালো করছি, এখন আরও খেলোয়াড় লাগবে। সংখ্যা বেশি হলে অবশ্যই প্রতিভাবান ক্রিকেটার মিলবে। পক্ষান্তরে তাতে দেশের ক্রিকেটেরই সত্যিকারের লাভ হবে।
মন্তব্য করুন