ধুনট উপজেলার যমুনার বরইতলী চরের বাসিন্দা ওসমান গনি। দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। অর্থাভাবে ভালো কোনো চিকিৎসকের কাছে যেতে পারছেন না। তা ছাড়া এখান থেকে শহরের দূরত্ব ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার। তাই শহরে যাওয়ার খরচও অনেক। আর যেখানে দুবেলা খাবারের নিশ্চয়তা নেই, সেখানে চিকিৎসা ব্যয় বহন তো দুঃস্বপ্নের মতো। এভাবেই দিন কাটছিল। হঠাৎ শুনলেন, বাড়ির কাছের যমুনাঘাটে ভিড়েছে জাহাজ হাসপাতাল। পরে সেখানে চিকিৎসা ও ওষুধপথ্য নিয়ে এখন বেশ সুস্থ আছেন।
শুধু ওসমান গনিই নন, ভাসমান এই জাহাজ হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নে পারুল, চিতুলিয়া গ্রামের জয়নাল ও মহর আলীরা।
বগুড়ার ধুনটে যমুনা পাড়ের ভাসমান হাসপাতালে একরকম বিনামূল্যেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সেবা দিচ্ছে লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ ভাসমান হাসপাতাল। এখানে মাত্র ১০ টাকায় নারী এবং ২০ টাকায় পুরুষদের নানা রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই টাকাতেই বরাদ্দ চিকিৎসকের ফি, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধ। মুমূর্ষু রোগীদের আনা-নেওয়ার কাজে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকে নৌ অ্যাম্বুলেন্স। সবসময় সেবা মেলে জরুরি বিভাগে। ব্যবস্থা রয়েছে ডিজিটাল এক্স-রে, ইসিজিসহ সবধরনের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার। এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে বেসরকারি সংগঠন ফ্রেন্ডশিপ ও ইউনিলিভার বাংলাদেশ। আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে ইউনিলিভার।
যমুনা পাড়ের চর অঞ্চলের মানুষের ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে এই ভাসমান হাসপাতাল। বন্যায় দেওয়া হয় বিশেষ সেবা। শুষ্ক মৌসুমেও কার্যক্রম জারি থাকে।
ভাসমান এই হাসপাতালটিতে শুধু চরাঞ্চল নয়, চিকিৎসা নেন বিভিন্ন স্থানের নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ানসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৩৬।
ভাণ্ডারবাড়ি গ্রামের জাহিদ হাসান সাগর চোখের সমস্যা নিয়ে এসেছেন হাসপাতালে। তিনি বললেন, এখানে অল্প টাকায় চিকিৎসা সেবা পাচ্ছি। এ ধরনের হাসপাতাল আগে দেখিনি। হাসপাতাল খুঁজতে হয় না হাসপাতালই রোগীদের দুয়ারে পৌঁছে যাচ্ছে।
লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ ভাসমান হাসপাতালের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (স্বাস্থ্য) ডা. শফিউল আজিম জানান, চরের মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। ওষুধের দোকানও নেই। তাই চরবাসীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। ফ্রেন্ডশিপ অলাভজনক সংস্থা। এই জাহাজ হাসপাতাল এক জায়গায় তিন চার মাসের বেশি থাকে না। প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০ মানুষ এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চোখের সমস্যাজনিত রোগীর সংখ্যাই বেশি।