বশির হোসেন
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

পাল্টাপাল্টি দখলে অচল খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ন ভার্সিটি

রাজনৈতিক প্রভাব
ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

খুলনার প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে এখন অচলাবস্থা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে দখল-পাল্টা দখলের লড়াই। যে কারণে এখন সেখানে প্রশাসনিক ও শিক্ষার পরিবেশ চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের অনুমোদিত চেয়ারম্যান না হয়েও মিজানুর রহমান নামে একজন নিজেকে বোর্ডের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন। তার নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের একটি অংশকে ব্যবহার করে উপাচার্য অধ্যাপক সেখ মো. এনায়েতুল বাবরকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। একইভাবে রেজিস্ট্রারকে পদত্যাগ করাতে না পেরে নতুন একজন রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই।

অবস্থার অবনতি ঠেকাতে পদচ্যুত চেয়ারম্যান সিরাজুল হক চৌধুরী বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চিঠি দিয়েছেন। তিনি ব্যাংকগুলোতেও চিঠি দিয়েছেন, যেন কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা অযাচিতভাবে তুলতে না পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে এখনো অস্থিরতা বিরাজ করছে।

জানা গেছে, ২০১২ সালের ১৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টি অনুমোদন পায় এবং পরের বছর থেকেই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে ট্রাস্টি বোর্ডে সদস্য ছিলেন ১৮ জন। চেয়ারম্যান ছিলেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। পরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর খালেক আত্মগোপনে চলে যান। এরপর চেয়ারম্যান হন বিএনপি সমর্থিত সিরাজুল হক চৌধুরী। পরে ট্রাস্টি মিজানুর রহমান নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন।

সিরাজুল হক বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার পর বোর্ডে নিজের নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে থাকেন। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর তিনি মিজানুর রহমানকে ট্রাস্টি বোর্ডে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি তিনি আজিজুল হক ও সৈয়দ হাফিজুর রহমানকেও বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করেন। অথচ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হতে হলে যৌথ মূলধনি কোম্পানিতে নিবন্ধন দরকার। এই তিনজনের কারোরই কোনো নিবন্ধন ছিল না।

সিরাজুল হক জানান, বোর্ডে তখন সবাই ছিলেন আওয়ামী লীগের লোক, আমি ছিলাম একমাত্র বিএনপির। তাই মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনার পরামর্শে নতুন তিনজনকে বোর্ডে নিই। তবে যৌথ মূলধনি কোম্পানিতে তাদের নিবন্ধন করিনি।

এ বছরের ২১ মে মিজানুর রহমান ট্রাস্টি বোর্ডের সভা ডেকে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। হাফিজুর রহমানকে করা হয় সদস্য সচিব। এরপর থেকেই ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নিতে থাকেন মিজানুর রহমান। ১৯ জুন শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে মব তৈরি করে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সাহিদা খানমকে রাত ১১টা পর্যন্ত অফিসে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে সেনা সদস্যরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনার জিডি করা হয় ২৫ জুন সোনাডাঙ্গা থানায়। জিডিতে সাহিদা খানম উল্লেখ করেন, মিজানুর রহমান ও হাফিজুর রহমান নিজেদের চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব বলে দাবি করে বিভিন্ন সভা, বিজ্ঞাপন ও ভর্তি কার্যক্রমের নামে টাকা তছরুপ করছেন। শিক্ষার্থীদের দিয়ে তাকে অবরুদ্ধ করানো হয় এবং এ ঘটনার দুই দিন পর উপাচার্য অধ্যাপক সেখ মো. এনায়েতুল বাবরকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।

ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েকজন সদস্য বলেন, উপাচার্য, রেজিস্ট্রার এবং ট্রেজারার একসঙ্গে নিয়োগ পেয়েছেন। তাহলে ট্রেজারারকে বাদ না দিয়ে বাকি দুজনকে কেন সরানো হলো। তারা বলেন, যাকে খুশি সরিয়ে দিয়ে যাকে খুশি নিয়োগ দিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

