মাহমুদুল হাসান
প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৪, ০২:০৯ এএম
আপডেট : ০৫ মে ২০২৪, ০৭:৫১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

৮৮ শতাংশ কম ধাত্রী দিয়ে চলছে মাতৃত্বকালীন সেবা

বিশ্ব ধাত্রী দিবস আজ
৮৮ শতাংশ কম ধাত্রী দিয়ে চলছে মাতৃত্বকালীন সেবা

নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য মিডওয়াইফারি বা ধাত্রী সেবা অপরিহার্য। এই সেবা মাতৃমৃত্যুর হার কমানো ও স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের হার বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তবে দেশে প্রয়োজনের তুলনায় ৮৮ শতাংশ কম ধাত্রী দিয়ে চলছে মাতৃত্বকালীন সেবা। এই সংকট নিরসনে ধাত্রীর সংখ্যা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, অজোপাড়া গায়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন প্রশিক্ষণহীন অনেক ধাত্রী। তাদের দিয়ে এখনো ৩৫ শতাংশ নারীর সন্তান প্রসব হয় বাড়িতে। এতে মাতৃ ও নবজাতকের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে সিজার বা অস্ত্রোপচারে সন্তান প্রসবের প্রবণতা। এজন্য দক্ষ ও প্রশিক্ষিত ধাত্রী তৈরিতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও কর্মপরিবেশ জরুরি।

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ রোববার বাংলাদেশেও উদযাপিত হবে বিশ্ব ধাত্রী দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য—মিডওয়াইফ: জলবায়ু সংকটে অপরিহার্য জনশক্তি। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল, বিভিন্ন সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।

স্বাস্থ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশে ২২ হাজার ধাত্রী প্রয়োজন। ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ফান্ডের তথ্য বলছে, গত এক দশকে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ৮ হাজার ৬৪৬ জন ধাত্রী বিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছেন। এর মধ্যে ২ হাজার ৫৫৭ জনকে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া বর্তমানে ৩৭৬ জন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতেও প্রায় ৪০০ ধাত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দেশে প্রথম ধাত্রী নিয়োগ হয় ২০১৮ সালে।

প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ বা ওজিএসবির সাবেক সভাপতি স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরী বলেন, প্রশিক্ষণহীন ধাত্রী দ্বারা প্রসবের কারণে মা-শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। এই ঝুঁকি এড়াতে প্রসবের সময় ধাত্রী নিশ্চিত করতে হবে। বাইরের দেশে বাচ্চা প্রসবে সাহায্য করেন ধাত্রীরা। যখন কোনো সমস্যায় পড়ে, তখন চিকিৎসকদের ডাকা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে একসময় ধাত্রী ছিলেনই না বলা চলে। এখন কিছু নিয়োগ হচ্ছে, তবে তুলনায় খুব কম। ফলে সন্তান প্রসবে বাড়ছে অস্ত্রোপচার।

দেশে এক বছরে সিজারিয়ান ডেলিভারির হার ৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে বলে ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স-২০২৩’-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ২০২২ সালে মোট প্রসবের ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ ছিল সিজারিয়ান ডেলিভারি। ২০২৩ সালে সিজারিয়ান ডেলিভারির হার বেড়ে ৫০ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে।

বর্তমানে স্বাভাবিক প্রসবের হার বাড়াতে কাজ করছেন ধাত্রীরা। তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রংপুরে বর্তমানে মাসে ২০ থেকে ২৫টি স্বাভাবিক প্রসব হয়। ৬ বছর আগেও যেখানে মাসে দুই-তিনটি স্বাভাবিক প্রসব হতো।

তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ধাত্রী নুসরাত জাহান বলেন, আমরা নিয়মিত অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের রক্তচাপ, ফিটাল মুভমেন্ট পরীক্ষা করি। আমাদের কাছে চেকলিস্ট আছে গর্ভবতীর কী কী ধরনের পরীক্ষা করতে হয়। আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী মায়েরা সেসব পরীক্ষা করে গাইনি চিকিৎসকদের দেখান। মায়েদের লেবার পেইন উঠলে আমরা বাচ্চা-মা কেমন আছে বারবার তদারকি করি। স্বাভাবিক সন্তান প্রসব সম্ভব না হলে, তখন আমরা রোগীকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের জন্য পাঠায়। তবে এই হার খুবই কম। ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ফান্ডের তথ্য মতে, ধাত্রীরা বর্তমানে দেশের ৪০৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮৬ শতাংশ সন্তান প্রসবে সাহায্য করছেন।

স্বাভাবিক প্রসবের হার বাড়ানো ও মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে প্রয়োজন অনুযায়ী আরও ৫ হাজার ধাত্রী পদ সৃষ্টি করার জন্য গত বছর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সেই জনবল নিয়োগ দিতে রাজি হলেও অর্থ মন্ত্রণালয় মাত্র ৪৫০টি পদ সৃষ্টি করে।

নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ৪৫০ ধাত্রী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শুধু প্রান্তিক পর্যায় নয়, বড় বড় হাসপাতালেও ধাত্রী নিয়োগ দেওয়া হবে। ধাত্রীর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে আমরা আবারও চিঠি লিখেছি। আশা করছি, শিগগিরই আরও ধাত্রী পদ সৃষ্টি হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ছাত্রলীগ কর্মীকে বেধড়ক কোপাল প্রতিপক্ষরা

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে আল্টিমেটাম

অবশেষে লালমনিরহাটে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি

মিষ্টি বিতরণের ধুম / চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত

উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠিত

টানা কয়েকদিন বৃষ্টির আভাস

পৃথিবীর যে স্থানে কেউ যেতে পারে না

সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় মামলা

সংগঠনের অবস্থা জানতে জেলা সফর শুরু করছে যুবদল

সৌদিতে প্রথমবার সাঁতারের পোশাকে নারী ফ্যাশন শো

১০

তিস্তা নদীতে গোসল করতে গিয়ে কিশোরের মৃত্যু

১১

সমুদ্রপাড়ে সিডিএ প্রকৌশলীদের ‘বারবিকিউ পার্টি’

১২

জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে চাচার হাতে ভাতিজি খুন

১৩

পশুর হাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ

১৪

অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে সরকার : মান্না

১৫

অমরত্ব পেল লেভারকুসেন

১৬

শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য : পরশ

১৭

ইউরোপে ভয়ংকর মিশনে নেমেছে ন্যাটো-সিআইএ

১৮

‘চেয়ারে বসলেই ৫০ কোটি টাকা’

১৯

রাজশাহীতে পুলিশ-বিএনপি ধ্বস্তাধ্বস্তি

২০
X