দেশে টাইফয়েডের প্রাদুর্ভাব এখনো বিদ্যমান। প্রতি বছর অন্তত ৫ লাখের বেশি মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগই শিশু। এদিকে, টাইফয়েডের চিকিৎসায় যেসব অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে, এর একটা অংশ হয়ে পড়েছে অকার্যকর। ফলে ওষুধ প্রতিরোধী টাইফয়েডের প্রকোপ দিনদিন বাড়ছে। রোগটিতে আক্রান্ত হলে আর্থিক ক্ষতি, দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতা এবং মৃত্যুও ঘটে। টাইফয়েড থেকে শিশুদের রক্ষায় সরকার ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী প্রায় ৫ কোটি শিশু ও কিশোরকে বিনামূল্যে এক ডোজের টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) নিশ্চিত করতে চায়।
আজ শুরু হবে টিকাদান। এক ডোজের এই টিকা টাইফয়েড প্রতিরোধে ৯৫ শতাংশের বেশি সুরক্ষা দিতে সক্ষম। বিনামূল্যের হওয়া টিকার প্রতি সাড়া কম লক্ষ করা গেছে। গত আগস্টে শুরু হওয়া নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় মাত্র দুই কোটিরও কম শিশু অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সরকার টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে শিথিলতার ঘোষণা দিয়েছে। নিবন্ধন ছাড়াও নেওয়া যাবে টাইফয়েডের টিকা। তবে নিবন্ধন ছাড়া ভ্যাকসিন নেওয়ার পর টিকা সনদ পেতে জটিলতা তৈরি হবে। তাই নিবন্ধন করতে উদ্বুদ্ধ করছেন তারা। তাদের ভাষ্যমতে, টাইফয়েডের টিকায় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের প্রায় ২১টির বেশি দেশে এই টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবুও দেশে বৃহৎ পরিসরে ৫ কোটি শিশুকে একযোগে টিকার আওতায় নিয়ে আসা চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ কাজ সফল হবে।
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) সূত্রে জানা গেছে, এক ডোজের ইনজেকটেবল এই টাইফয়েড টিকা তিন থেকে সাত বছর পর্যন্ত সুরক্ষা প্রদান করবে। গ্যাভি ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের সহায়তায় বাংলাদেশে আনা হয়েছে এই ভ্যাকসিন। অনলাইন নিবন্ধনের জন্য ইপিআইর ভ্যাকসিন নিবন্ধনের ওয়েবসাইটে গিয়ে ১৭ সংখ্যার জন্মনিবন্ধন নম্বর ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে নিবন্ধন করা যাবে। জন্মনিবন্ধন থাকলে ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোডও করা যাবে। গত ১ আগস্ট থেকে নিবন্ধন শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক কোটি ৭০ লাখের বেশি শিশু টিকা প্রাপ্তির জন্য নিবন্ধন করেছে। কর্মসূচি চলাকালেও টিকার জন্য অনলাইনে নিবন্ধন করা যাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, টাইফয়েড জ্বর স্যালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি সংক্রমণ, যা দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। উপসর্গের মধ্যে থাকে দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, ক্ষুধামন্দা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া। প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণ অস্পষ্ট থাকায় অনেক সময় টাইফয়েড শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। দ্য গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজের সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৪ লাখ ৭৮ হাজার রোগী আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মৃত্যু হয় ৮ হাজার। যার ৬৮ শতাংশই শিশু। শিশুদের মধ্যে টাইফয়েড আক্রান্তের হার বেশি।
আজ রোববার একযোগে সারা দেশে শুরু হওয়া টাইফয়েডের টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। আজিমপুর স্যার সলিমুল্লাহ এতিমখানায় তিনি এই কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। এ সময় আরও উপস্থিত থাকবেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। একই দিন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে উদ্বোধন করবেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। এ ছাড়া রাজধানীর তেজগাঁও থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঢাকা জেলার টাইফয়েডের টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান।
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) উপপরিচালক মোহাম্মদ শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, বিনামূল্যে ৪ কোটি ৮৯ লাখ শিশুকে টাইফয়েডের টিকাদানের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১ কোটি ৭০ লাখ শিশু টিকার জন্য ভ্যাক্সইপিআই ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করেছে। বুধবার এক দিনেই ৭ লাখ শিশুর নিবন্ধন হয়েছে।
মন্তব্য করুন