আগুনে পুড়ে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা হঠাৎ করেই জীবনকে ওলটপালট করে দিতে পারে। পোড়া স্থানের তীব্র যন্ত্রণা, তার সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসা ও পুনর্বাসন—সব মিলিয়ে এটি এক দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা। তবে এই ক্ষতি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব, যদি দ্রুত এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
অনেকের মধ্যে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে যে, পোড়া জায়গায় বরফ দিলে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়। কিন্তু চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একেবারেই ভুল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। বরফ ত্বকের রক্তনালিগুলোকে সংকুচিত করে, ফলে রক্তপ্রবাহ হ্রাস পায় এবং টিস্যুর ক্ষতি আরও বেড়ে যায়। বরফ ব্যথা কমালেও ত্বকের প্রকৃত ক্ষতির মাত্রা ঢেকে রাখে, যা সঠিক চিকিৎসায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি বরফ ত্বকে লেগে গেলে তা সরাতে গিয়ে নতুনভাবে চামড়া ছিঁড়ে যেতে পারে।
পোড়া স্থানে বরফ, মাখন, তেল বা টুথপেস্ট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এগুলো সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায় এবং ক্ষতস্থানে ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ফোসকা উঠলে তা ফাটাবেন না—কারণ ফোসকা প্রাকৃতিকভাবে ক্ষতকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
প্রথমেই আগুনের উৎস থেকে দূরে সরে আসতে হবে এবং শরীরে থাকা গহনা বা আঁটসাঁট পোশাক খুলে ফেলতে হবে, যাতে ফোলা বা রক্তপ্রবাহের বাধা সৃষ্টি না হয়। এরপর ক্ষতস্থান ঠান্ডা প্রবহমান পানিতে ১০ থেকে ২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখা উচিত। এটি ব্যথা ও তাপমাত্রা হ্রাসে সহায়ক। এরপর আক্রান্ত স্থান হালকা সাবান ও পানি দিয়ে পরিষ্কার করে একটি পরিষ্কার কাপড়ে শুকিয়ে নিতে হবে।
ক্ষত শুকিয়ে গেলে জীবাণুমুক্ত ও নন-স্টিক ব্যান্ডেজ দিয়ে আলতো করে ঢেকে দেওয়া উচিত। ব্যথা থাকলে প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন খাওয়া যেতে পারে। সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক মলম ব্যবহার করা যেতে পারে। ফোসকা ফেটে গেলে তা পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত ড্রেসিং দেওয়া উচিত এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আগুনে পোড়া একটি ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হলেও, তাৎক্ষণিক সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এর ক্ষতি অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব। তাই গুজব নয়, প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা-পরামর্শ মেনে চলাই সবচেয়ে নিরাপদ পথ।
মন্তব্য করুন