মৃত্যু জীবনের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। জন্ম নিলে একদিন মারা যেতে হবে। মায়াঘেরা দুনিয়ার রূপ-রঙ ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমাতে হবে—যেখানে কেউ কারও বন্ধু হবে না, হবে না শত্রুও। নিজের দায়িত্ব নিজেই নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে রাব্বুল আলামিন মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং তোমরা নিজ নিজ কাজের প্রতিফল সম্পূর্ণভাবেই কিয়ামতের দিন পাবে।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৮৫, সুরা আনকাবুত : ৫৭)
সুরা নাহলে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অতঃপর নির্ধারিত সময়ে যখন তাদের মৃত্যু এসে যাবে, তখন এক মুহূর্তও বিলম্বিত কিংবা ত্বরান্বিত করতে পারবে না।’ (আয়াত : ৬১)
মৃত্যুর পর পরকালীন জীবনের প্রথম মঞ্জিল হচ্ছে কবর। যারা এ মঞ্জিল থেকে সহজে মুক্তি পাবেন, তাদের বাকি মঞ্জিলগুলো সহজ ও আরামদায়ক হবে। আর যারা এ মঞ্জিলে শাস্তি পাবেন, তাদের পরবর্তী মঞ্জিলগুলো আরও ভয়ংকর হবে।
হাদিসে এসেছে, কেউ মৃত্যুবরণ করলে দ্রুত তার গোসল, কাফন, জানাজা ও দাফনের কাজ যথাসম্ভব সম্পন্ন করা উচিত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা মৃত ব্যক্তিকে তাড়াতাড়ি দাফন করবে। যদি সে নেক ব্যক্তি হয়, তবে তাকে তোমরা তার কল্যাণের নিকটবর্তী করে দিলে; আর যদি অন্য কিছু হয়, তবে মন্দকে তোমাদের কাঁধ থেকে সরিয়ে দিলে। (বোখারি : ১৩১৫)
তবে, তিন সময়ে মৃতদের দাফন করতে নিষেধ করা হয়েছে। হজরত উকবা বিন আমের (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আমাদের তিন সময়ে নামাজ পড়তে ও মুর্দা দাফন করতে নিষেধ করেছেন।
নিষিদ্ধ সময়গুলো হলো—
১. ১. সূর্য উঠার সময়, যতক্ষণ না তা পুরোপুরি উঁচু হয়ে যায়।
২. সূর্য ঠিক মাথার উপর আসার পর থেকে একটু ঢলে না যাওয়া পর্যন্ত।
৩. সূর্য ডোবার কাছাকাছি হওয়া থেকে ডুবে না যাওয়া পর্যন্ত। (মুসলিম : ৮৩১)
প্রসঙ্গত, লাশ দাফনের আগে সাধারণত জানাজা পড়া হয়। এ ক্ষেত্রে অনেককে দেখা যায় যে, তারা জানাজার নামাজ আদায়ের সময় জুতা খুলে তার ওপর দাঁড়ান। আবার অনেকে জুতাসহই নামাজ পড়ে নেন। তাই প্রশ্ন জাগে, এভাবে জুতা পরে নামাজ পড়া জায়েজ আছে কি? এক্ষেত্রে সঠিক পন্থা কী?
এ প্রসঙ্গে মাসিক আল কাউসারে বলা হয়েছে, জায়গা পাক হওয়া নামাজে জানাজার জন্যও শর্ত। তাই নামাজি ব্যক্তির জুতো ও পায়ের নিচের মাটি উভয়টি যদি পবিত্র হয়, তবে জুতা পরেও জানাজা পড়া জায়েজ আছে। এ ক্ষেত্রে দাঁড়ানোর স্থান পবিত্র হলে জুতা খুলেও দাঁড়াতে পারবে। আর দাঁড়ানোর স্থান অথবা জুতার নিচে অপবিত্র হওয়ার আশঙ্কা থাকলে জুতা খুলে তার ওপর দাঁড়িয়ে নামাজ পড়বে। কেননা জুতার ওপরের অংশ সাধারণত পাকই থাকে।
প্রকাশ থাকে যে, জুতার নিচের অংশ যেহেতু অপবিত্র হওয়ার আশঙ্কাই বেশি, তাই মসজিদের বাইরে জানাজা পড়লে জুতা পায়ে দিয়ে নামাজ না পড়াই উচিত। এক্ষেত্রে সতর্কতা হলো, জুতা খুলে তার ওপর দাঁড়ানো।
সূত্র : আলবাহরুর রায়েক : ১/২৬৮, ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/৬২; শরহুল মুনইয়াহ ২০৮, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ২/৩১
মন্তব্য করুন