আলী ইব্রাহিম
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

গোপনে অধ্যাদেশের খসড়া, ক্ষুব্ধ শুল্ক-আয়কর কর্তারা

আন্দোলনের পরিকল্পনা
গোপনে অধ্যাদেশের খসড়া, ক্ষুব্ধ শুল্ক-আয়কর কর্তারা

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বৈষম্য নিরসনের দাবিতে আন্দোলনে নামেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক ও আয়কর বিভাগের ক্যাডার-নন ক্যাডার কর্মকর্তারা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিমের চুক্তি বাতিল করে সরকার। নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে আসেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তৎকালীন সচিব আব্দুর রহমান খান। পাশাপাশি এনবিআরকে সংস্কারের মাধ্যমে শক্তিশালী করতে সাবেক সচিব ও সংস্থাটির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদকে প্রধান করে একটি কমিটি করে দেয় সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুল্ক ও আয়কর ক্যাডারে কর্মকর্তাদের দুটি অ্যাসোসিয়েশন থেকে এ কমিটির কাছে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের সক্ষমতা বাড়ানোর নানা দিক উল্লেখ করে প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু সরকারের সংস্কার সংশ্লিষ্ট প্রতিটি কমিটি শুরু থেকে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করলেও এনবিআরের ক্ষেত্রে তা হয়নি। এ ক্ষেত্রে অতিগোপনে দেওয়া হয় সংস্কার প্রস্তাব। এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান ও সংস্কার কমিটির সদস্যরা ছাড়া সংস্কার নিয়ে অন্ধকারে রয়ে যান শুল্ক ও আয়কর বিভাগের ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে সংস্কার কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে গোপনে অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই ‘খসড়া’ কপি দেখে ক্ষোভে ফুঁসছেন এনবিআরের দুই ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

বিষয়টি নিয়ে গত শনিবার শুল্ক ক্যাডারদের সংগঠন বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশন বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) আয়োজন করে। এতে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বাকাএভও অংশ নেয়। গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক ক্যাডার কর্মকর্তা সভায় অংশ নেন। ইজিএমে বৈষম্যের নানা বিষয়ে তারা নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। একই সঙ্গে রাজস্ব নীতি বিভাগের পদ শুল্ক ও আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দিয়ে পূরণ হওয়ার কথা থাকলেও প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সেই দায়িত্বে আনা নিয়ে তারা প্রশ্ন তোলেন। তারা বলছেন, সারা বিশ্ব যেখানে স্পেশালাইজড নির্ভর হচ্ছে, সেখানে এনবিআর ভেঙে অন্য ক্যাডারের লোক দিয়ে পদ পূরণ করার শর্ত জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে শুল্ক ও ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা প্রাথমিকভাবে আজ সোমবার অর্থ উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারের সাবেক সচিব আব্দুল মজিদের মোবাইল ফোনে বারবার কল দিয়েও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানের মোবাইল ফোনে কল দিলে তারও সাড়া মেলেনি।

