

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ১০০তম সভার সুপারিশের ভিত্তিতে পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার তিন বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিল করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। গত ১৩ নভেম্বর জারি করা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০২২ অনুযায়ী সম্পন্ন হওয়া যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বৈধতা হারায়। বাতিল হওয়া গেজেটগুলো হলো— গেজেট নং ৫৭০ মো. মোক্তার আলী, ৪৭২ সন্তোষ কুমার ঘোষাল এবং ৪৭৫ মো. আশ্রাব আলী।
মন্ত্রণালয় জানায়, গেজেট বাতিলের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে সরকারিভাবে প্রকাশিত ডিজিটাল ও মুদ্রিত সব তালিকা থেকে এ নামগুলো অপসারণের জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাওয়া অভিযোগ ও নথি যাচাইয়ের ধারাবাহিক উদ্যোগের অংশ হিসেবেই জামুকা সাম্প্রতিক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা তালিকা শুদ্ধিকরণ, ভুয়া সনদ শনাক্তকরণ এবং সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে আরও পর্যায়ক্রমিক যাচাই কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, গেজেট বাতিল কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; এটি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া, যার লক্ষ্য মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা সুরক্ষা এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বহাল রাখা।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে দেশে মুক্তিযোদ্ধা হলেও সংখ্যা নিয়ে এখনও বিতর্কের অবসান হয়নি। ১৯৯৪ সালের সরকারি তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৮৬ হাজার। ২০২৪ সালে এসে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখ ৮ হাজার। এ হিসেবে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১ লাখ ২২ হাজার। তবে মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ৯০ হাজার।
প্রতি মুক্তিযোদ্ধা বছরে সর্বনিম্ন ২ লাখ ৬৭ হাজার টাকা সম্মানী পান। এ হিসেবে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা বছরে প্রায় ২৪০০ কোটি টাকা ভাতা নিয়ে যাচ্ছেন। এসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা শনাক্তের উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বা জামুকা।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত দেশে ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৮ হাজার ৫০ জন। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তের সংখ্যা ৮৯ হাজার ২৩৫ জন। গেজেট বাতিল, মুক্তিযোদ্ধা বয়সসীমা নির্ধারণসহ প্রায় ১৪ ক্যাটাগরিতে মোট মামলার সংখ্যা ২ হাজার ৭১৯টি। ইতোমধ্যে নির্ধারিত বয়স ১২ বছর ৬ মাসের চেয়ে কম হওয়ায় ২ হাজার ১১১ মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করা হয়েছে। এ নিয়ে বিগত ১৫ বছরে ৩ হাজার ৯২৬ মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিল হয়।
মন্তব্য করুন