দুই বছর আগে আজকের দিনে রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারের কুইন টাওয়ারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে মারা যান ২৬ জন। বিস্ফোরণের পর থেকে ভবনটি জনাকীর্ণ এলাকায় পরিত্যক্ত হয়ে ফের মৃত্যুর ফাঁদ হয়ে আছে। ঝুঁকিপূর্ণ বলে ভবনটি সংস্কারসহ মালিকপক্ষকে কিছু সুপারিশ করে রাজউক। তবে দুই বছর হয়ে গেলেও ভবন মালিক থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বিস্ফোরণের ঘটনায় ২০২৩ সালের ৯ মার্চ বংশাল থানায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে মামলা করে পুলিশ। সে মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। মামলায় দুই ভবন মালিকসহ কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও সবাই জামিনে রয়েছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, কয়েকটি ভবনের সঙ্গে গা-ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে বিস্ফোরণ হওয়া কুইন টাওয়ারের ভবনটি। ৭ তলার এই ভবনটিতে কেউ থাকে না। ভবনের নিচে ফুটপাতে সারি সারি ব্যাগ ঝুঁলিয়ে বিক্রি করছেন এক বিক্রেতা। পাশে ফুটপাতে আরও কয়েকটি দোকান। ভবনটির সামনে গুলিস্তানের এই সড়কটি সবসময় জনাকীর্ণ অবস্থায় থাকে। এজন্য বিস্ফোরণের সময় ভবনের সামনে থাকা পরিবহনসহ আশপাশের ফুটপাতের দোকানে বহু মানুষের প্রাণ ঝরে। ঝুঁকিপূর্ণ পরিত্যক্ত এই ভবন সংস্কার বা ভেঙে না ফেলায় মৃত্যুফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, রাজউক ওই ভবন নিয়ে একটা প্রতিবেদন তৈরি করেছিল। ভবন ভেঙে ফেলার কোনো সুপারিশ ছিল না। কিছু সংস্কারে সুপারিশ করা হয়েছিল। পরে তারা সেটা পূরণ করেছিল কি না, জানা নেই। রেক্টোফিট না করায় ভবন ১০০% ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে।
মামলার বর্তমান অবস্থা: ২০২৩ সালের ৭ মার্চ বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারের নর্থ সাউথ রোডে কুইন টাওয়ারে বিস্ফোরণে ২৬ জন মারা যাওয়ায় পরদিন অবেহলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে বংশাল থানায় মামলা করেন উপপরিদর্শক পলাশ সাহা। এরপর ভবনের মালিক দুই ভাই ওয়াহিদুর রহমান ও মতিউর রহমানসহ ভবনের বেজমেন্টের স্যানিটারি ব্যবসায়ী মিন্টু গ্রেপ্তার হন। আদালতে বংশাল থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখা সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তার তিন আসামিই বর্তমানে জামিনে আছেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত শুরু করে বংশাল থানা পুলিশ। এরপর মামলার তদন্তভার ডিবি পুলিশকে দেওয়া হয়।
বর্তমানে মামলার তদন্তে রয়েছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। সর্বশেষ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ছিল। কিন্তু ওই দিন প্রতিবেদন দাখিল না করতে পারায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্রের আদালত আগামী ৮ এপ্রিল নতুন দিন ধার্য করেছেন। এ পর্যন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ২০ দফা সময় নেওয়া হয়েছে।
মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসির বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) এস এম রাইসুল ইসলাম বলেন, ‘এ মুহূর্তে মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। বাড়ির মালিক ভবনের গ্যাসের লাইনকে কমার্শিয়াল থেকে ডোমেস্ট্রিক লাইনে রূপান্তরের জন্য তিতাসের কাছে আবেদন করেন। এরপর তা ডোমেস্ট্রিক লাইনে রূপান্তর করা হয়। গ্যাসলাইন থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এটা নিয়ে তিতাস কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু ফাইলটা এখনো দেয়নি তারা। তারা চিঠি দিয়েছে, ফাইলটা খুঁজে পাওয়া যাইনি। তিতাস কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করছে না। এ কারণে তদন্ত অনেকটা আটকে আছে।’
মামলার বিষয়ে আসামি ভবনের দুই মালিক ওয়াহিদুর রহমান ও মতিউর রহমানের আইনজীবী আব্দুল আওয়াল কালবেলাকে বলেন, তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। ওয়ারিশসূত্রে ভবনের মালিক শুধু আসামি দুজনই নয়। আরও মালিক আছে। এ ছাড়া ঘটনার সময় দুই মালিক ভবনে ছিলেন না। সুষ্ঠু তদন্ত হলে আশা করছি তারা নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। আর ভবনটি অনেক পুরোনো। তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সরকারি অনুদান পায়নি, দাবি নিহতদের পরিবারের: নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে তাৎক্ষণিক আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল ঢাকা জেলা প্রশাসন। ঘোষণা অনুযায়ী, তাৎক্ষণিক নিহতদের পরিবারকে ৫০ হাজার করে, গুরুতর আহতদের ২৫ হাজার করে ও তুলনামূলক কম আহতদের ১৫ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু ৭ মার্চের সেই বিস্ফোরণের পর শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে দুই লাখ এবং আহতদের ৫০ হাজার করে টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তা আর কেউ পায়নি বলে জানিয়েছেন নিহত পরিবারের স্বজনরা।
মন্তব্য করুন