আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) জন্য প্রস্তাবিত ২৬১টি গাড়ি কিনবে না সরকার। গাড়ি কেনার প্রস্তাবে সায় না দিয়ে তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। একই সঙ্গে তিনটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সেসবের জবাব দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মূলত অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে কৃচ্ছ্রসাধনের উদ্দেশ্যেই নতুন গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার।
গত সোমবার অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ডিসি-ইউএনওদের জন্য ২৬১টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব স্থগিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কমকর্তারা জানান, ২৬১টি গাড়ির প্রতিটির দাম ধরা হয় ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে সরকারের ৩৮১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয় হওয়ার কথা ছিল। ৫০ কোটি টাকার ওপরে হওয়ায় প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত বৃহস্পতিবার প্রস্তাবটি ফেরত পাঠানো হয়। একই সঙ্গে তিনটি বিষয়ে জানতে চেয়ে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়। প্রথমত, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কেনা গাড়িগুলোর সর্বশেষ অবস্থা কী? দ্বিতীয়ত, ডিসি-ইউএনওদের জন্য প্রতিটি গাড়ির দাম ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে কোন মানদণ্ডে? তৃতীয়ত, মাঠ প্রশাসনে এখন কতটি গাড়ি আছে, সেগুলোর সর্বশেষ কী অবস্থা? এসব প্রশ্নের জবাব দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সাধারণত অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে কোনো প্রস্তাব নীতিগতভাবে পাস হওয়ার পর তা পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখান থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর তা ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে তোলা হয়। ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটিতে ওঠার আগে গাড়ি কেনার প্রস্তাব বাতিল হয়ে গেল।
সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের পরিবহন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর বলেন, নির্বাচনের জন্য ডিসি-ইউএনওদের জন্য নতুন গাড়ি কেনা দরকার। তবে রাষ্ট্র যদি মনে করে এখন গাড়ি কেনার দরকার নেই, সেটিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। নতুন গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কয়েকটি পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারা সেগুলোর জবাব তৈরি করছেন বলেও জানান তিনি।
গাড়ি কেনার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলেছিল, জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ করা, ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট) পরিচালনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ মাঠপর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন পরিবহন সেবা নিশ্চিতে নতুন গাড়িগুলো দরকার। বর্তমানে যেসব গাড়ির আয়ুষ্কাল ১৩ বছর বা তারও বেশি হয়েছে, সেগুলোর পরিবর্তেই নতুন গাড়ি দেওয়া হবে।
সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, মূলত ডলার-সংকটের কারণে নতুন গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যেসব পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তাতে নতুন গাড়ি কেনার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব মনে হয়নি। ফলে নির্বাচনের আগে ডিসি-ইউএনওদের জন্য নতুন গাড়ি কেনা আর সম্ভব হচ্ছে না।