‘জনপ্রতিনিধিরা চেয়ারের জন্য তিন কোটি টাকা খরচ করছেন। কিন্তু এত টাকা তারা জনগণের সেবার জন্য করছেন না। একবার যদি চেয়ারে বসতে পারেন ৫০ কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছেন। এত টাকা কেন খরচ করছেন, তাদের কী উদ্দেশ্য- এত শখ, এত টাকা খরচ করে জনগণের সেবা করার। আসলে তা নয়, ওই চেয়ারটাতে বসলেই ৫০ কোটি টাকার মালিক হবে- এই আশায়। এ জন্য আমাদের নেতারা নির্বাচনে দুই-তিন কোটি টাকা খরচ করছেন।’
সম্প্রতি নির্বাচনী এক জনসভায় নিজ দলীয় নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে এসব কথা বলেছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুল হাসান খোকন। তার ওই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
কামরুল হাসান খোকন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহসম্পাদক ছিলেন। এখন তিনি ঠাকুরগাঁও পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য।
কামরুল হাসান বলেন, এটা হলো ঠাকুরগাঁওয়ের অবস্থা। তিনি মনে করেন, যখন কেউ ভোটে জয়ী হন তখন তাকে মনে করা উচিত আমি শুধু ৪০ হাজার বা ৫০ হাজার ভোটারের প্রতিনিধি নয়, ৪ লাখ ৬৫ হাজার ভোটারের প্রতিনিধি। সবকিছু রাজনৈতিক বিবেচনায় নিলে হবে না। ভাবতে হবে ৪ লাখ ৬৫ হাজার ভোটারের প্রতিনিধি।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, জেলায় স্থানীয় সরকারের যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, ১৫ বছর ধরে আমরা ক্ষমতায় রয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলেছেন। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃত্বের, জেলা নেতৃত্বের ও উপজেলা নেতৃত্বের তাদের সীমাহীন জনগণের প্রতি যে অবহেলা, স্বজনপ্রীতি ও নানাবিধ কার্যকলাপের প্রতি ভীত হয়ে ভোটকেন্দ্রে মানুষ সেভাবে আসে না।
শুক্রবার (১৭ মে) উপজেলার রায়পুর, বেগুনবাড়িসহ কয়েকটি এলাকায় নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দেন চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুল হাসান খোকন। রায়পুর ইউনিয়নের ভাউলারহাটে সন্ধ্যায় তিনি বলেন, ভোট হচ্ছে পবিত্র আমানত, ভোট হচ্ছে অধিকার। এই অধিকারকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে, এই ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের হামার চেয়ারম্যান, হামার অনেক মেম্বার উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের শেষ নির্বাচনে হামরা দেখেছি। মেম্বারটা মাত্র অল্প ভোটে জিতেছে। ওই মেম্বার খুশিতে বাড়ি চলে গেছে। যায় শুনেছে ‘ও’ হারে গেছে, আরেক মেম্বার জিতেছে। চেয়ারম্যানের বেলাতেও ঘটিছে। মুই সব জানু। চেয়ারম্যানরা ইউএনও অফিসের রেজাল্ট বোর্ডে দেখেছে ভোটে অঁই জিতেছে। বাড়িতে গিয়ে দেখে ওঁক হারানো হয়েছে, আরেকজনকে জিতানো হয়েছে।’
কামরুল বলেন, বিভিন্ন জায়গায় নিয়োগ যেগুলো হয় ঠাকুরগাঁওয়ে, তা কিন্তু ১৩ লাখ, ১৪ লাখ বা ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে হচ্ছে। যার টাকা আছে, দালালদের যারা ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকা দিতে পারবে- তাদের চাকরি হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প নামে বিভিন্ন প্রকল্প যে বিভিন্ন রকমের ভাতা প্রদানের কর্মসূচি চালু করেছেন, সেগুলোতে আমাদের দলীয় নেতৃত্বের দলবাজির কারণে, আমাদের দলীয় নেতৃত্বের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে প্রকৃত জনগণ সেসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
কামরুল প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘কারা এই সুবিধার আওতায় আসছেন। বেশিরভাগই আমাদের জনপ্রতিনিধি তাদের পছন্দের লোকেরাই এসব সুবিধা ভোগ করছেন। এটা তো হবার কথা নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাধারণ মানুষ, অসহায় মানুষ, প্রকৃত যারা পাওয়ার তাকে দেওয়া হবে। এইখানেও আমরা রাজনৈতিক রং খুঁজি। কে আওয়ামী লীগ করেন, কে বিএনপির করেন, কে জাতীয় পার্টি করেন, কে নৌকায় ভোট দিয়েছেন, কে নৌকায় ভোট দেয়নি। এইসব খুঁজে আমরা ভাতা প্রদানের কর্মসূচি তালিকা তৈরি করি।
খোকন বলেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সৌন্দর্য হলো সমস্ত রাজনৈতিক দল থাকবে, দলগুলো সমস্ত সুযোগ সুবিধার আওতায় থাকবেন। কিন্তু এখানে এটা হচ্ছে না, কারণ কিছু নেতা ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগ যারা চালাচ্ছেন, তারা একটি ঘর তৈরি করেছেন। জেলায় কর্মসংস্থানের পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী যে সুযোগ-সুবিধা দেন, দলীয় নেতাকর্মীদের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে সাধারণ মানুষ সে সুবিধা পাচ্ছে না।
তারাই ঘুরেফিরে এমপি হবেন, তারাই আওয়ামী লীগ নেতা হবেন, উপজেলা চেয়ারম্যান হবেন, কেউ ইউপি চেয়ারম্যান হবেন। মাত্র কয়েকটি লোকের হাতে ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব আজ জিম্মি হয়ে পড়েছে। এখন তারা (আওয়ামী লীগের কিছু নেতা) মিল-চাতালের মালিক হয়েছে। ভারতেও সম্পত্তি কিনেছে। এত টাকা কোথা থেকে আসছে। সাধারণ মানুষের টাকা, সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার টাকা নেতারা লুটপাট করছে বলে মন্তব্য করেন ৯০ দশকের এই সাবেক ছাত্র নেতা।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইন্দ্র নাথ বলেন, তিনি অনেকটা হতাশাগ্রস্ত। তবে তার এ ধরনের বক্তব্য দেওয়াটা অনভিপ্রেত।
মন্তব্য করুন