দেশব্যাপী চলা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই সিলেটের বন্দরবাজার এলাকায় পুলিশের গুলিতে মারা যান দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট ব্যুরো ও দৈনিক জালালাবাদ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আবু তাহের মো. তুরাব। ছেলেমেয়েদের মধ্যে সবার ছোট তুরাবকে হারিয়ে অনেকটা প্রাণহীন মা মমতাজ বেগম। ছেলের ছবি বুকে আঁকড়ে ধরে কেঁদে কেঁদে দিন কাটছে তার। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেও বার্ধক্য তাকে অনেকটাই জেঁকে ধরেছে। যে কারণে তিনি জীবদ্দশায় ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চান।
তুরাবের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌর শহরতলির ফতেহপুর গ্রামে। বাবা মরহুম আব্দুর রহিম ছিলেন শিক্ষক। বিয়ানীবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তুরাবের বাবা। বাবার পথ ধরেই সাংবাদিকতা পেশায় প্রবেশ তার।
গত ১ জুলাই ছিল শহীদ তুরাবের জন্মদিন। সেদিন তার বাসায় গিয়ে কথা হয় তার মা মমতাজ বেগমের সঙ্গে। কালবেলাকে তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আমার ছেলেসহ অনেক মানুষ মারা গেছে। সেসব ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের যেন দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার করা হয়। শেষ জীবনে একটাই চাওয়া, জীবদ্দশায় আমি যেন আমার ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারি।’
তুরাবের ভাই আবুল আহসান মো. আজরফ (জাবুর) বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মৃত্যুর ১১ মাস পার হলেও মাত্র দুজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকটা সন্দিহান ছিলাম। প্রথমে মামলাটির তদন্তভার পুলিশের কাছে ছিল। পরবর্তী সময়ে পিবিআই এবং বর্তমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রয়েছে। অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলাটি হস্তান্তরের পর থেকে আমরা ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ভাই পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। তুরাবের শরীরে ৯৮টি বুলেটের স্প্লিন্টার পাওয়া গেছে। প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ, অনতিবিলম্বে তুরাব হত্যা মামলার সঙ্গে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।’
তুরাবের স্ত্রী তানিয়া আক্তার যুক্তরাজ্য প্রবাসী। তিনি গত রমজানের আগে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য দেশে এসেছিলেন। আবুল আহসান মো. আজরফ বলেন, ‘তুরাবের স্ত্রীর সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই আমাদের পরিবারের কারও না কারও সঙ্গে কথা হয়। সে ভালো আছে। তবে বড় ভাই হিসেবে একজন স্বামীহারা বোনকে কী সান্ত্বনা দেব, বুঝে উঠতে পারি না।’
এদিকে ১৯ জুলাই আবু তাহের মো. তুরাবের প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী। এদিন সিলেটসহ তুরাবের নিজ উপজেলা বিয়ানীবাজারের সাংবাদিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সামাজিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক উদ্যোগে দোয়া মাহফিল ও কবর জিয়ারত করার কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানা গেছে।
মন্তব্য করুন