শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতিবঞ্চিত ১১৭ কর্মকর্তা এরই মধ্যে উপসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। দু-এক দিনের মধ্যে তাদের মধ্য থেকে যুগ্ম সচিব এবং পদোন্নতিবঞ্চিত যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। দুই পদে প্রায় ২৫০ জনের কপাল খুলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক কারণে গত ১৬ বছরে প্রশাসনে পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন কয়েকশ কর্মকর্তা। তাদের বেশিরভাগই বিএনপি-জামায়াত ঘরানার। তবে কেউ কেউ নিরপেক্ষও ছিলেন। অথচ তাদের বিএনপি-জামায়াত সন্দেহ করে সরকার পদোন্নতি দেয়নি। গোয়েন্দা তদন্ত প্রতিবেদনে তাদের নামের সঙ্গে ‘নেগেটিভ’ উল্লেখ থাকায় বঞ্চিত করা হয়। অনেককে বছরের পর বছর ওএসডি থাকতে হয়েছে। অনেককে বাধ্যতামূলক অবসরেও পাঠিয়েছে শেখ হাসিনার প্রশাসন।
কর্মকর্তারা জানান, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার কমপক্ষে দেড় শতাধিক উপসচিবকে যুগ্ম সচিব এবং শতাধিক যুগ্ম সচিবকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার কাজ চলছে। শেখ হাসিনার পতনের পর পরই বঞ্চিত কর্মকর্তারা তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সোচ্চার হন। তারা মূলত বিএনপি ও জামায়াত ঘরানার। তাদের পদোন্নতি দিয়ে ক্ষোভ কমানোর চেষ্টা চলছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে বিসিএস ১১তম ব্যাচ থেকে ২৯তম ব্যাচ রয়েছে। এরই মধ্যে উপসচিব পদে পদোন্নতি হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতি হবে। তাদের মধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে উপসচিব পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের অনেকেই যুগ্ম সচিব হবেন। এ ছাড়া বঞ্চিত উপসচিবরাও যুগ্ম সচিব হওয়ার তালিকায় আছেন। আর যুগ্ম সচিবরা হবেন অতিরিক্ত সচিব।
পদোন্নতিবঞ্চিত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ফোরামের সভাপতি বিসিএস ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের গত ১৬ বছরের বঞ্চনা দূর করতে হবে। যারা যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতিযোগ্য, তাদের দ্রুত পদোন্নতি দিতে হবে। আমরা দীর্ঘ ১৬ বছর বঞ্চনার শিকার। সুতরাং আমাদের আর ধৈর্যের পরীক্ষা নেওয়া ঠিক হবে না।
ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরই বঞ্চিত কর্মকর্তারা তাদের অধিকার নিয়ে সরব হতে শুরু করেন। প্রতিদিনই তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগে জড়ো হচ্ছেন।
এর আগে সরকার পতনের পর গত ৬ আগস্ট বেইলি রোডে অফিসার্স ক্লাবে জরুরি বৈঠক করেন পদোন্নতিবঞ্চিতরা। ওই বৈঠকে প্রায় ২০০ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। বঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি তালিকাও করেন তারা। ওই তালিকায় প্রায় ২৫০ জনের নাম আছে। সেখানে থেকে গত মঙ্গলবার রাতে ১১৭ জনকে উপসচিব পদোন্নতি দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়,বিসিএস ১১তম ব্যাচের ৪ জন, ১৩তম ব্যাচের ৮ জন, ১৫তম ব্যাচের ২১ জন, ১৭তম ব্যাচের ৮ জন, ১৮তম ব্যাচের ২২ জন, ২০তম ব্যাচের ২১ জন, ২১তম ব্যাচের ১০ জন, ২২তম ব্যাচের ৮১ জন, ২৪তম ব্যাচের ১২ জন, ২৫তম ব্যাচের ১২ জন, ২৭তম ব্যাচের ১৩ জন, ২৮তম ব্যাচের ১০ জন এবং ২৯তম ব্যাচের ২২ কর্মকর্তা বঞ্চিতের তালিকায় আছেন। তাদের মধ্যে যারা সিনিয়র সহকারী সচিব এবং যাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক ) মামলা নেই, মঙ্গলবার রাতে প্রথম দফায় তাদের ১১৭ জনকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।