মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের স্মৃতিটা ভুলে যাওয়ার কথা নয়। এই তো বছর দুয়েক আগেই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জিতে ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশ। এরপর আর কোনো টেস্ট জিততে পারেনি তারা। তবে সেই সুখকর স্মৃতি এখনো আত্মবিশ্বাসী রাখছে তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজদের। এবার একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে নিজেদের ঘরের মাঠে আরও একটি টেস্ট জয়ের সামনে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। সিলেটে আজ আর মাত্র ৩ উইকেট নিলেই ঘরের মাঠে প্রথমবার কিউইদের হারানোর গল্প লিখবে স্বাগতিকরা।
সিলেট টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে চালকের আসনে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৩১ রানের লিড পাওয়া বাংলাদেশ গতকাল ১১৩ রান তুলতেই কিউইদের ৭ ব্যাটারকে সাজঘরে ফিরিয়েছে। জয় থেকে সামান্য পথ দূরে শান্ত-মিরাজরা। গতকাল দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসা তাইজুল ইসলামের কণ্ঠে মিলেছে স্বস্তির ঢেকুর, ‘সকালেও উইকেট এত কঠিন মনে হচ্ছিল না। আমাদের বোলাররা অনেক দুর্দান্ত বোলিং করেছে। ওদের বড় ব্যাটারদের দ্রুত হারানোয় চাপে পড়েছে। বলব না উইকেট খুব খারাপ।’ পুরো দিনে মোট ১৪ উইকেট নিয়েছে বোলাররা। সে জায়গা থেকে উইকেট দ্বিতীয় সেশনের পর থেকেই বোলারদের সহযোগী হয়ে উঠছে বলতেই হয়। আজও ব্যাটারদের জন্য আরও বেশি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে সিলেটের উইকেট। সে জায়গা থেকে প্রথম সেশনেই বড় জয় নিশ্চিতের সুযোগ স্বাগতিকদের।
কিউইদের বিপক্ষে আগের দুই টেস্টের ফল সমানে সমান। এবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম মৌসুমের শিরোপাজয়ীদের বিপক্ষে জয়ের খুব নিকটেই বাংলাদেশ। বড় দলের বিপক্ষে জিততে পারলে সেটা অন্যরকম হয়। তাইজুল বলছেন দলই বদলে যায়। বাঁহাতি এই স্পিনারের ভাষ্য, ‘বড় দলকে হারানোর মজাই আলাদা। এখনো জিতিনি, তবে ইনশাআল্লাহ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। বড় দলকে হারালে আত্মবিশ্বাস বাড়ে, দল বদলে যাওয়ার আভাস থাকে।’ এমন জয়ের পর পরের ম্যাচগুলোতেও আত্মবিশ্বাস বাড়ে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পুরো বছর যেন এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে পারি। কয়টা ম্যাচ জিতব কি জিতব না, জানি না; তবে বাংলাদেশকে যেন ভালো কিছু দিতে পারি।’
নিয়মিত অধিনায়ক ও দলের অন্যতম সেরা বোলার সাকিব আল হাসান নেই। তাই তো বল হাতে সিলেটে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাইজুল। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও নিলেন সমান সংখ্যক। সাকিব না থাকলেও নিজের পরিকল্পনা ঠিকই কাজে লাগান জানিয়ে তাইজুল বলেছেন, ‘আমি আমার পরিকল্পনায় থাকি। সাকিব ভাই থাকুক আর না থাকুক, আমার সঙ্গে আরও স্পিনাররা আছে। গেম বাই গেম পরিকল্পনা এরকম হয়—কেউ উইকেট নেবে, কেউ রান আটকে রাখবে। আমি রান আটকালে হয়তো মিরাজ বা নাঈম উইকেট পেত। যে-ই থাকুক আর না থাকুক, আমরা ভালো খেলছি কি না, এটাই জরুরি।’ বছরের বেশিরভাগ সময়ই টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে ভাবতে হয় বাঁহাতি এই স্পিনারের। সাদা বলের সংস্করণে জাতীয় দলে খুব একটা জায়গা হয় না তার। সেজন্যই টেস্ট ঘিরে বেশি স্বপ্ন দেখেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেট বাংলাদেশকে বিশ্বের মধ্যে অন্তত পঞ্চম স্থানে দেখতে চান তাইজুল। অবশ্য চ্যালেঞ্জটা সহজ নয়, সর্বশেষ দুই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সার্কেলে তলানিতে পড়েছিলেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।