কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনে ঐতিহ্যগতভাবে চলে আসা ইদুল আজহায় কোরবানি দেওয়ার প্রথা সম্প্রতি, বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন নবনিযুক্ত ডেপুটি হাইকমিশনার শাবাব বিন আহমেদ। নতুন ডেপুটি হাইকমিশনারের এ পদক্ষেপে কলকাতা মিশনে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হলে জরুরি ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে উচ্চ পর্যায় থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এমনটা জানা যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, দ্য হেগে নিযুক্ত মিনিস্টার (স্থানীয়) শাবাব বিন আহমেদকে ঢাকায় বদলির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। অতএব,বাংলাদেশ দূতাবাস দ্য হেগ এ আপনার বর্তমান দায়িত্বভার ত্যাগ করে অনতিবিলম্বে সদর দপ্তর ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এছাড়া গত ২১ নভেম্বর তারিখে আপনার অনুকূলে জারীকৃত বাংলাদেশ উপহাইকমিশন কোলকাতাতে উপহাইকমিশনার পদে আপনার বদলির আদেশ বাতিল করা হলো। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এ আদেশ জারি করা হলো।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র কালবেলার এই প্রতিবেদককে বলেন, ধর্মীয় উৎসব (ইদুল আজহা) ঘিরে ডেপুটি হাইকমিশনারের এমন সিদ্ধান্তে অনেকটাই বিব্রত হয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে তার এমন বক্তব্য দেয়াকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাকে কবে ফেরানো হবে এমন প্রশ্নে বলা হয়, শাবাব আহমেদকে বর্তমান দায়িত্বভার ত্যাগ করে অনতিবিলম্বে আসতে বলা হয়েছে অর্থাৎ তিনি যত দ্রুত পারেন দেশে ফিরবেন। কিন্তু যারা বিদেশে মিশনগুলোতে আছেন তারা চাইলেই এক দিনের নোটিশে দেশে ফিরতে পারেন না। তবুও তিনি দ্রুতই ফিরেন এমনটাই চাওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, কলকাতা মিশনে যোগদানের আগেই কোরবানি বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন ডেপুটি হাইকমিশনার শাবাব বিন আহমেদ। যদিও কলকাতা মিশনে কোরবানি করার রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে কলকাতা মিশনে কোরবানি হয়ে আসছে। প্রতিবছরই পাঁচ থেকে সাতটি গরু এবং ছাগল কোরবানি করা হয়। এই কোরবানির গোশতের একটি বড় অংশ বিভিন্ন এতিমখানায় পাঠানো হয়। তা ছাড়া মিশনের চারপাশে বসবাসকারী মানুষের প্রায় ৯০ ভাগই মুসলিম। ফলে তার এমন বক্তব্যকে ভালোভাবে নেয়নি মিশনের কর্মকর্তারা এবং অন্তর্বর্তী সরকার। ইতোমধ্যেই তার এমন বক্তব্য দেওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে নিশ্চিত করে একই সূত্র বলছে, তার এমন বক্তব্যে যেহেতু কলকাতা মিশনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে এবং সরকারও বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে দেখছে ফলে এ নিয়ে আরো অসন্তোষ যেন সৃষ্টি না হয় তাই এমন সিদ্ধান্ত।
নতুন মিশনপ্রধান এখন হেগে মিনিস্টার (রাজনৈতিক) হিসেবে কর্মরত আছেন। গত জানুয়ারি মাসে ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে তার কলকাতায় পোস্টিং অর্ডার হয়। আগামী জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে তার দায়িত্ব নেওয়ার কথা থাকলেও আজ(বৃহস্পতিবার) অফিসিয়ালি তার এই পোস্টিং বাতিল হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কলকাতার নবনিযুক্ত ডেপুটি হাইকমিশনার যখন এমন নির্দেশ দেন তখন দূতাবাস কর্মকর্তারা তাকে মিশনের কোরবানির বিষয়টি নিয়ে এর স্পর্শকাতরতার কথা বারবার তুলে ধরে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে অপারগতা জানান। একপর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নতুন মিশনপ্রধানকে প্রয়োজনে কোরবানির শেষে দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি ঈদের আগেই দায়িত্ব নেবেন এবং কোরবানির সব ধরনের প্রস্তুতি বন্ধ করতে বলেন। আর এতেই সবাই ক্ষিপ্ত হোন।
তবে এ নিয়ে শাবাব বিন আহমেদ নিজের সপক্ষে বিভিন্ন মহলে জানিয়েছিলেন, কলকাতা ছাড়া আর কোনো মিশনে কোরবানি হয় না। আমি এর আগে আরো পাঁচটি মিশনে দায়িত্ব পালন করেছি। কোথাও কোরবানি করা হয় না। আমরা কূটনীতিকরা দেশের জন্য কাজ করি। আমরা যেখানে কাজ করব, সেখানকার পরিবেশ পরিস্থিতির কথা আমাদের মাথায় রাখা দরকার। তিনি বলেন, আমাদের স্বাগতিক দেশের রীতিনীতি মেনে চলা উচিত। কূটনীতিক হিসেবে হোস্ট কান্ট্রির আস্থা অর্জন করা জরুরি। তিনি আরো বলেন, আমাদের কলকাতা মিশনের নিরাপত্তায় ২৫ জনের মতো নিরাপত্তাকর্মী থাকে। তারা তো গরুকে পূজা করে। একবার ভেবে দেখেছেন, তারা যাকে পূজা করে, যখন আমরা সেটাকে জবাই করি, তাদের মনের অবস্থা কী হয়? এগুলো আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
মন্তব্য করুন