দেশের ভূগর্ভস্থ কূপের পানি পরিমাপে নিয়োজিত পর্যবেক্ষককে মাসে মাত্র ২৫০ টাকা সম্মানী দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। গত ৬০ বছরে ১০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫০ টাকা হয়েছে। পাউবো সম্মানী বৃদ্ধির প্রস্তাব দিলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছার অভাবে তা বাড়েনি। তা ছাড়া নিয়মিত সম্মানী না দেওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় অর্ধেক কূপের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারা দেশে ২ হাজার ২২২টি কূপ রয়েছে। এর মধ্য ১ হাজার ২৭২টি কূপের তথ্য-উপাত্ত পায় পাউবো। বাকিগুলোর তথ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে নিয়মিত সম্মানী না দেওয়ায়। তা ছাড়া এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নিজেদের জমিতে স্থাপিত এসব কূপের তথ্য মাসে চার থেকে পাঁচবার পরিমাপ করে পাউবোর কাছে ডাকযোগে পাঠান পর্যবেক্ষকরা। এ কাজের একেকজন পর্যবেক্ষককে পাউবোর পক্ষ থেকে মাসে ২৫০ টাকা দেওয়া হয়। অর্থাৎ প্রতিবার পরিমাপের জন্য ৫০ থেকে ৬২.৫০ টাকা পান একেকজন পর্যবেক্ষক, যা বর্তমান বাস্তবতায় খুবই নগণ্য।
এসব কূপের প্রায় অর্ধেকের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হতো বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে বিদেশি অর্থায়নে। পাউবোর অর্থায়নে মাসে ২৫০ টাকা দেওয়া হলেও প্রকল্পের অধীনে দেওয়া হতো ১ হাজার টাকা। কিন্তু প্রকল্পের অর্থায়ন বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে এসব কর্মকাণ্ডও বন্ধ হয়ে গেছে।
ভূগর্ভস্থ পানিবিজ্ঞান পরিদপ্তরের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক আনোয়ার জাহিদ কালবেলাকে বলেন, তিনি দায়িত্বে থাকার সময় বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় সেই প্রস্তাব বাস্তবায়িত করেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাউবো প্রতিষ্ঠার পর ১৯৬৫ সালে ৯৬টি কূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ও গুণাগুণ পরিমাপের কাজ শুরু হয়। পর্যবেক্ষকরা পাউবো বা সরকারের কর্মচারী নন। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ নির্বিঘ্ন করার জন্য যে বাড়ির আঙিনায় কূপ স্থাপন করা হয়, সে বাড়ির কোনো একজন সদস্যকে কিংবা কূপটি কোনো সংস্থার আঙিনায় স্থাপিত হলে নিকটস্থ কোনো ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এ জন্য প্রাথমিকভাবে সম্মানী চূড়ান্ত করা হয়েছিল ১০ টাকা। পরে স্বাধীন বাংলাদেশে তা বাড়িয়ে করা হয় ২৫ টাকা। ১৯৮১ সালে এই সম্মানী ২৫ টাকা বৃদ্ধি করে ৫০ টাকা এবং ২০০১ সালে আবার বাড়িয়ে ২৫০ টাকা করা হয়। এরপর দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও কয়েকবার প্রস্তাব পাঠানো হলেও অর্থ মন্ত্রণালয় গুরুত্ব দেয়নি।
নওগাঁর সাপাহার উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের কূপ পর্যবেক্ষক সাইফুল আলম। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘কোনো মাসে চারবার আবার কোনো মাসে পাঁচবার পানি পরিমাপ করে তথ্য দিতে হয়। সরকারের কত খাতে কত টাকা ব্যয় হয়, অথচ আমাদের সম্মানী বাড়ে না।’ সাইফুল আলম নামে আরেকজন পর্যবেক্ষক স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘১৯৬৫ সাল থেকে কাজ করে আসছি। কিন্তু ২০০১ সালে সেই যে ২৫০ টাকা করা হলো, এখনো তাই চলছে।’
পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, ভাতা বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয়ে যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, সেখানে একেকটি একক কূপ পর্যবেক্ষণের জন্য মাসিক ভাতা ১ হাজার ৮ টাকা এবং ১১০ ইউনিট ক্লাস্টার্ড কূপ (এক জায়গায় বিভিন্ন গভীরতায় চারটি করে কূপ) পর্যবেক্ষণের জন্য ১ হাজার ৫১২ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। পাউবো মোট ১ হাজার ৭৮২টি কূপ পর্যবেক্ষণের জন্য বছরে ব্যয় ধরেছিল ৩.০৫ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় তাতে সাড়া দেয়নি। সর্বশেষ ২০২১ সালে প্রস্তাব করলে মন্ত্রী ও সচিব আশ্বাস দেন, কিন্তু আজও কাজ হয়নি।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) জহিরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘বর্তমান বাস্তবতায় পর্যবেক্ষকদের সম্মানী বৃদ্ধি করা উচিত। খুব শিগগির এ বিষয়ে পাউবোর মাধ্যমে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’