জাহিদ রুমান
প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২৪, ০২:০২ এএম
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৮:২৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রকৃতি

বনে এমন ফুল ফুটেছে

বনে এমন ফুল ফুটেছে

সময়টা চৈত্রের শেষার্ধ। পাহাড়ে হাঁটছিলাম চারপাশের গাছ-ফুল দেখতে দেখতে। শুকনো পাতার মর্মর শব্দের সঙ্গে দূর থেকে ভেসে আসছিল কোকিলের ডাক। কিছু গাছে নতুন পাতা এসেছে, কিছু তখনো পত্রশূন্য। তখনই একটি গাছে কয়েক থোকা হলদে ফুল দেখে থমকে দাঁড়াই। ফুল অনেকটা কমে এসেছে; ফুলের চেয়েও ডালে ডালে তখন পরিণত ফলের প্রাচুর্য। থোকায় থোকায় ধরেছিল সবুজ রঙের ছোট্ট ফল, আকারে বুনোকুলের মতো। মাঝারি আকারের গাছটিতে কোনো পাতা নেই, নিচে ঝরাপাতার মেলা। পাতাও চেনা লাগল, আমার পরিচিত চালতার পাতার মতো, আকারে বেশ বড়। পরে জানলাম গাছটি বনচালতা, চালতারই আত্মীয়। ফুল চালতাফুলের চেয়েও বেশ ছোট, তবে নিবিড়ভাবে খেয়াল করলে গড়নে বেশ সাদৃশ্য চোখে পড়ে। হলুদ রঙের পাপড়ির মাঝখানে সোনালি পুংকেশরের কেন্দ্রে তারার মতো ছড়ানো গর্ভমুণ্ড বেশ চমৎকার। ফুলে সুগন্ধি আছে।

বনচালতার বৈজ্ঞানিক নাম Dillenia pentagyna. পরিবার Dilleniaceae. একই পরিবারের উদ্ভিদ আমাদের পরিচিত চালতা; বৈজ্ঞানিক নাম Dillenia indica. জার্মান উদ্ভিদবিদ জোহান জ্যাকব ডিলেনিয়াসের নামে এই উদ্ভিদ পরিবার ও গণের নামকরণ। বনচালতা গাছ মাঝারি থেকে বড় বৃক্ষ হতে পারে। ডালপালা বেশ ছড়ানো-ছিটানো। ঊর্ধ্বমুখী শাখা-প্রশাখায় কোনো সুনির্দিষ্ট বিন্যাস চোখে পড়ে না; তাই হয়তো জীবনানন্দ দাশ তার পাড়াগাঁর দু’পহর ভালোবাসি কবিতায় লিখেছেন ‘শাখাগুলো নুয়ে আছে বহু দিন ছন্দহীন বুনো চালতার’।

আমার দেখা গাছটির অবস্থান বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা লাগোয়া কক্সবাজারের রামু উপজেলার একটি পাহাড়ে। জায়গাটি মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চলেরই অংশ। পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট ও শালবন অঞ্চলে বনচালতার দেখা মেলে। স্থানীয়ভাবে গাছটি হারগজা, আজুগি, আজুলি, আগাজা ইত্যাদি নামে পরিচিত। সম্প্রতি জানতে পারলাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটিসহ পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দারা বনচালতা ফুলের কলি সবজি হিসেবে রান্না করে খান। তাদের কাছে এটি বেশ জনপ্রিয় একটি খাবার। চাহিদা থাকায় পার্বত্য এলাকার বাজারে এগুলো ৪০০-৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। চিংড়ি, শুঁটকি বা অন্য মাছ দিয়ে পাহাড়িরা এর তরকারি রান্না করেন।

যুক্তরাজ্যের কিউ বোটানিক গার্ডেন ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গাছটির আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে চীনের ইউনান, ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ সুলাওয়েসি পর্যন্ত। উদ্ভিদবিজ্ঞানী উইলিয়াম রক্সবার্গ প্রণীত Plants of the Coast of Coromandel (প্রকাশকাল ১৭৯৫ খ্রি.) গ্রন্থে বনচালতা প্রথম তালিকাভুক্ত হয়। অনেক গাছের মতো আমাদের বন-পাহাড়ের নিজস্ব এ বৃক্ষের সংখ্যা দিনে দিনে কমছে। এটি সংরক্ষণে চেনা চালতার মতো বনচালতার চারাও রোপণ করা প্রয়োজন বাগান ও উদ্যানে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জরায়ুমুখের ক্যানসার কেন হয়, কারা বেশি ঝুঁকিতে আছেন?

রাজশাহীর রাজবাড়ি / ইতিহাসের দেয়াল ভাঙা থামাল প্রশাসন

বৃহস্পতিবার প্রকাশ পাবে ‘এই অবেলায়-২’

যন্ত্রপাতি পৌঁছাতেই বিক্ষোভ, বুড়ি তিস্তায় বাড়ছে সংঘাতের শঙ্কা

নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি, আদালতকে বললেন তনি

আইসিসি থেকে শাস্তি পেলেন ভারতীয় পেসার

পাকিস্তানে পুলিশের গাড়িতে আইইডি বিস্ফোরণ, নিহত ৩

পাচারের অর্থ ফেরত আনার সক্ষমতা বর্তমান সরকারের নেই : রেজা কিবরিয়া

গোলাপী বলের টেস্টে কামিন্সের খেলা নিয়ে রহস্য

আরেক মামলায় বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন জয়

১০

৮ কুকুরছানা হত্যার ঘটনায় সেই নারী কারাগারে

১১

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে এভারকেয়ারে প্রধান উপদেষ্টা

১২

পরীক্ষা না নেওয়ায় শিক্ষকদের আটকে অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

১৩

‘কয়েকটা সিটের লোভ দেখিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে হত্যার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে’

১৪

স্বচ্ছ ও সুশৃঙ্খল নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীই নির্ভরতার প্রতীক

১৫

বউ-শাশুড়িকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা, আটক ১

১৬

খোলা তালাকের পর অন্যত্র বিয়ে ছাড়া কি পূর্বের স্বামীকে বিয়ে করা জায়েজ?

১৭

ভূমিকম্প নিয়ে জাপানের কাছ থেকে যা শিখতে পারে বাংলাদেশ

১৮

এবি পার্টির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি : জরিপ

১৯

‘নতুন শাড়িতে পুরোনো বউ’ দিয়ে আর ধোঁকা দেওয়া যাবে না : চরমোনাই পীর

২০
X