এ জেড ভূঁইয়া আনাস
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৫, ০২:৩৬ এএম
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৫, ১২:২৭ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

৫ হাজার কোটি জামানতে ২৮ হাজার কোটি ঋণ

‘দরবেশের’ ব্যাংক লুট
৫ হাজার কোটি জামানতে ২৮ হাজার কোটি ঋণ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ৩১টি কোম্পানিকে ২৮ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ১২টি ব্যাংক ও এক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এসব ঋণের বিপরীতে মাত্র ৪ হাজার ৯৩২ কোটি টাকার জামানত রাখা হয়েছে। অর্থাৎ প্রভাব খাটিয়ে অল্প জামানত রেখেই ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ বের করে নিয়েছেন আর্থিক খাতের ‘দরবেশ’ খ্যাত সালমান এফ রহমান। বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বেক্সিমকো গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বল্প জামানতে বড় ঋণ দেওয়ার তালিকায় সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। জনগণের টাকায় গঠিত এই ব্যাংক মাত্র ১ হাজার ৭ কোটি টাকা জামানতে সালমান এফ রহমানের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ২৩ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকও কোনো অংশেই কম যায় না। মাত্র ৬২ কোটি টাকা জামানতে বেক্সিমকো লিমিটেডকে ব্যাংকটি ঋণ দিয়েছে ৪২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রায় ১ হাজার ১৮৭ কোটির জামানতে সোনালী ব্যাংক ঋণ দিয়েছে ১ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা।

বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে এগিয়ে আছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক। কোনো জামানত ছাড়াই ব্যাংকটি বেক্সিমকো লিমিটেডকে ৩৩৩ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে। এর পরের অবস্থানে থাকা এবি ব্যাংক মাত্র সাড়ে ৭ কোটি টাকা জামানতে বেক্সিমকো গ্রুপভুক্ত চারটি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছে ৯৩৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০৩ কোটির জামানতে এক্সিম ব্যাংক বেক্সিমকোকে ঋণ দিয়েছে ৪৯৭ কোটি টাকা।

