জন্মনিবন্ধন হলো একজন মানুষের জন্ম, বয়স, পরিচয় ও নাগরিকত্বের প্রমাণ। রাষ্ট্রের স্বীকৃত নাগরিকের মর্যাদা ও সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে হলে জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এর পরও দেশের মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশেরও বেশি বা ৩ কোটি মানুষের জন্মনিবন্ধন নেই।
জন্মনিবন্ধন করা হয়নি এমন মানুষের ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে নারীরা। সবচেয়ে কম জন্মনিবন্ধন রয়েছে বরিশাল বিভাগে। এ ছাড়া যৎসামান্য মানুষের ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক প্রতিবেদন এসব তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি বিবিএস আর্থসামাজিক ও জনমিতিক জরিপ-২০২৩ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে, দেশের মোট জনসংখ্যার ৮২ দশমিক ৮৬ শতাংশ মানুষের জন্মনিবন্ধন রয়েছে।
জনশুমারি ও গৃহগণনার ২০২২-এর ভিত্তিতে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার। মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশেরও বেশি মানুষের জন্মনিবন্ধন না থাকে মানে ২ কোটি ৯৪ লাখ ১০ হাজার ৫২৬ জন মানুষের জন্মনিবন্ধন নেই।
জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে নারীরা। ৮৩ দশমিক ৬৪ পুরুষের জন্মনিবন্ধন আছে। জন্মনিবন্ধন থাকা নারীর সংখ্যা ৮২ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ ১৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ পুরুষ এবং ১৭ দশমিক
৯২ শতাংশ নারীর জন্মনিবন্ধন নেই।
শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের জন্মনিবন্ধনের হার কম।
জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে বরিশাল বিভাগ আর এগিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগ। বরিশাল বিভাগের মোট জনসংখ্যার ৭৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ মানুষের জন্মনিবন্ধন রয়েছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৯ দশমিক
৫৬ শতাংশ মানুষের জন্মনিবন্ধন রয়েছে। জেলার হিসাব অনুযায়ী সবচেয়ে কম জন্মনিবন্ধন ভোলায়। এই জেলার মোট জনসংখ্যার ৬৭ দশমিক ৮৯ শতাংশের জন্মনিবন্ধন রয়েছে।
জরিপের বিষয়ে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা নয়ন কান্তি রায় কালবেলাকে বলেন, ১৭ শতাংশ জনসংখ্যার জন্মনিবন্ধন নেই বলতে এখানে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাইকেই ধরা হয়েছে। আর জাতীয় পরিচয়পত্র নেই যে ৪ শতাংশের তারা ১৮ বছরের বেশি বয়সের। জরিপের সময় যাদের গৃহে পেয়েছি তাদের তথ্য মতেই এই রিপোর্ট করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে সবকিছুতেই জন্মনিবন্ধন সনদ দরকার হয়। এটা ছাড়া কোনো কাজই সম্ভব নয়। স্কুল, কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতেও বয়স প্রমাণের জন্য জন্মনিবন্ধন প্রদর্শন করতে হয়। জন্মনিবন্ধন সনদ না থাকায় ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারে না। এর পরও প্রায় তিন কোটি মানুষের জন্মনিবন্ধন না থাকা চিন্তার বিষয়। জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ না করতে পারলে এটা বাড়ানো যাবে না।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন অ্যান্ড সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. মইনুল আহসান কালবেলাকে বলেন, সব ধরনের নাগরিক সুবিধা পেতে জন্মনিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র দরকার। পাসপোর্ট সবার জন্য জরুরি না হলেও জন্মনিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সবার থাকার উচিত। এ ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া আরও সহজ করা দরকার।
১৮ বছরে বেশি বয়সীদের জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক হলেও এখনো অনেকে এর বাইরে রয়েছে। মোট জনসংখ্যার মধ্যে ৯৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। অর্থাৎ ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ বা ৫১ লাখ ৪৭ হাজার ৭০০ মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। জাতীয় পরিচয় না থাকা মানুষের মধ্যেও পিছিয়ে রয়েছে নারীরা।
গাড়ি চালাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স
বাধ্যতামূলক হলেও দেশের যৎসামান্য
মানুষের কাছে এই লাইসেন্স আছে।
মাত্র ২ দশমিক ১১ শতাংশ মানুষের
ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে। সেই হিসেবে ১৬ কোটি ৭৯ লাখ ৬৯ হাজার ৪৫১ জনের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। অর্থাৎ ১৭ কোটি ১৫ লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র ৩৬ লাখ ২০ হাজার ৫৪৮ জনের ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা পুরুষের হার ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। আর নারী মাত্র শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ।
পাসপোর্টেও পিছিয়ে রয়েছে দেশের মানুষ। মাত্র ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ মানুষের পাসপোর্ট রয়েছে। অর্থাৎ ৯৫ শতাংশেরও বেশি মানুষের পাসপোর্ট নেই। পাসপোর্ট থাকা মানুষের মধ্যে পুরুষ ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ আর নারী ২ দশমিক ৩০ শতাংশ। এই হার শহরের তুলনায় গ্রামে প্রায় অর্ধেক।