নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার হাসনাবাদ এলাকার ছন্দা সিনেমা হলটি অবশেষে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সিনেমা হলটি ভেঙে প্রতিষ্ঠা করা হবে ইদরিসিয়া দারুল কুরআন মাদ্রাসা নামে একটি দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে বিক্রির প্রক্রিয়া শেষ বলে জানিয়েছেন মালিকপক্ষ ও ওই মাদ্রাসার জিম্মাদার মাওলানা মোকাররম হোসেন। সিনেমা হলের জমিটি ক্রয় করার জন্য ২০ লাখ টাকা বায়নাও করা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, সিনেমা হলের সামনের রাস্তার পাশে ‘ধর্মপ্রাণ মুসল্লিবৃন্দ’ নামে একটি ব্যানার সাঁটানো রয়েছে। ব্যানারে লেখা রয়েছে, ‘আলহামদুলিল্লাহ ছন্দা সিনেমা হলটি মাদ্রাসার জন্য বায়না করা হয়েছে। চুক্তিমূল্য ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা, বায়না মূল্য ২০ লাখ টাকা। সদকায়ে জারিয়ার এ মহৎ কাজে আপনাদের আন্তরিক দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি। মাদ্রাসার রশিদ ছাড়া কোনো ধরনের লেনদেন করবেন না।’
ইদরিসিয়া দারুল কুরআন মাদ্রাসার জিম্মাদার মাওলানা মোকাররম হোসেন বলেন, জমি বাবদ বায়না করা হয়েছে ২০ লাখ টাকা। বাকি টাকা পরিশোধের জন্য বিত্তবানসহ সাধারণ মানুষের কাছে সাহায্যও চাওয়া হচ্ছে। আশা করি, দ্রুত জমির নির্ধারিত মূল্যের বাকি টাকা পরিশোধ করে মাদ্রাসা সম্প্রসারণসহ অন্যান্য কার্যক্রম শুরু হবে। দলিল করাসহ প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয় হবে।
নরসিংদীর প্রবীণ চলচ্চিত্র প্রযোজক শামসুর রহমান পিন্টু বলেন, দেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শন শিল্প ক্রান্তিকাল পার করছে। ক্রমে নিভে যাচ্ছে দেশের হলগুলোর রুপালি পর্দার আলো। নরসিংদীতে গত দুই দশকে বন্ধ হয়ে গেছে ১৫টির বেশি প্রেক্ষাগৃহ। সর্বশেষ হাসনাবাদের ৯০ দশকের ছন্দা সিনেমা হল বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ঢিমেতালে নরসিংদীতে টিকে আছে দু-একটি হল। সবার কাছে স্মার্টফোন, ইন্টারনেট থাকায় এখন সিনেমা, নাটকসহ চিত্তবিনোদন মানুষের হাতের মুঠোয়। তাই এখন মানুষ আর সিনেমা হলে যেতে চাই না। মানুষ এখন মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে সিনেমা ও নাটক দেখছে।
সিনেমা হলের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইমন খান জানান, বর্তমানে সিনেমা ব্যবসা মন্দা হওয়ায় তাদের
অবস্থা শোচনীয়। মালিকপক্ষ ঠিকমতো বেতন দিতে পারে না। সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই অন্য পেশা বেছে নিচ্ছে।
ছন্দা সিনেমা হলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রুবেল আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন লোকসান গুনে হলটি চলছিল। মাস শেষে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিল, জেনারেটরসহ নানা মেইনটেন্যান্স খরচ রয়েছে। লোকসানি এই প্রতিষ্ঠান আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কয়েক বছর আগেও সপ্তাহে দু-একটি সিনেমা রিলিজ হতো, এখন মাসেও একটি হয় না। নতুন সিনেমা মুক্তি পেলে তা দু-এক সপ্তাহের মধ্যেই ইন্টারনেটে বা অন্যান্য কোনো মাধ্যমে পাওয়া যায়। তাই হলে তেমন কেউ সিনেমা দেখতে আসে না। নিরুপায় হয়ে এ ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হচ্ছে।