যন্ত্রপাতি কিনতে বারবার দরপত্র আহ্বান করেও পাওয়া যাচ্ছে না ঠিকাদার। এতে ভৌত কাজ শেষ হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু করা যাচ্ছে না। এ ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) দ্বিতীয় ক্যাম্পাস স্থাপন প্রকল্পে। এ অবস্থায় প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য সময় ও ব্যয় বাড়াতে দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ মঞ্জুরি কমিশন ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়। ২২১ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নের জন্য ২০২১ সালের এপ্রিলে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আগে ১৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালে প্রকল্পের প্রথম অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু কিছু জটিলতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা পরিবর্তন হওয়ার কারণে ২ বছর পরে আবার সংশোধন করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের প্রথম সংশোধনীর মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। এরই মধ্যে প্রকল্পের আওতায় ১৩টি ভবনসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ করা হয়েছে। সব যন্ত্রপাতি এখনো বসানো সম্ভব হয়নি। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রকল্পের মেয়াদ আরও দেড় বছর ও ব্যয় ৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ৩ বছরের প্রকল্প গিয়ে ঠেকেছে প্রায় ৯ বছরে। সেইসঙ্গে ৫১ কোটি টাকা বেড়ে ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ২৩০ কোটি টাকায়।
জানা গেছে, প্রকল্পের ডেইরি প্লান্ট ও ফিশারিজ অনুষদের ইক্যুইপমেন্ট কেনার জন্য কয়েক দফা দরপত্র আহ্বান করা হলেও কোনো ঠিকাদার পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া এরই মধ্যে নির্মিত বিভিন্ন গবেষণা ফার্ম, শেড, ফুড পাইলট প্লান্ট ও ল্যাবের যন্ত্রপাতি স্থাপন করে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে ৩ হাজার-৩ হাজার ১৫০ কেভিএ ড্রাই টাইপ বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন স্থাপন করার কথা ছিল। প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নানা দেশ থেকে আমদানি করতে হবে। কিন্তু ঠিকাদার না পাওয়ায় এখনো কেনা সম্ভব হয়নি। যদিও এরই মধ্যে প্রকল্পের আওতায় মোট ব্যয়ের ৮২ শতাংশ খরচ করা হয়ে গেছে। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত ১৮১ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। আর বাস্তব অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি কেনার জন্য এখন পর্যন্ত তিনবার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। কিন্তু ডলার সংকট ও উচ্চ মূল্য বৃদ্ধির কারণে কোনো দরদাতা পাওয়া যায়নি। যারা আগ্রহ দেখিয়েছে, তারাও অনুমোদিত ব্যয়ের চেয়ে অতিরিক্ত দাম চেয়েছে। ডলারের দাম বাড়ার কারণেই মূলত আমদানিনির্ভর এসব যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ঠিকাদার পাওয়া যায়নি। তবে যন্ত্রপাতিগুলো স্থাপনের জন্য ভবন নির্মাণকাজ গত বছরের শুরুর দিকেই সম্পন্ন হয়ে গেছে। যন্ত্রপাতি না থাকায় ভবনগুলো এখন অব্যবহৃত রয়েছে।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী অচিন্ত কুমার চক্রবর্তী কালবেলাকে বলেন, সাবস্টেশনসহ অন্য যন্ত্রপাতিগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে কিনতে হবে। কিন্তু কয়েকবার দরপত্র আহ্বান করেও কাঙ্ক্ষিত দরদাতা পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া কিছু মেশিন আছে, যেগুলো ছাত্রছাত্রীদের রিসার্চের জন্য, সেগুলোও কেনা সম্ভব হয়নি। এমন তিন-চারটি আইটেম আছে, যেগুলো ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং এলসি না খুলতে পারার কারণে কেনা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন ছাড়া একটি মেশিনও চলবে না। একটি সাবস্টেশন স্থাপন করা অপরিহার্য। যন্ত্রপাতি না থাকলে এত টাকা খরচ করে যে ভবন করা হয়েছে, তার মূল্য থাকবে না। যে উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসটি করা হয়েছে, সেই উদ্দেশ্য পূরণ হবে না।
ঠিকাদার না পাওয়ার কারণ হিসেবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রথম সংশোধনী একনেকে অনুমোদনের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে বারবার টেন্ডার করার পরও কোনো ঠিকাদার আগ্রহ দেখায়নি। কারণ, সবকিছুর দাম বেড়েছে। এসব মেশিনের জন্য যে দাম ধরা হয়েছিল, সেই দামে কোনো ঠিকাদার রাজি হচ্ছে না।
সংশোধনী প্রকল্পের ব্যয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজারদর ও বর্ধিত ডলারের দাম যোগ করে অনুমোদিত বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম খাতে ৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ও সাবস্টেশন স্থাপনে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম খাতে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য আনুষঙ্গিক খাতে ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আলোচ্য প্রকল্প প্রস্তাবের ওপর আগামী মাসে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সংশোধনী প্রস্তাবের মেয়াদ এবং ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
২০০৬ সালে চট্টগ্রাম সরকারি ভেটেরিনারি কলেজকে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়। মূল ক্যাম্পাসটি জায়গার অপর্যাপ্ততার কারণে বর্তমানে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় ২০ একর জমিতে একাডেমিক ভবন, ক্লাসরুম, ল্যাবরেটরি, প্রশাসনিক ভবন ও আবাসিক সুবিধাসহ গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধিতে অ্যানিমেল ফার্ম, ফুড পাইলট প্লান্ট, ফিশ হ্যাচারি, বিবিধ রিসার্চ শেড, ফিল্ড ভেটেরিনারি হাসপাতাল নির্মাণের উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন