এহসান আব্দুল্লাহ
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৮:২২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ব্যবহার বাড়ছে, বাড়ছে ঝুঁকিও তবু থমকে আছে নীতিমালা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
ব্যবহার বাড়ছে, বাড়ছে ঝুঁকিও তবু থমকে আছে নীতিমালা

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অনলাইন জগতে ব্যাপকভাবে বাড়ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার। রাজনৈতিক প্রচারণা, প্রোপাগান্ডা থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক প্রচারণাসহ কনটেন্ট ক্রিয়েশনেও বাড়ছে এআই নির্ভরতা। এমন পরিস্থিতিতে কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় এআই ব্যবহার করে কী করা যাবে, আর কী করা যাবে না—এর কোনো সীমা থাকছে না। ফলে এআইয়ের ব্যবহার নিয়ে বৃহত্তর পরিসরে বাড়ছে নানা ঝুঁকিও।

যদিও নতুন করে এআই নীতিমালা প্রণয়নে উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে শেষ পর্যন্ত নতুন নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু নীতিমালাই নয়, এ বিষয়ে আইন করা জরুরি।

সংশ্লিষ্টজন বলছেন, নতুনভাবে ন্যাশনাল এআই পলিসি বানাতে দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের জন্য ইউনেস্কো এআই রিডিনেস অ্যাসেসমেন্ট মেথডলজি রিপোর্ট তৈরি করছে।

২০২০ সালে প্রথমবারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন করে তৎকালীন সরকার। এরপর গত বছর প্রথমবারের মতো প্রকাশ করা হয় জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নীতিমালার খসড়া। সে বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ-সংক্রান্ত আইনের খসড়া প্রণয়নের কথাও ছিল। যদিও গণঅভ্যুত্থানের মুখে ফ্যাসিস্ট হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে তা থমকে যায়।

এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আইসিটি বিভাগের প্রকাশিত ‘ন্যাশনাল ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন স্ট্র্যাটেজি’তে এআই ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে এআই গভর্ন্যান্সে ইনক্লুসিভিটি, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের এআই নীতিমালার সমন্বয় করার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সেখানে সরকার, প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপমুক্ত থেকে ডাটা গভর্ন্যান্স নিশ্চিতে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে একটি স্বাধীন ডাটা এবং এআই কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার কথাও বলা হয়।

সরকারের ডিজিটাল রূপান্তর কৌশলপত্রে সাইবার নিরাপত্তা, এআই এবং ডাটা গভর্ন্যান্স কাঠামোকে শক্তিশালী করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান সরকারে প্রস্তাবিত সাইবার সুরক্ষা আইনের বেশ কয়েকটি সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে নতুন করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (এআই) সত্তা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জানা যায়, বর্তমানে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে এআই নীতিমালা। তারপর নতুন করে খসড়া চূড়ান্ত করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই নীতিমালা না থাকার কারণে আমাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। ফলে বহির্বিশ্বের তুলনায় আমরা কতটা পিছিয়ে আছি বা কতটা লক্ষ্য অর্জন করতে পারছি, তা বোঝা যাবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বি এম মাইনুল হোসাইন কালবেলাকে বলেন, আমাদের দেশে এআইয়ের নেগেটিভ দিকটা বেশ প্রমিনেন্ট হয়ে উঠছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বড় ইভেন্ট যেমন, নির্বাচন বা রেজাল্ট প্রসেসিং—এ রকম বিভিন্ন জায়গায় এআই ব্যবহার করে একটি শ্রেণি মিসইনফরমেশন ছড়ানোর চেষ্টা করে। এ সবকিছুর জন্য একটি পলিসি খুব জরুরি হয়ে উঠেছে। আরেকটা ব্যাপার আছে ইথিকাল এআই, এআইয়ের ব্যবহার নিয়ে একটি ফ্রেমওয়ার্ক থাকা উচিত, আমাদের এখনো সে জায়গাটাতে কাজ করা বাকি।

ঢাবির এ অধ্যাপক বলেন, বিভিন্ন দেশের এআই নিয়ে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন আছে। পলিসি যদি না থাকে, মানে আমাদের কোনো ডিরেকশন নেই। ফলে আমরা কোনো পথে যাব, কীভাবে যাব, তা জানা নেই। পলিসি থাকলে আমরা আমাদের প্রোগ্রেসটা ট্র্যাক করতে পারতাম।

তবে শুধু নীতিমালা করে কোনো লাভ হবে না বলেও মনে করেন অনেকে। তাদের মতে, শুধু নীতিমালা নয়, এআইয়ের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট আইন করা উচিত।

তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মাহিম মাশরুর কালবেলাকে বলেন, এ রকম অনেক নীতিমালা হয়েছে, এগুলোর আসলে কোনো ইফেক্ট নেই। আমাদের এআইয়ের অপব্যবহার ঠেকাতে সুনির্দিষ্ট আইন করা উচিত।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর ও সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা কালবেলাকে বলেন, এআইভিত্তিক অপরাধ বাংলাদেশে একটি নতুন ধরনের অপরাধ, এটা বাংলাদেশে এখনো কম। এরই মধ্যে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষকরা এটি নিয়ে সেমিনার করেছেন। এসব গবেষণার ভিত্তিতে সামনে জাতীয় নীতিমালা করা হবে।

তিনি আরও বলেন, এ নিয়ে সরকারের প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে উৎপাদিত তথ্য-উপাত্ত কতটুকু সত্য, কতটুকু ব্যবহার করতে পারব—এ প্রসঙ্গটা এরই মধ্যে এসে গেছে। এটিকে যথাযথভাবে সমাধান করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও এর গতি সীমিত, এ গতি বাড়াতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব কালবেলাকে বলেন, নতুন করে ন্যাশনাল এআই পলিসি করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের গত বছরের শুরুর দিকে করা পলিসি ছিল চ্যাট জিপিটি ভার্সন। আমরা দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টদের দায়িত্ব দিয়েছি—নতুনভাবে ন্যাশনাল এআই পলিসি বানাতে। ন্যাশনাল এআই এবং ক্লাউড পলিসি একসঙ্গে করা হবে। তার সঙ্গে পার্সোনাল ডাটা প্রটেকশন অর্ডিন্যান্স, ডাটা গভর্ন্যান্স এবং ইন্টারের অপারাবিলিটির সমন্বয় সাধন করা হবে।

তিনি জানান, ইউনেস্কো বর্তমানে এআই রিডিনেস অ্যাসেসমেন্ট মেথডোলজি রিপোর্ট তৈরি করছে বাংলাদেশের জন্য। তারা বিশ্বের ৬০টির বেশি দেশে এ কাজ করছে একযোগে। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ মতামত এলে সেগুলোকেও গুরুত্ব সহকারে আমলে নেওয়া হবে। পাশাপাশি পাবলিক কনসালটেশনও করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার পরিকল্পিত চক্রান্ত : মির্জা ফখরুল

পাচারের সময় দুই কোটি টাকার সোনার বারসহ আটক তিন

খুলনা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কের নামে মিথ্যা অপপ্রচার, থানায় জিডি

গোলাম রুহানীসহ পুলিশের ৪ কর্মকর্তা বরখাস্ত

নারায়ণগঞ্জে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ উদ্বোধন সোমবার 

বড় শয়তান এখনো আমাদের কাঁধে নিঃশ্বাস ফেলছে : মাহফুজ আলম

১২ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৩ হাজার কোটি টাকা

৫ ঘণ্টা পর বনানীতে যান চলাচল শুরু

টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গাইবেন তারা

১০

‘কেন্দ্রের ভুলে’ অকৃতকার্য ৪৮ জনের সবাই পাস, অনেকে পেল জিপিএ ৫

১১

কাশ্মীরের স্বাধীনতা নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বার্তা

১২

বিএনপিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না : মির্জা ফখরুল

১৩

সমাজের বাস্তব চিত্র নিয়ে টেলিফিল্ম ‘আমারও গল্প আছে’

১৪

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের আহ্বান সাকিফ শামীমের / যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপে ব্যবসায়ী সমাজ উদ্বিগ্ন

১৫

অস্ত্র মামলায় সুব্রত বাইনের বিরুদ্ধে চার্জশিট 

১৬

স্থূলতার প্রভাব থেকে রক্ষা করতে পারে যে সবজি

১৭

ডেঙ্গুতে আরও এক মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪২০

১৮

পাকিস্তানেও ‘৫ আগস্ট’ সরকার পতনের পরিকল্পনা করছে পিটিআই?

১৯

মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা / গ্রেপ্তার আরও দুই আসামি ৪ দিনের রিমান্ডে

২০
X