ঈদের আগে-পরে যাত্রীবাহী যানবাহন এবং পশুবাহী ট্রাকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। অতীতের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে এবার দুটি মহাসড়ক ডাকাতপ্রবণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তা হলো সাভার, এলেঙ্গা হয়ে যমুনা সেতু সড়ক ও গাজীপুরের সালনা থেকে মাওনা সড়ক। এই দুই সড়কে মোবাইল টিম, পিকেট ডিউটি বাড়ানো, সাব-কন্ট্রোল রুম স্থাপনসহ নিরাপত্তা বাড়িয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। এই দুই সড়ক ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও আলাদা নজর রাখছে পুলিশ। হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশ, ট্রাফিক এবং গোয়েন্দাদের সঙ্গে তথ্যের সমন্বয় করা হচ্ছে। এরই মধ্যে মহাসড়কে ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত ১৪শ ডাকাতের তালিকা করা হয়েছে। তাদের নজরদারিতে রেখেছে সংশ্লিষ্ট জেলা ও থানা পুলিশ।
মহাসড়কে ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও যানজট—এই তিন বিষয় সামনে রেখে ঈদ পরিকল্পনা সাজিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। পশুবাহী গাড়িতে চাঁদাবাজি প্রতিরোধে কনভয় আকারে গাড়িগুলো চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া যানজটপ্রবণ ১২৫টি জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। ছয়টি মহাসড়কের পাশে ২৩০টি স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে এবার। যেগুলোর মধ্যে ৫৪টি হাট গুরুত্বপূর্ণ। এসব স্থানে যানজট এড়াতে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. শামসুল আলম (অ্যাডমিন ও মিডিয়া) কালবেলাকে বলেন, আমরা অ্যাকশন প্ল্যান অনুযায়ী কাজ শুরু করেছি। মাঠপর্যায়ের সদস্যদের পাশাপাশি সড়কে নেমে হাইওয়ে পুলিশের প্রায় সব অফিসার দায়িত্ব পালন করছেন। মহাসড়কে ডাকাতি, চাঁদাবাজি প্রতিরোধ করার পাশাপাশি যানজট এড়িয়ে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা সহজ করতে আমরা কাজ করছি।
মহাসড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ভটভটিসহ নিষিদ্ধ যান যেন চলাচল করতে না পারে, সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। সড়কে বেপরোয়া যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে থাকবে জায়গায় জায়গায় স্পিডগান।
হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সন্দেহভাজন যাত্রীবাহী গাড়ির যাত্রীদের ভিডিও ধারণ করা হচ্ছে। মহাসড়কে মোবাইল টিম, পিকেট বাড়ানো হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ জায়গা স্থাপন করা হয়েছে সাব-কন্ট্রোল রুম। গঠন করা হয়েছে কুইক রেসপন্স টিম। যারা জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত সাড়া দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করবে।
বিগত সময়ের মতো এবারও মহাসড়কের যাত্রা নিরাপদ করতে চালু রয়েছে ‘হ্যালো এইচপি’ অ্যাপ। এ ছাড়া সড়কে চলাচলকারীদের সেবা নিশ্চিত করার জন্য নতুনভাবে ডেভেলপ করা হয়েছে হাইওয়ে পুলিশের ওয়েবসাইট।
মহাসড়কে পশুবাহী ও যাত্রীবাহী যানে চাঁদাবাজি প্রতিরোধে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। নির্ধারিত পয়েন্ট থেকে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে সাত থেকে আটটি ট্রাক একসঙ্গে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের প্রস্তুতিতে এই কনভয় আকারে গাড়িগুলো চলাচল করার ব্যবস্থা রয়েছে।
মহাসড়কে যানজট হতে পারে এমন ১২৫টি জায়গা চিহ্নিত করেছে হাইওয়ে পুলিশ। ছয়টি মহাসড়কের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রামে ৪৫টি, ঢাকা-আরিচায় ৯টি, ঢাকা-সিলেটে ১৮টি, ঢাকা-উত্তরবঙ্গে ৩৭টি, ঢাকা-ময়মনসিংহে ১৪টি ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে দুটি এলাকা রয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের প্রধান এবং অতিরিক্ত আইজি মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা কালবেলাকে বলেন, সম্প্রতি ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে দুটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। দ্রুত ডাকাতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মালপত্রও উদ্ধার হয়েছে। এই ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, সেজন্য আমরা কার্যক্রম বাড়িয়েছি। সিনিয়র সব অফিসার রাস্তায় থেকে কাজ করেছেন। চালক ও যাত্রীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতেও কাজ করছি আমরা। মাইকিংয়ের পাশাপাশি লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।
সবার সর্বাত্মক চেষ্টায় এবারের ঈদযাত্রা নিরাপদ হবে বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি এবং এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চেয়েছেন।
মন্তব্য করুন