বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতায় দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৬ হাজার ৭৯৩ জন। তাদের মধ্যে ৩৭৪ জনের মৃত্যু হয় এবং ৫ হাজার ৯৭০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি থেকে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিতে হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি কোটা আন্দোলন কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘাতে দেশের সরকারি হাসপাতাল থেকে পাওয়া আহত ও নিহতের তথ্যের ভিত্তিতে এ তথ্য বিবরণী তৈরি করা হয়েছে। বেশিরভাগ নিহতের লাশ আইনানুগভাবে ময়নাতদন্ত করে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে কিছু লাশ মৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে আসা লোকজন জোরপূর্বক নিয়ে গেছেন।
মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই তথ্য বিবরণীতে ১৮ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৭৪টি হাসপাতালের তথ্য সংযুক্ত করা হয়েছে। এই পাঁচ দিনে এসব হাসপাতালে ৯ হাজার ৯৫২ জন আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। এর মধ্যে ৩ হাজার ৭৬ জনকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসাদের মধ্যে ৭১ জনই ছিলেন মৃত এবং ১৩২ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
চিকিৎসা নিতে আসা আহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী ৪৩৮ জন, পোশাককর্মী ৫৩, দোকানকর্মী ২৫৯, চাকরিজীবী ২০২ এবং অন্যান্য ৩ হাজার ৭৯ জন।
এদিকে গত ৪ আগস্ট সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩ হাজার ৬৩৬ জন আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিতে আসেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৩২৯ জনকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়েছে, যাদের অনেকে এখনো চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে ১২০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৮১ জনই গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে আহত হয়ে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজার ৪৮৫ এবং মৃত্যু হয়েছে ৪৪ জনের; ময়মনসিংহ বিভাগে আহত ৮৮ এবং মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের; রাজশাহী বিভাগে আহত ৬৬ এবং মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের; রংপুর বিভাগে আহত ৫৪৩ এবং মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের; খুলনা বিভাগে আহত ৪১৩ এবং মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের; বরিশাল বিভাগে আহত ২৬৭ এবং মৃত্যু হয়েছে ২ জনের; চট্টগ্রাম বিভাগে আহত ৪৯৭ এবং মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের; সিলেট বিভাগে আহত ২৭৭ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এগুলো শুধু সরকারি হাসপাতালে আহত হয়ে যারা এসেছেন এবং চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের হিসাব। এর বাইরে অনেকে আহত হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। যারা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাদের অনেকের অবস্থা বেশ জটিল। অনেকের হাত-পা অঙ্গহানি ঘটেছে। অনেকের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকের শরীরের অভ্যন্তরীণ নানা অর্গান গুলিবিদ্ধ হওয়ায় কেটে ফেলতে হয়েছে। তবে সেই হিসাব করা সম্ভব হয়নি।
গত মাসের ১৮ থেকে ২৩ তারিখ পর্যন্ত যেসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮৮ জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২১ জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ২১ জনের মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে ১৯ জুলাই, দুজনের ২০ জুলাই এবং বাকি দুজনের মৃত্যুর তারিখ উল্লেখ নেই। অন্যদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮৮ জনের মধ্যে ৯ জনের লাশ আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে হস্তান্তর করা হয়েছে।