বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদের ছেলে সাঈদ ইউসুফ আহমদ। তিনি কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স বিভাগে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট লেভেলে পড়াশোনা করছেন, যিনি এ-লেভেলে বাংলাদেশে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। এবার এ-লেভেল শেষ করেই এ-লেভেলের পাঠ্যবই লিখে তাক লাগিয়েছেন মেধাবী সাঈদ।
সাঈদ ইউসুফ আহমদ জানান, তার পড়ালেখার ও দীর্ঘ জার্নির পেছনে রয়েছে নানা চড়াই-উতরাই। বিস্তারিত উল্লেখ করেন তার লেখা বই সম্পর্কে।
সাঈদ ইউসুফ বলেন, আমার জার্নি শুরু হয় মূলত নবম শ্রেণিতে (ও-লেভেলে)। তখন আমি বেশির ভাগ সময় ফুটবল খেলতাম। আমার স্বপ্ন ছিল একজন পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় হওয়ার এবং লিওনেল মেসির খেলাকে অনুসরণ করতাম। দিনে তিনবার খেলাধুলা করতাম যে কারণে সেভাবে পড়াশোনার সময় পেতাম না। পড়ালেখা কম করার জন্য এভারেজ গ্রেড নিয়ে পাস করছি। যদিও আমার বাবা-মা কখনো গ্রেড নিয়ে জানতে চাইতেন না। এমনকি আমিও উদ্বিগ্ন ছিলাম না।
তিনি জানান, দশম গ্রেডের শেষের দিকে যখন তিনি ও-লেভেলের (দশম শ্রেণি) প্রথম মক টেস্ট দেন, তখন এক সাবজেক্টে ফেল করেন এবং এটাই তার জীবনে প্রথম কোনো সাবজেক্টে এক নম্বরের জন্য অকৃতকার্য হওয়া। অ্যাকাউন্টিং সাবজেক্টে ৬০-এর মধ্যে ৫৯ পান এবং এটা তাকে অনেক আঘাত করে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ফেল করার কারণে তাকে অনেক নেতিবাচক ও কটাক্ষমূলক কথা শুনতে হয় উল্লেখ করে ইউসুফ জানান, অনেক চিন্তার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন পড়ালেখায় ফোকাস করার। এরপর তিনি দ্বিতীয় মক টেস্ট দেন এবং সর্বোচ্চ নম্বর অর্জন করেন।
সাঈদ আহমদ বলেন, আমি ব্যাপক পড়ালেখা শুরু করলাম। পড়ালেখা-সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো কিছু না বুঝলে অনেকেই আমার কাছে আসত বুঝিয়ে নেওয়ার জন্য। যে-ই আমার কাছে পড়ালেখা সংক্রান্ত সমস্যা বুঝিয়ে নিতে আসত, সে-ই বলে, ‘দোস্ত তুই কঠিন করে শুরু কর, তুই পড়ানো শুরু করে দে।’
প্রথমে আমি এই কথাকে দুষ্টুমি হিসেবে নিলেও পরে দেখি সবাই আমাকে পড়ানোর বিষয়ে উৎসাহ দিচ্ছে। তখন আমি ভাবলাম কিছু একটা হতে যাচ্ছে। 'এ এস' লেভেলের ফলাফল প্রকাশিত হলো এবং আমি বাংলাদেশের মধ্যে এক নম্বর স্থান অর্জন করলাম। এ বিষয়টা আমাকে ব্যাপক আত্মবিশ্বাস এনে দিল। এরপর 'এ-টু' লেভেলেও আমি দেশসেরা হলাম। পরে সিদ্ধান্ত নিলাম, সবাই যেহেতু পড়াতে বলছে, আমি ভবিষ্যতে শিক্ষকতা করব। এরপরই ভাবি শিক্ষার্থীদের পড়াব।
প্রথমে ভাবলাম কোচিং চালু করার। কিন্তু যেহেতু দেশের বাইরে চলে যাব, সে জন্য কোচিং করানো হয়নি। ফলে পরে দুটি ভিডিও বানাই, যার প্রতিটির সময় এক ঘণ্টার এবং সেগুলো কেউ দেখবে না ভেবে আর প্রকাশ করা হয়নি। এরপর আমি যেসব নোটস লিখেছিলাম, পরে অ্যাকাউন্টিংয়ের ওপর লেভেলের 'আন্ডারস্ট্যান্ডিং একাউন্টিং' নামে একটি বই লিখি। কিন্তু সমস্যা হলো, এই বই প্রকাশ করতে গিয়ে প্রচুর টাকার দরকার পড়ে।
পরে বিভিন্ন প্রকাশকদের কাছে যাওয়া শুরু করলেন সাঈদ। তার মা-বাবা প্রচুর টাকা খরচ করেন বইটি প্রকাশের জন্য।
তিনি বলেন, আমি এই বইয়ে কোনো লাভ করতে চাইনি। তবে অভিভাবকরা যতটুকু বিনিয়োগ করেছে, আমি তাদের সেটি ফেরত দিতে চাই। বিভিন্ন বইয়ের দোকানে বই বিক্রি করার আসল কারণ এটাই।
সাঈদ বলেন, আমি যখন এই বই প্রকাশের জন্য যতজন প্রকাশকদের কাছে গিয়েছি, তারা জিজ্ঞেস করেছে, তুমি কোথায় পড়ো? পিএইচডি ডিগ্রি করতেছ? এই বই লেখার কোনো দরকার আছে? তবে আমি মূলত একটি কারণেই বইটি লিখেছি। এ-লেভেলে পড়ার সময় সিলেবাস পরিবর্তন করা হয় এবং ২০১৭ সালে একটি নতুন ভার্সন উন্মুক্ত করা হয়; যা বাংলাদেশে সহজলভ্য ছিল না।
পরে আমি যখন ‘এ’ লেভেল দিচ্ছিলাম তখন আমি একটা বই কিনেছিলাম যেটার বাংলাদেশি মূল্য ছিল ছয় হাজার টাকা। ওই বইসহ আমি অনলাইনের বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য নেওয়া এবং যা শিখেছি তার মিশ্রণে এই বই লিখেছি। বইটির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রায় মাত্র ৫০০ টাকা।
তিনি বলেন, প্রথমে এই বই ছাপানোর জন্য আমি কাউকে পাইনি। পরে আমার শিক্ষক আশরাফ স্যারকে পাশে পাই। তিনি ভালো সমর্থন দেন। তার সমর্থন ছাড়া বইটি প্রকাশ করা কঠিন হতো।
মন্তব্য করুন