ঘূর্ণিঝড় রিমাল ও এর প্রভাবে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ও ব্যক্তির তালিকা করার পাশাপাশি কবলিত এলাকা পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। আগামীকাল রোববার থেকে ত্রাণ, ওষুধপত্রসহ আর্থিক সহায়তা নিয়ে উপকূলীয় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যাবেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা।
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ) এবং ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দলীয় চিকিৎসকদের সমন্বয়ে ফ্রি অথবা স্বল্পমূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প চালু করা হবে। ত্রাণ সংস্থানের জন্য একটি কেন্দ্রীয় অর্থ কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এ ছাড়া বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন পৃথকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেবে। এসব কর্মসূচি সরাসরি মনিটর করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ত্রাণবিষয়ক কমিটির নেতারা বলেন, রিমাল ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক হাজার মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
ত্রাণবিষয়ক উপকমিটির আহ্বায়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালবেলাকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পর্যায়ক্রমে ত্রাণ বিতরণ ও সহায়তা কার্যক্রম শুরু করা হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসন ও সহায়তার দায়িত্ব সরকারের। তবে বিএনপি জনগণের দল হিসেবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে অতীতের মতোই সাধ্যমতো সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াবে।
জেডআরএফের নির্বাহী পরিচালক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে তারা ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও ওষুধ বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জানা যায়, গত রবি ও সোমবার বরিশালসহ দক্ষিণ উপকূলে রিমাল ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতির শিকার ২২ লাখ ৩৫ হাজার জন। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরূপণ করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। গত বুধবার দুপুর ২টা পর্যন্ত দেওয়া ওই হিসাবে দেখা গেছে, রিমালে ১৯টি জেলার ১১৯টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপকূলীয় ওইসব উপজেলার প্রায় ৪৬ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
জানা যায়, রিমালের দুদিনের তাণ্ডবে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫২৮টি বাড়িঘর আংশিক এবং ৪০ হাজার ৩৩৮টি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। খুলনা ও সাতক্ষীরায় প্লাবিত হয়েছে চিংড়ি, কাঁকড়া, মাছের পোনার খামার। ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীরা বলছেন, পানিতে ঘের প্লাবিত হওয়া ও সব মাছ ভেসে যাওয়ায় তাদের পুঁজির সব টাকা নষ্ট হয়েছে।
জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব মো. আব্দুর রহিম বলেন, রিমালে মৎস্য খাতে উপকূলীয় ১০৭টি উপজেলায় প্রায় ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা সাধ্যমতো মৎস্যজীবীদের পাশে দাঁড়াব।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ উপলক্ষে ২৯ মে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির ত্রাণবিষয়ক কমিটির বৈঠক হয়। এতে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ-সম্পাদক এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত কোন উপজেলায় কী ধরনের ক্ষতি হয়েছে, কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন, তার তালিকা করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার লক্ষ্যে খুলনা ও বরিশাল বিভাগীয় উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। সরেজমিন যাওয়া এবং ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে আহত, নিহত এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহযোগিতা করতে একটি টিম এবং ত্রাণ সংস্থানের জন্য কেন্দ্রীয় অর্থ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি জেডআরএফ, ড্যাব ও বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদকদের সমন্বয়ে মেডিকেল টিম গঠন এবং বিশুদ্ধ পানি, স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সংগ্রহ করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিতরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব এলাকায় বিএনপির সাবেক এবং বর্তমান জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় নেতাদের সমন্বয়ে একাধিক টিম গঠন করে বিভাগীয় টিমের সঙ্গে সমন্বয় করে কোন এলাকায় কবে ত্রাণ দেওয়া হবে, সে ব্যাপারে শিগগির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ত্রাণ কমিটির সদস্য সচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দিয়ে কমিটির নেতারা বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শিগগির এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আগামীকাল আমি খুলনায় উপকূলীয় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করব এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেব।
নোয়াখালী জেলা বিএনপির উপদেষ্টা প্রকৌশলী আমিরুল মোমিন বাবলু বলেন, বিএনপি যেহেতু জনগণের জন্য রাজনীতি করে সেই জায়গা থেকেই দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটি অত্যন্ত মানবিক এবং সময়োপযোগী।
এর আগেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ বিতরণ ও ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ দেখা দিলে তা প্রতিরোধে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঢাকা মহানগরীতে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি ফ্রি এবং স্বল্পমূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প চালু করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক হাজার মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছিল বিএনপি।