সরকারের সাড়ে ১১ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে গরমের মৌসুমে রমরমা ব্যবসা করা নোহা ফ্যান মোটর ইন্ডাস্ট্রিজ। মূলধনি যন্ত্রপাতি সুবিধায় পণ্য আমদানি করে বেআইনিভাবে অন্য কাজে ব্যবহার করেছে তারা। এ ছাড়া অবৈধ সুবিধা নিয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কাস্টমস মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেটের এক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। আর ফাঁকি দেওয়া এ রাজস্ব আদায়ে সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটকে আইনি ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, নোহা ফ্যান মোটর ইন্ডাস্ট্রিজ ২০২০ এবং ২০২১ সালে মূলধনি যন্ত্রপাতি হিসেবে পার্টস অব মোটর (রটর), পার্টস অব মোটর (ক্যাসিং), পার্টস অব মোটর (স্ট্যাটর), স্ট্যাটর মোটর কয়েল, রটর ইউথ রিভিলিং মেশিন মোটর আমদানি করে। বিদেশ থেকে নিয়ে আসা ৪৮টি পণ্য চালান এনবিআরের এসআরও সুবিধায় খালাস করে প্রতিষ্ঠানটি। পরে নিরীক্ষায় দেখা গেছে, নোহা ফ্যান মোটর ইন্ডাস্ট্রিজ এই এসআরও শর্ত পালন করেনি। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধ রেয়াতি সুবিধাও নিয়েছে। এতে সরকারের ১১ কোটি ৬৩ লাখ ৮০ হাজার ১৫৩ টাকা শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এনবিআরের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নোহা ফ্যান মোটর ইন্ডাস্ট্রিজ ২০২০ সালের ৩ জুনের ১২১ এবং ২০২১ সালের ১১৩ নম্বর প্রজ্ঞাপনের অধীনে মূলধনি যন্ত্রপাতি হিসেবে এসব পণ্য আমদানি করে। এই প্রজ্ঞাপনের শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, আমদানিকৃত বা আমদানি মেশিনারি প্লান্ট, যন্ত্রপাতি বা যন্ত্রাংশ হস্তান্তর বা মালিকানা পরিবর্তন হলে সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী এই আমদানিকারক শুল্ক-কর পরিশোধ করবেন। নোহা ফ্যান মোটর ইন্ডাস্ট্রিজ এই ৪৮ পণ্য চালানগুলো মূলধনি যন্ত্রপাতি হিসেবে খালাস করে, তা বেআইনি এবং মিথ্যা ঘোষণার শামিল। এতে সরকারের সাড়ে ১১ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। আর সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী, মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি করা হলে ন্যূনতম ২০০ থেকে ৪০০ শতাংশ জরিমানার বিধান রয়েছে বিদ্যমান কাস্টমস আইনে। সাধারণত শিল্প প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে সরকার মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক সুবিধা দিয়ে থাকে। নোহা ফ্যান ইন্ডাস্ট্রিজ শিল্প কারখানা নির্মাণের আমদানি সুবিধা নিলেও প্রতিষ্ঠানটি শিল্প কারখানা স্থাপন করেনি। এটি বেআইনি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বেআইনিভাবে শুল্কমুক্ত সুবিধা গ্রহণ করায় কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সাড়ে ১১ কোটি টাকা আদায় করতেও বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে রাজধানীর সারুলিয়ায় নোহা ফ্যান মোটর ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানায় গিয়েও কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে তাদের ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হয়। তখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন