একক নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঠিক করছে জাতীয় পার্টি। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের তালিকা ধরে প্রার্থী বাছাই করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক আসনে প্রার্থীদের খসড়া তালিকা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, নির্বাচনে ২০টির বেশি আসনে আসছে নতুন মুখ। বাকি আসনেও প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শেষ হবে নভেম্বরে। দলীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, দলের হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে বাদ পড়তে পারেন জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও বিরোধী দলের চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা। অসুস্থতার কারণে রওশন এরশাদের বিকল্প চিন্তা করা হচ্ছে। আর রাঙ্গা জাপা থেকে বহিষ্কৃত হওয়ায় রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনে দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাতিজা সাবেক এমপি আসিফ শাহরিয়ারকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। প্রার্থী চূড়ান্ত করার কাজে নিয়োজিত জাপার একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত একক নির্বাচনের সিদ্ধান্তে অনড় দলটি। এই চিন্তা থেকেই পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নির্দেশে প্রার্থীদের সম্ভাব্য তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে। অনেক আসনে রয়েছেন একাধিক প্রার্থী।
অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে চিফ হুইপের পদ থেকেও রাঙ্গাকে সম্প্রতি দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এরশাদের বোনের ছেলে রাঙ্গা এখন মামি রওশনের আশ্রয়ে আছেন। আগামী নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়ার বিষয়টি হয়তো আঁচ করতে পেরেছেন এই পরিবহন মালিক নেতা। তাই সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর রংপুর সফরের সময় বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে নিজের ছবি দিয়ে পোস্টার করে পুরো শহর ছড়িয়ে দেন তিনি। বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। রাঙ্গার মতামত জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
যদিও দলের অধিকাংশ সংসদ সদস্য আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকার পক্ষে। তবে জাপার এ-সংক্রান্ত সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী বৈঠকে জোট করা না করার বিষয়ে জি এম কাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন সবাই। অন্যদিকে রওশন প্রকাশ্যেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
পার্টির একাধিক সংসদ সদস্য বলেন, ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে জোট করলে সমঝোতার ভিত্তিতে বেশি আসন পাওয়া সম্ভব। একক নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভরাডুবি হতে পারে। অর্থাৎ আসন কমবে। সেক্ষেত্রে বিএনপি নির্বাচনে না এলে বিরোধী দলে যাওয়া জাতীয় পার্টির জন্য কষ্টকর হতে পারে।
দলের কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, বর্তমানে পার্টির নির্বাচিত সংসদ সদস্য ২৩ জন। চারজন সংরক্ষিত আসনের সদস্য। সব মিলিয়ে ২৭ জন সংসদ সদস্য নিয়ে সংসদে বিরোধী দলের প্রতিনিধিত্ব করছে জাতীয় পার্টি।
পার্টির নেতারা জানান, বর্তমানে নির্বাচিত ২৩ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে আগামী নির্বাচনে দুজন বাদ পড়তে পারেন। দীর্ঘসময় এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদের শরীরিক অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত তিনি সুস্থ থাকবেন কি না, এ নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। সর্বশেষ গত ৮ আগস্ট দুই মাস থাইল্যান্ডে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন তিনি। যদিও এখন পর্যন্ত ময়মনসিংহ-৪ আসনে জাপার প্রার্থী তালিকায় তার নাম রয়েছে। শারীরিক পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে এই আসনে বিকল্প চিন্তা করা হবে বলে জানা গেছে। নেতৃত্ব নিয়ে জি এম কাদেরের সঙ্গে রওশনের দা-কুমড়া সম্পর্ক থাকলেও বিরোধী দলের নেতাকে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে না। তবে দীর্ঘদিন তিনি এলাকায় যান না। সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগও নেই। ময়মনসিংহের জাতীয় পার্টিতে দেখা দিয়েছে বড় রকমের ভাঙন। এই বিবেচনায় নিজ এলাকায় রওশনের জনসমর্থন একেবারেই তলানিতে ঠেকেছে বলে দাবি পার্টির অনেকের।
জানা গেছে, পিরোজপুর সদর আসনে নতুন প্রার্থী হিসেবে অ্যাডভোকেট নজরুলের নাম চিন্তা করা হচ্ছে। পাবনা-৩ (আটঘরিয়া) আসনে নতুন মুখ রেজাউল করিম খোকন। ঢাকা-১৭ আসনে মেজর (অব.) সিকদার আনিসুর রহমান, ঢাকার হাজারীবাগ-কামরাঙ্গীরচর আসনে শাজাহান মিয়া, নাটোর সদরে ব্যারিস্টার আসিফের নাম তালিকায় রয়েছে। দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলার স্বস্ত্রীক মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন। পটুয়াখালী সদর আসনে রুহুল আমিন হাওলাদার ও বরিশালের বাকেরগঞ্জে রত্না আমিন হাওলাদার মনোনয়ন পেতে পারেন।
রংপুর থেকে নির্বাচন করার চিন্তা করছেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের। যদিও বর্তমানে তিনি লালমনিরহাট-৩ আসন থেকে নির্বাচিত। এরশাদের মৃত্যুর পর রংপুর-৩ আসনে এমপি হন তার ছেলে সাদ এরশাদ। তাই জেলার অন্য কোনো আসন থেকে নির্বাচন করা ছাড়া বিকল্প নেই। লালমনিরহাট-৩ আসনে নতুন প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টি অনেকটাই চূড়ান্ত। এই প্রেক্ষাপটে জাপার ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত রংপুরের অন্য যে কোনো আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন পার্টির প্রধান। সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ও জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও সরাসরি ভোটে অংশ নিতে পারেন বলে জানা গেছে।
জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু কালবেলাকে বলেন, একক নির্বাচনের চিন্তা থেকে ৩০০ আসনে প্রার্থী তালিকা হচ্ছে। খসড়া তালিকা তৈরির পর নির্বাচনের আগে তা চূড়ান্ত হবে। শেষ সময় পর্যন্ত প্রার্থী তালিকা পরিবর্তন হতে পারে বলেও জানান তিনি। তবে সবকিছু জাপার রাজনৈতিক অবস্থান ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।
দলের একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য কালবেলাকে জানিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি একক নির্বাচন করবে, এর শতভাগ নিশ্চয়তা নেই। তবে প্রস্তুতি হিসেবে খসড়া তালিকা হচ্ছে। দল যদি বড় দুটি রাজনৈতিক দলের যে কোনো একটির সঙ্গে জোটে যায়, তাহলে এই তালিকা থাকবে না। তখন দরকষাকষি করে সমঝোতার ভিত্তিতে আসন বণ্টন হবে।
মন্তব্য করুন