এদিকে, শুল্ক ও ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশন অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন ও বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশন ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মরত কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব নিয়োগের মতামত প্রদান করেছিল। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সূত্রে প্রাপ্ত খসড়ায় দেখা গেছে, অনুচ্ছেদ ৪(৩)-এ উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন যে কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিব নিযুক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে। এতে রাজস্ব নীতি প্রণয়নে কর ও শুল্ক ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যক্ষভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া রাজস্ব নীতি বিভাগের মৌলিক পদগুলোও শুল্ক ও কর ক্যাডার হতে পূরণের প্রস্তাব করা হলেও খসড়ার অনুচ্ছেদ ৪(৪) এ আয়কর, কাস্টমস, ভ্যাট, অর্থনীতি, ব্যবসায় প্রশাসন, গবেষণা, পরিসংখ্যান, প্রশাসন, অডিট, আইন সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তা হতে পূরণের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। যেখানে নীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন মৌলিক পদসমূহে বর্তমানে দায়িত্ব পালনরত রাজস্ব আহরণ, ব্যবস্থাপনা ও নীতি প্রণয়নে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের রাজস্ব নীতি বিভাগে সুনির্দিষ্টভাবে পদায়নের সুযোগও রাখা হয়নি। খসড়ার অনুচ্ছেদ ৯-এ রাজস্ব নীতি বিভাগে জনবল পদায়নের নিমিত্ত সুপারিশের লক্ষ্যে একটি কমিটির কথা উল্লেখ থাকলেও ধারা ৪(৪)-এ এমন কোনো কমিটির উল্লেখ নেই। খসড়ার অনুচ্ছেদ ৫-এর দফা (চ)-এ রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে কর আইন প্রয়োগ ও কর আহরণ পরিস্থিতি পরিবীক্ষণ যুক্ত করা হয়েছে। কর আইন প্রয়োগ ও কর আহরণ পরিবীক্ষণের বিধান রাখায় নীতি বিভাগকে ব্যবস্থাপনা বিভাগের কার্যক্রম তদারকির সুযোগ থেকে যায়। এক বিভাগের কার্যক্রম সমমর্যাদাসম্পন্ন অপর বিভাগ কর্তৃক পরিবীক্ষণের বিধান রাখা হলে তা আইনের দৃষ্টিতেও সাংঘর্ষিক বিবেচিত হয় বলেও মনে করে কাস্টমস ও ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশন। একই সঙ্গে সংগঠনটির সভাপতি ও মহাসচিব স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ জনসম্মুখে প্রকাশ করার দাবি জানানো হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, গোপনে সংস্কার প্রস্তাব হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, প্রাথমিকভাবে আমরা অর্থ উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেব। এতে কাজ না হলে পরবর্তী সময়ে আন্দোলনে যাব। এমনকি গণইস্তফার মতো কর্মসূচি আসতে পারে বলেও জানিয়েছেন একাধিক শুল্ক কর্মকর্তা। তবে ভয়ে কেউ ব্যক্তিগতভাবে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

কমিশনার পদমর্যাদার একাধিক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুধু ‘ক্যাডার যার, মন্ত্রণালয় তার’—এই স্ট্যাটাস দিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের রোষানলে পড়ে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন শুল্ক ক্যাডারের ২১তম ব্যাচের কর্মকর্তা কে এম মাহবুবুর রহমান। আরও কয়েকজনকে অবসরে পাঠানোর তালিকা তৈরি হয়েছে বলেও গুঞ্জন উঠেছে। সবমিলিয়ে এনবিআরে এক ধরনের আতঙ্কিত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এসব নিয়ে কথা বলায় আরও দুজন কর্মকর্তা চাপে রয়েছেন বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দুপুরের মধ্যে ঢাকায় বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস 

এলপি গ্যাসের নতুন দাম নির্ধারণ বিকেলে

মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিন : বাবুল

পরমাণু আলোচনা নিয়ে খামেনির উপদেষ্টার কড়া বার্তা

গাজায় ক্ষুধায় কাঁদছে মানুষ, মৃত্যু ৫৭

০৪ মে : টিভিতে আজকের খেলা

০৪ মে : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

দক্ষিণ লেবাননে একাধিক ইসরায়েলি ড্রোন হামলা

বখাটেদের ভয়ে দুই ছাত্রীর মাদ্রাসায় যাওয়া বন্ধ

পঞ্চগড়ে মাদকসহ মা-ছেলে গ্রেপ্তার

১০

ঢাকার যেসব এলাকায় আজ মার্কেট বন্ধ

১১

০৪ মে : আজকের নামাজের সময়সূচি

১২

পেকুয়ায় ধারের টাকা ফেরত চাওয়ায় ছুরিকাঘাতে কিশোর নিহত

১৩

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতা বহিষ্কার

১৪

রাজনৈতিক তৎপরতা ছাড়া শ্রমিকের ভাগ্যোন্নয়ন সম্ভব নয় : ফজলুল হক

১৫

জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া রাখাইনে করিডোর নয়: বিএসপি

১৬

স্বাস্থ্য পরামর্শ / বর্ষাকালীন অসুখ থেকে বাঁচতে বয়স্কদের এখনই সচেতন হতে হবে

১৭

মুক্তির পথে তারাগঞ্জের হাজারো মানুষ

১৮

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষ্যে বিজেআইএমের সিম্পোজিয়াম

১৯

‘ইঞ্জিনিয়ার তুহিন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার’

২০
X