অভিযোগ রয়েছে, খুলনা মহানগর বিএনপির এক শীর্ষ নেতার ইন্ধনে মিজানুর রহমান অন্য ট্রাস্টিদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজের পক্ষে টানার চেষ্টা করছেন। এর অংশ হিসেবে ট্রাস্টি সদস্য তৌহিদুল ইসলাম আজাদ, সৈয়দ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ ও পবিত্র কুমার সরকারকে আসামি করা হয়েছে বিএনপির একটি সমাবেশে হামলার মামলায়। অথচ ওই মামলায় অধিকাংশ আসামি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশ কর্মকর্তা।

মিজানুর রহমানের সঙ্গে বিরোধ নিয়ে সিরাজুল হক বলেন, এক কোটি টাকা অতিরিক্ত বিল নিয়ে আমাদের মধ্যে বিরোধ শুরু। ২১ মে যে সভা ডাকা হয়, সেখানে আমার সই জাল করা হয়েছিল এবং অধিকাংশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন না। মিজানুর রহমান কোনো বৈধ ট্রাস্টি নন, তিনি কীভাবে চেয়ারম্যান হন। রাজনৈতিক মদদে বিশ্ববিদ্যালয়টি দখল হচ্ছে। আমি অনেক দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোনো সুরাহা পাচ্ছি না।

অন্যদিকে মিজানুর রহমান বলেন, ট্রাস্টি বোর্ডের অধিকাংশ সদস্য ফ্যাসিস্টদের দোসর। তাদের অনুরোধেই আমি চেয়ারম্যান হয়েছি। শিগগির দোসরদের দুর্নীতি প্রকাশ করব। তিনি দাবি করেন, ইউজিসি আমাদের ট্রাস্টি হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে, তাই যৌথ মূলধনি কোম্পানির নিবন্ধনের দরকার নেই।

খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা বলেন, আমি মিজানকে চিনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিষয় নিয়ে কোনো পক্ষ আমার কাছে আসেনি। সেখানে কী হচ্ছে শুনেছি, তবে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন কালবেলাকে বলেন, আমরা ট্রাস্টি বোর্ডের উভয় পক্ষকে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে আসতে বলেছি। তারা যোগাযোগও করছে। যদি শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যে সমঝোতা না হয়, তাহলে আমরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার পরিকল্পিত চক্রান্ত : মির্জা ফখরুল

পাচারের সময় দুই কোটি টাকার সোনার বারসহ আটক তিন

খুলনা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কের নামে মিথ্যা অপপ্রচার, থানায় জিডি

গোলাম রুহানীসহ পুলিশের ৪ কর্মকর্তা বরখাস্ত

নারায়ণগঞ্জে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ উদ্বোধন সোমবার 

বড় শয়তান এখনো আমাদের কাঁধে নিঃশ্বাস ফেলছে : মাহফুজ আলম

১২ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৩ হাজার কোটি টাকা

৫ ঘণ্টা পর বনানীতে যান চলাচল শুরু

টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গাইবেন তারা

১০

‘কেন্দ্রের ভুলে’ অকৃতকার্য ৪৮ জনের সবাই পাস, অনেকে পেল জিপিএ ৫

১১

কাশ্মীরের স্বাধীনতা নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বার্তা

১২

বিএনপিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না : মির্জা ফখরুল

১৩

সমাজের বাস্তব চিত্র নিয়ে টেলিফিল্ম ‘আমারও গল্প আছে’

১৪

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের আহ্বান সাকিফ শামীমের / যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপে ব্যবসায়ী সমাজ উদ্বিগ্ন

১৫

অস্ত্র মামলায় সুব্রত বাইনের বিরুদ্ধে চার্জশিট 

১৬

স্থূলতার প্রভাব থেকে রক্ষা করতে পারে যে সবজি

১৭

ডেঙ্গুতে আরও এক মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪২০

১৮

পাকিস্তানেও ‘৫ আগস্ট’ সরকার পতনের পরিকল্পনা করছে পিটিআই?

১৯

মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা / গ্রেপ্তার আরও দুই আসামি ৪ দিনের রিমান্ডে

২০
X