এ ধরনের ঋণ দেওয়া যায় কিনা জানতে চাইলে বাংলাদেশে ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান কালবেলাকে বলেন, কোনো ব্যাংকের ঋণ বিতরণের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে সহায়ক জামানত নিয়েই ঋণ বিতরণ করা দরকার। তবে কোনো প্রতিষ্ঠান যদি হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এবং এরপর ব্যাংক থেকে ১-২শ’ কোটি টাকার ঋণ চায়, তাহলে ওই ঋণে সহায়ক জামানত না হলেও চলে। মূল কথা হচ্ছে, কোনোভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনেই সব ব্যাংকে ঋণ বিতরণ করতে হবে। না হয় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে, বেক্সিমকোকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্রও দেখা গেছে। এ ক্ষেত্রে শতভাগ বা তার চেয়ে বেশি জামানত নিয়ে ঋণ দিয়েছে কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে তালিকায় আছে বাংলাদেশ অবকাঠামো ফিন্যান্স ফান্ড লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ১১০ কোটি টাকার জামানতে ঋণ দিয়েছে ৮৭ কোটি টাকা। প্রায় দ্বিগুণ জামানতে ৯৮৭ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে রূপালী ব্যাংক। এ ছাড়া শতভাগ জামানত নিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংক ৩১৫ কোটি, পদ্মা ব্যাংক ২৪ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ৬১ কোটি, বিডিবিএল ৯৪ কোটি এবং আইএফআইসি ব্যাংক দিয়েছে ৭৮ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বেক্সিমকো গ্রুপভুক্ত ভ্যাকসিনকো লিমিটেড ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ ব্যাংক এবং এক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৫ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা বের করে নেয়। এ ছাড়া বেক্সিমকো ফ্যাশন ৯১৮ কোটি, বেক্সিমকো গার্মেন্টস লিমিটেড ৮৫৯ কোটি, রিসেন্ট ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন লিমিটেড ১ হাজার ৪৯৮ কোটি, স্কর্প অ্যাপারেলস লিমিটেড ১ হাজার ২৬ কোটি, এসেস ফ্যাশন লিমিটেড ১ হাজার ১৩৫ কোটি, ইন্টারন্যাশনাল নিউটওয়ার অ্যান্ড অ্যাপারেলস লিমিটেড ১ হাজার ৮২৩ কোটি, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড ১ হাজার ৩৪০ কোটি, শাইনপুকুর গার্মেন্টস লিমিটেড ৭৬৭ কোটি, আরবান ফ্যাশন লিমিটেড ৭০৭ কোটি এবং ইয়োলো অ্যাপারেলস লিমিটেড ৯৫৪ কোটি টাকার ঋণ হাতিয়ে নিয়েছে। এর বাইরে আরও ১৬ প্রতিষ্ঠানের নামে ১১ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা বের করে নেওয়া হয়েছে। এই ঋণের পুরোটাই বেরিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক থেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জনতা ব্যাংক থেকে বেক্সিমকো গ্রুপভুক্ত অ্যাডভেঞ্চার গার্মেন্টস লিমিটেড ৫৬৬ কোটি, অ্যাপোলো অ্যাপারেলস লিমিটেড ৮০১ কোটি, অটামলুপ অ্যাপারেলস লিমিটেড ৭৭২ কোটি, অ্যাপারেলস লিমিটেড ৮৯৩ কোটি, কসমপলিটন অ্যাপারেলস লিমিটেড ৮৫৬ কোটি, কোজি অ্যাপারেলস লিমিটেড ৮৬০ কোটি, কাঁচপুর অ্যাপারেন্স লিমিটেড ৭৫৫ কোটি, পিংক মেকার অ্যাপারেলস লিমিটেড ৮৪৯ কোটি, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেড ৭৮৭ কোটি, স্প্রিংফুল ৭৫৯ কোটি, হোয়াইটবে অ্যাপারেলস লিমিটেড ৮৭২ কোটি, মিড ওয়েস্ট গার্মেন্টস লিমিটেড ৮৬১ কোটি, পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেড ৮০০ কোটি, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেড ৮৩৬ কোটি এবং উইন্টার স্প্রিং গার্মেন্টস লিমিটেড ৭৬৭ কোটি টাকা বের করে নিয়েছে। এর বাইরে বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক থেকে ট্রাফিক্যাল ফ্যাশনস লিমিটেড ৪৯ কোটি টাকা বের করে নিয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, সালমান এফ রহমান সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি ব্যাংকগুলোকে যে জামানত দিয়েছেন তার বাইরে আরও জামানত চাওয়ার সাহস কারও ছিল নাকি? জামানত না দিলেও তিনি প্রভাব খাটিয়ে অনেক সময় ঋণ বের করে নিয়েছেন। তিনি দেশে লুটপাটের অর্থনীতি কায়েম করেছেন। এসব অর্থ ফেরত আসার সম্ভাবনাও নেই।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মতলব সেতুর জয়েন্টে ফাটল, আতঙ্কে লাখো মানুষ

প্রথমবার একযোগে তিন দেশে এইচআইভির টিকাদান শুরু

দুপুর পর্যন্ত যেমন থাকবে ঢাকার আবহাওয়া

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

এলপি গ্যাসের দাম বাড়বে কি না জানা যাবে আজ

রাশিয়া-ইউক্রেন সমঝোতার ‘গতি বাড়ছে’

চাকরির সুযোগ দিচ্ছে এসএমসি, ৪২ বছরেও আবেদন

মোটরসাইকেল-অটোরিকশা সংঘর্ষে ২ বন্ধু নিহত

নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন কি না, জানালেন সড়ক উপদেষ্টা

সিরিয়ায় চাপ কমাতে ইসরায়েলকে থামতে বললেন ট্রাম্প

১০

পরোপকারী সঞ্জীবের এমন মৃত্যু কেউ মানতে পারছে না

১১

মঙ্গলবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১২

২ ডিসেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৩

ভারতের অনুমতি মিলল দুদিন পর, ভুটানের পথে ট্রানশিপমেন্ট

১৪

মোংলা বন্দরের ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপন

১৫

বরিশালে ৮ দলের বিভাগীয় সমাবেশ মঙ্গলবার

১৬

টঙ্গীতে জোড় ইজতেমায় আরও এক মুসল্লির মৃত্যু

১৭

দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হয়নি : বাবুল

১৮

পরবর্তী সরকারের প্রতি আসিফ নজরুলের আহ্বান

১৯

পাসপোর্ট অফিস থেকে রোহিঙ্গা যুবক আটক

২০
X