আধুনিক জীবনে শারীরিক বিকৃত ভঙ্গির কারণে দেখা দিচ্ছে মেরুদণ্ডসহ বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা, যার মধ্যে ঘাড়ব্যথা অন্যতম। অনেক জটিল কারণেও ঘাড়ব্যথা হতে পারে। বিভিন্ন পেশাজীবী, যারা সামনে ঝুঁকে কাজ করেন, তারা সহজেই ঘাড়ব্যথায় আক্তান্ত হন। যারা ঘাড়ে, মাথায় বা কাঁধে ভারী জিনিস বহন করেন তাদের ঘাড়ব্যথার প্রবণতা বেশি।
সমস্যার কারণ আঘাতজনিত: ঘাড়ের পেশি ও লিগামেন্টে হঠাৎ টান অথবা চাপের কারণে; সঠিকভাবে না বসার কারণে ঘাড়ের হাড়গুলোর বক্রতার অস্বাভাবিক পরিবর্তন; ঘাড়ের মেরুদণ্ডে ডিস্কজনিত সমস্যা, ডিস্কের ওপর অতিরিক্ত চাপ, ডিস্কের স্থানচ্যুতি, মেরুরজ্জু বা নার্ভের ওপর চাপ; বাতজনিত; বয়সজনিত পরিবর্তন; অত্যধিক মানসিক চাপ ইত্যাদি কারণে ঘাড়ব্যথা হতে পারে।
উপসর্গ: ঘাড়ব্যথা কাঁধে, বুকে, মাথার পেছনে, বাহু, কনুই কিংবা হাতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ঘাড়ে ব্যথা, সকালে ও শেষ রাতে ঘাড় জ্যাম হয়ে থাকা, নুইতে কষ্ট হওয়া, হঠাৎ তীব্র ঘাড়ব্যথা, ঘাড় ঘুরাতে কষ্ঠ হওয়া, ঘাড় একদিকে বেঁকে যাওয়া। ঘাড় থেকে হাতের আঙুল পর্যন্ত ঝিঝি করা বা অবশ মনে হওয়া বা বোধশক্তি কমে যাওয়া। কিছুক্ষেত্রে, হাত-পা দুর্বলতা, মাংস শুকিয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। অনেক সময় ঘাড়ে ব্যথার পাশাপাশি মাথা ঘুরানোর মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
কারা ঝুঁকিতে: যারা সারাক্ষণ ঘাড় নুইয়ে কাজ করেন; যারা মাত্রাতিরিক্ত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ব্যবহার করেন; যারা ঘাড়ে, মাথায় বা কাঁধে ভারী জিনিস বহন করেন; যারা অত্যধিক ভ্রমণ করেন; যারা উঁচু বালিশ ব্যবহার করেন।
সমাধানের উপায়: ঘাড়ের ব্যথায় সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার পাশাপাশি প্যাথলোজিক্যাল পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন। বেদনানাশক ওষুধ, পেশির রিল্যাক্সেন্ট ওষুধ উপকারী হতে পারে। তবে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। কিছু ক্ষেত্রে ইন্টারভেনশনাল চিকিৎসা দেওয়া হয়। এমনকি, মারাত্মক ক্ষেত্রে সার্জিক্যাল চিকিৎসারও প্রয়োজন হতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়: সঠিক দেহভঙ্গি ও সুস্থ জীবনধারা মেনে চলতে হবে। শক্ত, সমান বিছানা, পাতলা তোশক, মাঝারি আকৃতির এক বালিশ ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে, সার্ভাইক্যাল কনটোর পিলো ব্যবহার করা যাবে। ঘাড় সোজা রেখে চেয়ারে বসতে হবে, টেলিভিশন দেখা বা কম্পিউটারে কাজ করার সময় চোখ মনিটরের লেবেলে রাখতে হবে। প্রতিদিন কিছু সময় সূর্যের আলোতে থাকা এবং খাবারের তালিকায় ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও বিভিন্ন খনিজ লবণযুক্ত খাবার রাখতে হবে।
ডা. প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী
ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চ অ্যান্ড হসপিটাল
চেম্বার: আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর-৬, ঢাকা
মন্তব্য করুন