মোকারম হোসেন
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৪৮ এএম
আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৮:০১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রকৃতি

পরো করবী দেখো করবী

পরো করবী দেখো করবী

করবী ফুল প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘আসিল মল্লিকা চম্পা কুরুবক কাঞ্চন করবী।’ অন্যত্র আছেÑ

‘আন করবী রঙ্গন কাঞ্চন রজনীগন্ধা/প্রফুল্ল মল্লিকা।’

‘ক্ষীণ কটিতটে গাঁথি লয়ে পরো করবী।’

তিনি শ্বেতকরবীর কথাও ভোলেননি। কবিতায় অনেকবার শ্বেতকরবীর প্রসঙ্গ এনেছেনÑ

‘তোমার বনে ফুটেছে শ্বেত করবী/আমার বনে রাঙা।’ আবার ‘ভোর বেলাকার চাঁদের আলো/মিলিয়ে আসে শ্বেতকরবীর রঙে।’

জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন,

‘...চোখে ক্লান্তি নাই/কাঠমল্লিকায়/কাঁঠালী শাখায়/ করবীর বনে/হিজলের সনে...’

‘যদি তার পিছে যাও দেখিবে সে আকন্দের করবীর বনে/ভোমরার ভয়ে ভীরু...’

বিখ্যাত হওয়ার সুবাদে করবী নিয়ে সামগ্রিক সাহিত্যে এমন অসংখ্য স্তুতিবাক্য রয়েছে। জনপ্রিয় হওয়ার যথেষ্ট কারণও আছে। দীর্ঘস্থায়ী প্রস্ফুটন ও বর্ণবৈভব এই ফুলকে অনন্য মর্যাদায় আসীন করেছে। আমাদের দেশে প্রধানত দু’ধরনের করবী দেখা যায়। একটি রক্তকরবী, অন্যটি সাদা বা শ্বেতকরবী। এদের মধ্যে রক্তকরবীর সিঙ্গেল ও ডাবল ভ্যারাইটি আছে। স্বল্প পাপড়ির ফুলগুলো আমাদের দেশে আগেই ছিল। ডাবল বা বড় জাতের ফুলগুলো মূলত পদ্মকরবী। এগুলো এসেছে পরে। রক্তকরবী আমাদের অতি প্রিয় ফুলগুলোর মধ্যে অন্যতম। সে তুলনায় সাদা করবী অখ্যাত। রক্তকরবীর চেয়ে সাদা করবী ফুলের গড়নটাও একটু আলাদা।

ঢাকার প্রায় সবকটি পার্ক ও উদ্যানে করবী চোখে

পড়ে। কেউ কেউ শখ করে ব্যক্তিগত বাগানেও করবী রাখেন। উজ্জ্বল রঙের কারণে রক্তকরবীই বেশি আদৃত এবং বেশি পরিমাণে চোখে পড়ে। চারপাশে সবুজের পটভূমিতে দু-এক স্তবক তুষার-শুভ্র করবী বা লালচে-গোলাপি করবী দৃশ্যপট বদলে দেয়। করবী প্রাচীন ফুল। লোককাহিনিতে তার প্রমাণ মেলে। আদিআবাস এশিয়া ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল।

করবী (Nerium oleander) চিরসবুজ গাছ, দু-আড়াই মিটার উঁচু হতে পারে। গোড়া থেকে অনেক ডাল গজিয়ে ঝোপাল হয়ে থাকে। পাতা বেশ সুন্দর, ডালের আগার দিকে বেশি, থাকে বিপ্রতীপ বিন্যাসে, ১২ থেকে ২০ সেমি লম্বা, ভল্লাকার, ডাবল জাতের করবীর পাতা আরেকটু বড় ও পুরু। ফুল ফোটে গ্রীষ্ম-বর্ষায়, কখনো কখনো শরৎ-হেমন্তেও দু-একটি। ডালের আগায় গুচ্ছবদ্ধ ফুল সাধারণত তিন রকম-রক্তকরবী, সাদা (শ্বেতকরবী) ও ডাবল গোলাপি বা পদ্মকরবী, ৩ থেকে ৫ সেমি চওড়া, হালকা সুগন্ধি। ফল সজোড়, সরু, লম্বা ও খাড়া। কলমে চাষ।

তবে অনেকেই কলকে (Thevetia peruviana) ফুলের সঙ্গে করবীর তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। আদতে দুটো একেবারেই আলাদা গাছ। গাছ এবং ফুলের গড়নেও এরা স্বতন্ত্র। আমাদের দেশে তিন রঙের কলকে দেখা যায়। সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে হলুদ রঙের ফুল। ঢাকার প্রায় সব উদ্যান ও পার্কে, পরিত্যক্ত স্থানে, পথপাশে হলুদ ফুল বেশি দেখা যায়। সে তুলনায় সাদা ও ইট-লাল রঙের ফুল দুস্প্রাপ্য। এ গাছের কাণ্ড নাতিদীর্ঘ, মসৃণ, সাদাটে ধূসর। চিরহরিৎ এগাছ অজস্র দীর্ঘ-রৈখিক পাতার ঘনবিন্যাসে এলায়িত, ছায়ানিবিড়ি ও সুশ্রী। কলকে নামটি ফুলের আকৃতির জন্যই। ফুলের নিচের অংশ সরু, নলাকৃতি, প্রায় সবুজ এবং মৌগ্রন্থিধর। ফুল সুগন্ধি। পাপড়ি সংখ্যা ৫, মাইকের মতো। এটুকু বর্ণনা থেকেও বোঝা যায় করবী এবং কলকে একেবারেই আলাদা দুটি গাছ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরসহ ইসরায়েলে জোড়া হামলা

ঈদুল আজহা : ট্রেনের ২ জুনের টিকিট বিক্রি আজ

সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি নিহত

জনতার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব কী, জানালেন ইশরাক 

‘জাতীয় ঐক্য টিকিয়ে রাখতে সেক্রিফাইসিং মেন্টালিটি জরুরি’

‘দেশ কোনো ধরনের রাজনৈতিক ঐক্যের পথে নাই’

মধ্যরাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের পোস্ট

গাজা সমর্থন / তিন শক্তিশালী নেতার ওপর চটলেন নেতানিয়াহু

চিকিৎসক সংকটে ৩ মাস অস্ত্রোপচার বন্ধ

ছয় মাসে ৩২০০ বার যুদ্ধবিরতি ভেঙেছে ইসরায়েল

১০

২৩ মে : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১১

এসব কি জুলাই স্পিরিটের পরিপন্থি নয়?

১২

ইরানের বিরুদ্ধে তেলের ট্যাংকার ছিনতাইয়ের অভিযোগ

১৩

ইসরায়েলের হুমকিতে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করল ইরান

১৪

শুক্রবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৫

২৩ মে : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৬

পরিবেশ রক্ষায় রাষ্ট্রনায়ক জিয়ার পদক্ষেপ ছিল যুগান্তকারী : মিফতাহ সিদ্দিকী

১৭

স্বাস্থ্য পরামর্শ / রক্তদাতার যত্ন: সজীব শরীর, সচেতন জীবন

১৮

‘আমি যেন বার বার ফিরে আসতে পারি আপনাদের হৃদয়ে’

১৯

‘টাঙ্গুয়ার হাওরে টুরিস্ট পুলিশের তথ্যসেবা কেন্দ্র করা হবে’

২০
X