বুধবার, ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১২ ভাদ্র ১৪৩২
রাজকুমার নন্দী
প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৪, ০২:৫২ এএম
আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০২৪, ০৮:১৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে প্রস্তুতি জোরেশোরে

উন্নত চিকিৎসা
খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে প্রস্তুতি জোরেশোরে

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুক্ত খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিদেশে উন্নত সেন্টারে নিতে চায় বিএনপি ও তার পরিবার। এ লক্ষ্যে জোরেশোরে চলছে প্রস্তুতি। চিকিৎসার জন্য কোন দেশে নেওয়া হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বুধবার বৈঠক করেন পরিবারের সদস্যরা। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকরা বাংলাদেশে এসে খালেদা জিয়ার যকৃতে ‘টিপস’ সম্পন্ন করায় প্রথম দিকে ওই দেশটি বিবেচনায় থাকলেও এখন তাকে ইংল্যান্ডে নিতে চান। উন্নত চিকিৎসার পাশাপাশি খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান এবং প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর পরিবার সেখানে থাকায় ইউরোপের এই দেশটিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন তারা। ইংল্যান্ডের পাশাপাশি জার্মানির বিষয়টিও খালেদা জিয়ার পরিবারের বিবেচনায় রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড ও বিএনপির একটি সূত্র বলছে, বেগম জিয়াকে চিকিৎসার জন্য সরাসরি ইংল্যান্ডে নাকি প্রাথমিকভাবে স্বল্প দূরত্বের কোনো দেশে নেওয়া হবে, তা মূলত তার শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করবে। এই মুহূর্তে আকাশপথে টানা ১০-১৫ ঘণ্টা ভ্রমণ করার মতো তার শারীরিক সক্ষমতা আছে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে তাকে বসুন্ধরার এভারকেয়ার অথবা বিশেষায়িত অন্য কোনো হাসপাতালে নেওয়া হতে পারে। দীর্ঘ ভ্রমণের ধকল সামলানোর অবস্থায় থাকলে তাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে মোটেই কালক্ষেপণ করবে না পরিবার। অন্যথায় ওই হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সম্পন্ন অথবা আকাশপথে স্বল্প দূরত্ব বিবেচনায় প্রাথমিকভাবে তাকে সিঙ্গাপুর কিংবা থাইল্যান্ডে নেওয়া হতে পারে। এরপর শারীরিক অবস্থার উন্নতি সাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে পরে ইংল্যান্ডে নেওয়া হতে পারে।

খালেদা জিয়ার পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক বিএনপি নেতা বলেন, ‘ফ্লাইটে ওঠা এবং নামার সময় এক ধরনের চাপ থাকে। ম্যাডাম এই মুহূর্তে সেটা সহ্য করতে পারবেন কি না, চিকিৎসকরা তা যাচাইয়ের জন্য কয়েকদিনের মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। দীর্ঘ ভ্রমণের ধকল সামলানোর মতো অবস্থায় থাকলে দ্রুতই তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হবে। সেক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে ভিসা প্রসেসিংয়ের কাজ শুরু করা হবে। এ কাজে দু-তিন দিন সময় লাগবে। ম্যাডামের পরিবার তাকে ইংল্যান্ডে নিতে চায়।’

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরই উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার আলোচনা আবার শুরু হয়। তখন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার প্রতিনিধির কাছে তার নবায়নকৃত মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) হস্তান্তর করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরিবারের কয়েকজন সদস্য ও চিকিৎসকের ভিসার আবেদনও করা হবে।

প্রায় দেড় মাস এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত বুধবার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ফিরোজায় ‘হঠাৎ অসুস্থ বোধ করায়’ ৮ জুলাই ভোররাতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন হাসপাতাল থেকে স্থায়ী মুক্তির সুসংবাদ পান তিনি।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বাসায় চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকবেন তিনি। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হবে। সেই কাজও চলছে।’ তিনি জানান, ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য কিংবা জার্মানির মাল্টি ডিসিপ্লিনারি অ্যাডভান্স সেন্টারে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। কিন্তু এসব দেশে দীর্ঘযাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় শারীরিক সুস্থতা তার নেই। তিনি ভ্রমণ করার মতো সুস্থতা লাভ করলেই তাকে বিদেশে নেওয়া হবে।

৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসের পাশাপাশি ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস ছাড়াও হৃদরোগ, ফুসফুস, কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। গত বছরের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাংলাদেশে এসে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার যকৃতে ‘ট্র্যান্সজাগুলার ইন্ট্রাহেপেটিক পোরটোসিসটেমিক শান্ট (টিপস)’ সম্পন্ন করেন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা এর আগে একাধিকবার জানান, বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে নিয়ে লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া তিনি পুরোপুরি সুস্থ হবেন না। তার লিভারে টিপস সম্পন্ন করার পরও একই কথা বলেন চিকিৎসকরা। তখন খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘টিপস’ করার ফলে তার লিভারে রক্তক্ষরণ এবং পেটে পানি জমার উপশম হবে। স্থায়ীভাবে বিএনপি চেয়ারপারসনের লিভার প্রতিস্থাপন প্রয়োজন, এটা তার আগের ধাপ।

খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি হলেও তিনি অসুস্থ থাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে দলের কোনো নেতাকর্মীকে গুলশানে তার বাসা কিংবা বাসার সামনে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা মনে করেন, তিনি লিভার সিরোসিসসহ একাধিক জটিল রোগে আক্রান্ত। তাই এই সময়ে বেগম জিয়ার সঙ্গে বাইরের একাধিক লোকের সাক্ষাৎ করা সমীচীন নয়। তাদের মাধ্যমে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটতে পারে। বিএনপির মিডিয়া সেল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন ছাড়া কেউ তার বাসায় যাননি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভারতে প্রয়াত ক্রিকেটারদের স্ত্রীরা পাবে অনুদান

রাজধানীতে একক ব্যবস্থায় বাস চলবে : প্রেস উইং

ভিনিকে বিক্রি করে দিতে বললেন রিয়াল কিংবদন্তি

নতুন বিচারপতিদের মধ্যে সংখ্যালঘু নেই, ঐক্য পরিষদের ক্ষোভ

বিসিবির হাতে বিপিএলের স্পট ফিক্সিং তদন্ত প্রতিবেদন

ফেসবুকের বিরুদ্ধে জিডি করেছেন মাওলানা মামুনুল হক

চুল পড়া রোধ করবে যে জিনিস

ডাকসু নির্বাচন, আচরণবিধি সম্পর্কিত অভিযোগ নিষ্পত্তিতে টাস্কফোর্স গঠন

সাদাপাথরকাণ্ডে এবার পুলিশে বড় রদবদল

৪৫ বছর ধরে ঝুপড়ি ঘরে থাকা সেই দম্পতির পাশে ইউএনও

১০

শুনানিতে বিএনপি-এনসিপির মারামারির ঘটনায় ইসির জিডি

১১

পাঁচ মাসে ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রস্তাব পেল বিডা

১২

নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতেই হতে হবে : চরমোনাই পীর

১৩

৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণসহ হত্যায় ফুফাতো ভাইয়ের যাবজ্জীবন

১৪

বুয়েটের শিক্ষার্থীদের ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা

১৫

বিমানের নতুন চেয়ারম্যান উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন

১৬

এখন হয় মনোনয়ন বাণিজ্য, পিআরে হবে এমপি বাণিজ্য : খোকন

১৭

ডাকসু নির্বাচন / আচরণবিধি সম্পর্কিত অভিযোগ নিষ্পত্তিতে টাস্কফোর্স গঠন

১৮

দ্বিতীয় ইরান হয়ে উঠছে ইয়েমেন, হিসাব মেলাতে পারছে না ইসরায়েল

১৯

কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় প্রাণ গেল ২ জনের

২০
X