

অ্যানথ্রাক্স মানুষের মধ্যে কীভাবে ছড়ায়: মানুষ আক্রান্ত হয় সাধারণত মৃত বা আক্রান্ত পশুর লালা, রক্ত, হাড্ডি, চামড়া বা পশম ও মাংসের সংস্পর্শে এলে। এমনকি আক্রান্ত পশুর মাংস স্পর্শ বা নাড়াচাড়ার মাধ্যমেও রোগটি ছড়াতে পারে। আক্রান্ত পশুর চামড়া থেকে ট্যানারিতে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে ছড়াতে পারে। তাই কসাই, খামারি ও ট্যানারি কর্মীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। আক্রান্ত পশুর মাংস ফ্রিজে রাখলেও অ্যানথ্রাক্স জীবাণু থাকে। আক্রান্ত প্রাণীর মাংস আধারান্না অবস্থায় খেলে গ্যাস্ট্রোইনটেসটাইনাল অ্যানথ্রাক্স হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এমনকি রান্নার আগে যারা কাঁচা মাংসের সংস্পর্শে যান, তাদের আক্রান্তের ঝুঁকি থাকে। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে জীবানুর স্পোর ফুসফুসে ঢুকলে তা আক্রান্ত হতে পারে।
অ্যানথ্রাক্স কি ছোঁয়াচে: এটা ছোঁয়াচে নয়, মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায় না। তাই এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই এবং কেউ এ রোগে আক্রান্ত হলে তার থেকে দূরে থাকারও প্রয়োজন নেই। অ্যানথ্রাক্স শুধুই পশু থেকে মানুষে সংক্রমিত হয় এবং যারা আক্রান্ত পশুর সংস্পর্শে যায়, পশুপালন ও ট্যানারি শিল্পের সঙ্গে জড়িত, তাদের আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি।
মানুষের অ্যানথ্রাক্স কি নিরাময়যোগ্য: মানুষ অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হলে তা শতভাগ নিরাময়যোগ্য। কারণ, রোগটি সাধারণত চামড়ায় হয়। সময়মতো ওষুধ সেবনে সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়ে যায়। মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
বাংলাদেশে অ্যানথ্রাক্স: বর্তমানে আমাদের দেশে অ্যানথ্রাক্স-আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কিন্তু এটা নতুন রোগ নয়। আগেও আমাদের গ্রাম-গঞ্জে এ রোগের ছড়াছড়ি ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ১৪৯১ সালে মিশরে এ রোগের প্রাদুর্ভাব ছিল। এমনকি গ্রিস, রোম এবং ভারতবর্ষেও এ রোগ ছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীতে আমেরিকায় এ রোগ ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং ২০০৮ সালেও যুক্তরাজ্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।
আক্রান্ত গরুর মাংস চেনার উপায় আছে কি: আক্রান্ত গরুর মাংস চেনার উপায় নেই। তাই আক্রান্ত গরু জবাই করা নিষেধ। কেউ যদি অন্যায়ভাবে আক্রান্ত গরু জবাই করে, তাহলে তার ভোগান্তি পোহাতে হবে অনেককে। তবে কেউ যদি আক্রান্ত গরুর মাংস বেশি সিদ্ধ করে খেয়েই ফেলে, তাহলে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই।
পরামর্শ: গরু আসলে আক্রান্ত হওয়ার দু-চার ঘণ্টা থেকে দুই দিনের মধ্যে মারা যাবে এবং এর কোনো ওষুধ নেই। তাই গরু আক্রান্তের আগেই টিকার মাধ্যমে এ রোগপ্রতিরোধ সম্ভব। টিকা দেওয়ার পর কোনো পশুর অ্যানথ্রাক্স হওয়ার আশঙ্কা নেই। আক্রান্ত পশুর মৃত্যুর পর ৫-৭ ফুট গর্ত করে পুঁতে রাখতে হবে।
ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ
ইমেরিটাস অধ্যাপক
মন্তব্য করুন